২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মোবাইল চোর

-

রাজীব, রাতুল ও কালাম মোবাইল চোর আর রাহুল হচ্ছে ওদের ওস্তাদ। ওস্তাদ রাহুল কৌশলটা বুঝিয়ে দিচ্ছে মোবাইল ছিনতাই বা চুরি কীভাবে করতে হবে। ওস্তাদ রাহুল সবাইকে জানিয়ে দিলো, যে বেশি মোবাইল ছিনতাই করে বা চুরি করে আনতে পারবে তার জন্য রয়েছে দামি পুরস্কার।
তারপর তারা মোবাইল ছিনতাই করার ধান্ধায় বের হলো।
রাজীব বাস স্টপেজের দিকে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে। একটি বাস, বাস স্টপেজের সামনে এসে থামল। কিছু যাত্রী নামছেন এবং কিছু যাত্রী উঠছেন। রাজীবের চোখে পড়ল এক ভদ্র মহিলা যাত্রী মোটামুটি দামি মোবাইল দিয়ে কথা বলতে বলতে বাসে উঠে জানালার কাছে বসল। বাসটির জানালা খোলা। রাজীব জানালার দিকে গেল খুব সতর্কভাবে। মহিলার হাত থেকে সে মোবাইলটি থাবা দিয়ে সাথে সাথে উধাও হয়ে গেল। সবাই অবাক! চোখের পলকে গেল কোথায়? রাজীব তো বাসের নিচে ঢুকে পড়েছে। রাজীবকে কেউ তেমন খেয়াল করেনি। কিছু সময় হইচই হলো। তারপর বাস ছেড়ে দেবে দেবে এমন সময় রাজীব বাসের তলে শুয়ে গাড়িটি মেরামত করার ভান করছে।
এক ভদ্রলোক হঠাৎ রাজীবকে দেখে বললেন, ‘এই ভাই, অ্যাকসিডেন্ট হবেন তো, তাড়াতাড়ি বাহির হন, গাড়ি তো ছেড়ে দেবে।’
রাজীব বলল, ‘আরে ভাই, গাড়িটার সমস্যা অইছিল, তাই ঠিক করে দিলাম। গাড়ি ঠিক অইছে কি না তা ড্রাইভার স্টার্ট দিয়ে চেক করছে।’
রাজীব গাড়ির নিচ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই গাড়িটিও ছেড়ে চলে গেল। গাড়ি চলে যাওয়া দেখে ভদ্রলোকটি রাজীবকে বললেন, ‘গাড়ি তো চলে গেল। আপনে দেখি গেলেন না?’
রাজীব বলল, ‘আরে ভাই! আমি গাড়ির মেকানিক, গাড়িটি ঠিক করে দিলাম। আমি যামু ক্যান, আমি যাত্রী নাকি?’
এ সময় ভদ্রলোকটির মোবাইলে কল এলে, মোবাইলটি পকেট থেকে বের করে রিসিভ করতে দেরি থাবা দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে রাজীবের দৌড় দিতে দেরি হলো না। ভদ্রলোকটি চোর চোর বলে চিৎকার দিলো। পাশের লোকজন দেখে অবাক! চোর তো এখানেই ছিল। রাজীব আরেক বাসে চড়ে কোনো এক স্থানে নেমে পড়ল। বাস থেকে নেমেই দেখতে পেল, এক লোকের হাতে দামি মোবাইল। রাজীব তো লোভ সামলাতে পারছে না।
রাজীব লোকটিকে বলল, ‘কয়টা বাজে ভাই?’ লোকটি বলল, ‘১০টা বাজে’।
তারপর রাজীব লোকটিকে বলল, ‘ভাই, ওই দোকানে আগুন লাগছে রে ভাই, দ্যাহেন! দ্যাহেন!’
লোকটি দোকানের দিকে তাকাতে দেরি মোবাইলটি থাবা দিয়ে দৌড় দিতে দেরি হলো না। এভাবে রাজীব মোবাইল চুরি করতে থাকে।
