২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মোবাইল পাগলা

-


আমাদের এলাকার মফিজ ভাই মোবাইল ছাড়া কোনো কিছুই বুঝে না। হাতে সবসময়ই মোবাইল থাকেই, এমনকি টয়লেটে গেলেও। টয়লেট থেকে সহজে বের হতে চায় না। সেখানে বসে বসেও সে গেম খেলা শুরু করে দেয়। টয়েলেটে যাওয়ার যারা সিরিয়ালে থাকে, তারা অধৈর্য হয়ে গালাগালি করে টয়লেটে ঢিল ছুড়তে থাকে।
মফিজ কিন্তু মাঝে মধ্যে পানি খরচ না করেই টয়লেট থেকে বের হয়ে আসে। মোবাইলের কারণে খাবারের কথা ভুলে যায়, ভুলে যায় ঘুমের কথাও। রাতে মোবাইল টিপতে টিপতে সে কখন ঘুমিয়ে যায়, তা নিজেও জানে না।

একসময় হাত থেকে মোবাইল পড়ে, মোবাইলটি নষ্ট হয়ে যায়। মোবাইল নষ্ট হওয়ার কারণে বড় চিন্তায় পড়ে গেল মফিজ। হাতে তেমন টাকাও নেই। তারপর সে নতুন মোবাইল কেনার জন্য একটি ফন্দি বের করল। নিজেদের গরু চুরি করবে। সেই গরুটি বিক্রি করে একটি নতুন মোবাইল কিনবে। কেউ তো বিশ্বাস করবে না যে, মফিজ নিজেই নিজেদের গরুটি চুরি করেছে। মফিজ গভীর রাতে গরু চুরি করে এক জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে রেখে আসার পর মফিজ নিজে নিজেই চোর চোর বলে চিৎকার দিয়ে চোর ধরার অভিনয় করতে থাকে।
এলাকার মানুষের ঘুম ভেঙে যায় মফিজের চোর চোর চিৎকারে। এলাকার মানুষ ঘর থেকে বেরে হয়ে সবাই মিলে চোর খুঁজতে থাকে। মফিজের বাবা গরুটির জন্য কান্নাকাটি করছে। তাই মফিজ তার বাবাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, ‘আব্বা চিন্তা কইরো না, চোরে গরু নিছে তাতে কী অইছে! তোমার ঘরের স্বর্ণ তো নেয়নি।’ এ কথা বলতে দেরি, মফিজের বাবা ঘরে গিয়ে চাবিটা নিয়ে সিন্দুকের তালাটা খুলতে দেরি হলো না!এই ফাঁকে মফিজও জেনে গেল সিন্দুকের চাবিটা কোথায় রাখা হয়। পরবর্তীতে মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে এই স্বর্ণ চুরি করেই দামি একটি মোবাইল কিনবে। অবশেষে মফিজ গরুটা স্বল্পদামে বিক্রি করে একটি নতুন মোবাইল কিনে আনল।

মফিজের হাতে নতুন মোবাইল দেখে এলাকার তার বন্ধুরা বুঝতে পারে মফিজই গরুটা চুরি করেছে। মফিজ তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য তারা যা চায় তা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখে। মফিজের এক বন্ধু মফিজকে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য বুদ্ধি দিলো। এ জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ খুলতে হবে।
ভালো ভালো ভিডিও ছাড়তে হবে। ভিডিও করতে হলে ভালো ক্যামেরা দরকার। একটি ক্যামেরা কেনার জন্য তো টাকা দরকার। টাকা তো নেই। তাহলে ঘরের সেই স্বর্ণ চুরি করতে হবে। স্বর্ণ চুরি করার জন্য মফিজ গভীর রাতে সিন্দুকের কাছে গেল। চাবিটা নিয়ে সিন্দুকের তালা খুললো। সিন্দুকের ভিতর তাকাতে দেরি চিৎকার দিতে দেরি হলো না। তার চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙে যায়। মফিজের বাবা এসে বলে, ‘মফিজ, ভয়ের কেন কারণ নেই। এটি অরজিনাল সাপ না, প্লাস্টিকের সাপ। তুই তো মোবাইল পাগলা। গরুটা চুরি কইরা বেইচা মোবাইল কিনছস। স্বর্ণও যে চুরি করবি না তা গ্যারান্টি কী! তাই বুদ্ধি খাটাইয়া সিন্দুকের ভেতর প্লাস্টিকের সাপ রাইখা দিছি। যাতে চোর চুরি করতে আইলে তা দেইখা ভয়ে চিৎকার দেয়। চিৎকার দিলেই আমরা চোর ধরতে পারুম। আজ হাতেনাতে চোর ধরেছি। কী বুঝলি মফিজ মোবাইল পাগলা।’
মফিজ নিশ্চুপ হয়ে গেল। মুখে কোনো কথা নেই। গরু চুরি করেছে তাও ফাঁস হয়ে গেল। মফিজ একটু চিন্তা করে তার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে মোবাইল প্রয়োজন ছাড়া চালাবে না বলে পণ করল।

 


আরো সংবাদ



premium cement