রাতুল গ্রামের দিকে একটি ঘরের ভেতর লোকশূন্য দেখে ঘরের ভেতর ঢুকে মোবাইল খুঁজছে। চার্জ দেয়া অবস্থায় একটি মোবাইল দেখতে পেল। মোবাইলটি ধরতে গেলে ঘরের লোক এসে পেছন থেকে রাতুলকে ধরেই চোর ধরছি রে, চোর ধরছি, মোবাইল চোর ধরছি বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় আরো লোকজন এসে রাতুল চোরকে খুব মারধর করে, মাথা ন্যাড়া করে দিলো।
কালাম পার্কের দিকে গিয়ে দেখতে পেল, এক ভদ্রলোক। সে একা একাই নিজের ছবি নিজেই তুলছে। কালাম লোকটিকে বলল, ‘একা একা ছবি তোলা যায় নাকি? মোবাইলটি দেন, আমি সুন্দর করে ছবি তুইলা দেই।’
ভদ্রলোকটির কয়েকটি ছবি তোলার পর, এক গাছের মধ্যে মৌচাক দেখে ভাবল, মৌচাকে ঢিল মারবে। মৌমাছি যখন ছুটে আসবে, তখন সবাই দৌড়ে পালাতে থাকবে। এই সুযোগে কালামও মোবাইলটি নিয়ে পালাবে। কালাম ভদ্রলোকটিকে একটু ঘুরে দাঁড়াতে বলল। এ সময় কালাম একটি ঢিল নিয়ে মৌচাকে ঢিল মেরে বলল, ‘মৌচাকে, কোন হালায় ঢিল মারল রে?’
লোকটি মৌচাকের দিকে তাকাতে দেরি, এখান থেকে কালামের মোবাইল নিয়ে উধাও হতে দেরি হলো না। কালাম অন্য এক পার্কে গিয়ে দেখতে পেল, আরেক ভদ্রলোক মোবাইল দিয়ে নিজেই নিজের ছবি তুলছে। কালাম লোকটিকে দেখে বলল, ‘আরে ভাই একা একা ভালো ছবি তোলা যায় না কি? মোবাইলটি আমার কাছে দেন। আমি সুন্দর কইরা ছবি তুইলা দেই।’ ভদ্রলোকটি বিশ্বাসে কালামের হাতে মোবাইলটি দিলো। লোকটির কয়েকটি ছবি তোলার পর কালামের সামনের দিকে সামান্য কিছু দূরের কয়েকজন লোক দেখে, ভদ্রলোকটিকে বলল, ‘ভাই, ওই লোকগুলো আপনারে ডাকছে, একটু দ্যাইখা আহেন। ভদ্রলোকটি লোকজনের সামনে গিয়ে বলল, ‘আপনারা কি আমাকে ডাকছেন?’
এক লোক বললেন, ‘আপনাকে আমরা ডাকব কেন?’
ভদ্রলোকটি, ‘ওই লোকটি বলল’ এতটুকু বলে পেছনের দিকে চেয়ে দেখে কালাম নেই। ভদ্রলোক অবাক হয়ে বলল, ‘হায় হায়! লোকটি গেল কই? আমার মোবাইল! আমার মোবাইল!’
রাত যখন ১০টা বাজে, তখন সবাই ওস্তাদ রাহুলের কাছে এসে, কে কয়টা মোবাইল এনেছে, তা জমা দিলো। রাজীব আটটি মোবাইল, রাতুলের হাতে কোনো মোবাইল নেই, মাথায় চুলও নেই।
রাতুল কোনো মোবাইল আনতে পারেনি। ওস্তাদ রাহুল রাতুলের প্রতি রাগ করল। কালাম পাঁচটি মোবাইল এনেছে। মোবাইলগুলো জমা দিলো। সব মোবাইল বন্ধ আছে, মোবাইল থেকে সিম খুলে ফেললো। রাতেই ওস্তাদ রাহুল মোবাইল বিক্রি করার জন্য মোবাইল ক্রেতাকে কল দিলো। ক্রেতা এসে, স্বল্প দামে মোবাইলগুলো কিনে নিলো। রাজীবকে স্পেশাল গিফট এবং টাকা দিলো। কালামকেও টাকা দিলো, তবে গিফট দিলো না। কারণ রাজীবের চেয়ে কালাম মোবাইল কম এনেছে। রাতুলকে কিছুই দিলো না। কেননা, রাতুল একটিও মোবাইল আনতে পারেনি। রাতুল ভীষণ মন খারাপ করে, রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। প্রতিজ্ঞা করল রাতুল কখনো আর মোবাইল চুরি করবে না।


আরো সংবাদ



premium cement