ফেসবুক ছলনা
- আবিদ আলি হাসান
- ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
টানটান উত্তেজনা নিয়ে হাতে ফুলের একটি তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ। টিস্যু দিয়ে একটু পরপর ঘেমে যাওয়া মুখটি মুছে আর ডান হাতের আঙুল চিরনি করে সামনের চুলগুলো ক্ষণেক্ষণে পেছনে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। অবশ্য এটা এখনকার একটা ফ্যাশন।
আবার পকেট থেকে স্মার্ট ফোনটি বের করে মুখ অবয়ব দেখছে সব ঠিকঠাক আছে কি না। রাস্তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে সোজা পথের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ একজন আসার অপেক্ষা করছে।
বৃদ্ধ একটি মহিলা লাঠিতে ভর করে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। আসিফ দেখে না। মহিলাটি বলল ‘বাজান?’ আসিফ দেখে না। বারকয়েক ডাকার পর আসিফ তাকালো মহিলাটির দিকে। বৃদ্ধ মহিলাটি বললেন আমার নাতিডার অবরসন, বাপ মইরা গেসে, ছেরিডারে তার মায়েও ফালায়া রাইখা গেসে গা। এক নিঃশ্বাসে এ পর্যন্ত বলে। আসিফ শুনে কিন্তু অমনোযোগী হয়ে। সে টেনশনে আছে। যার জন্য অপেক্ষা করছে সে এখনো না আসায়। যে সময়ে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল তা পেরিয়ে এখন ঘণ্টার দুয়ারে পৌঁছেছে। ফোনটাও অফ। রাস্তায় কোনো অসুবিধে হলো কি না এই ভেবে আসিফ খুবই টেনশন করছে।
সাহায্য চাওয়া বৃদ্ধ মহিলাটি দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে এখনো। স্যুট কোর্ট পরা আসিফকে দেখে বিত্তশালী একজন মনে করে। আশা করছে সাহায্যের অংকটা বেশি। বড় লোকেরা দরিদ্রদের দেখেও না দেখার ভান করে এটা বৃদ্ধ মহিলাটি জানে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ‘উফ ডিস্টার্ব, কোথাও ভিক্ষুকদের জ্বালায় একটু শান্তিতে থাকা যায় না’ এসব বলে ঠিকই এক শ’ বা পঞ্চাশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দেয় সে জানে। তাই দাঁড়িয়ে আছে। ‘ক্ষমা করুন’ বলে আসিফ দাঁড়িয়ে থাকা জায়গাটি চেঞ্জ করেছে একটু। বৃদ্ধ মহিলাটি খানিক ‘বোবা’ সেজে আসিফের দিকে তাকিয়ে লাঠিতে ভর করে তার গা ঘেঁষে চলে গেল। বয়সের ভারে বৃদ্ধার মাজা নুয়ে আছে। নুইয়ে নুইয়ে হেঁটে যাচ্ছে। মিনিট এক হয়নি এতটুকু দূরে যাওয়ার পর ‘দাদী’ বলে ডাক দিলো আসিফ। পেছনে ঘাড় ঘুরানোর আগেই লম্বা কদমে আসিফ পাশে পৌঁছাল। পুরনো একটা দশ টাকার নোট বের করে বলল- এই নেন, এইটা রাখেন। ‘আল্লাহ তোমার বালা করুক বাবা’ বলে বৃদ্ধা হাঁটা শুরু করল। রাস্তার কালো পিচের দিকে পলকহীনভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে রইল আসিফ। মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। মারা গেছে আজ বছর পাঁচেক। তার মা প্রায়ই বলত- কোথাও বের হলে যেতে ফকির মিসকিনদের কিছু দান করতে হয়। এতে নাকি বিপদাপদ কাটে। পথেঘাটে কোনো অসুবিধায় পড়তে হয় না। বৃদ্ধারে দান করে এই কথাটা মনে হলো। মায়ের জন্য খারাপ লাগছে এখন তার।
রিকশার বেলের শব্দে সে স্মৃতির জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেশ ক’বার চেষ্টা করল ‘নীল পরী’র নাম্বারে কল ঢোকাতে। প্রতিবারেই ‘আপনার কাক্সিক্ষত নাম্বারে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না’ বলছে আসিফের ফোন। খুব রাগ লাগছে আসিফের। তাহলে কি নীলপরী...
না না এসব সে করতে পারে না, সে হাজী সা’বের মেয়ে। একা একা আসিফ ভাবছে আর অস্পষ্ট ভাবে নিজের সাথে কথা বলছে। নাহ, আর ভাবতে পারছে না আসিফ। হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে ‘চারটা ছাব্বিশ’ বাজে। কিছুক্ষণ পরই সন্ধা নামবে শহরের বুকে। কতক্ষণ চিন্তিত মনে রাস্তার পাশটা ধরে পায়চারী করল। আবারো ফোন দেয়ার চেষ্টা করলো। লাভ হলো না। ফেসবুকে ঢুকেই দেখে ‘নীলপরী’ ব্লক করে দিয়েছে তাকে। ইমোতে গেল। সেখানেও ব্লক।
অবশ্য মেসেঞ্জারে নীলপরী একটা মেসেজ দিয়ে তার পরই ব্লক করেছে। মেসেজটি হুবহু তুলে ধরা হলো- আসিফ! মাফ কইরা দিয়ো আমারে। আমার তিন বছরের একটা রিলেশন ছিল। কোনো এক কারণে রিলেশনটা শেষ করে দিয়েছিলাম। আমি ভীষণভাবে তখন ভেঙে পড়ি। একাকিত্ব আমাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিচ্ছিল। তখনই পরিচয় হয় তোমার সাথে। বেশ ভালো লাগল কথা বলে তোমার সাথে। ভালোবেসেছিলাম তোমাকে। একাকিত্বের কষ্টটা দূর হয়ে গেছিল।
ক্রমেই আসিফের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। পলক ফেলার সাথে সাথেই চোখ থেকে টুপ করে দুই ফোঁটা অশ্রু ফোনের স্কিনে পড়ল। জামার আস্তিন দ্বারা চোখ দুটো মুছল। মোবাইলে পড়ে যাওয়া অশ্রু ফোঁটাও মুছে নিলো।
অতঃপর বাকি মেসেজ পড়তে চোখ দিলো স্কিনে।- সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে এবং আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে ফিরেও এসেছে। তাই আমি আর তোমার সাথে রিলেশনটা কন্টিনিউ করতে পারছি না। ক্ষমা করে দিয়ো আসিফ। ভালো থেকো। ইচ্ছে হলে আমাদের জন্য দোয়া করো। ফুলের তোড়াটা চায়ের স্টলে ফেলে রাখা বেঞ্চের কিনার ঘেঁষে রাখা ছিল। চেয়ে দেখে একটা লাল কালারের কুকুর পা একটা তুলে তাতে মূত্রত্যাগ করছে। সন্ধ্যা এদিকে পুরো শহর ঘিরে ফেলছে। কুকুরকে সে কিচ্ছু বলে না। কতক্ষণ দেখল তাকিয়ে। কিছু একটা ভেবেছে। কী ভেবেছে? জানি না। এবার সে হাঁটা শুরু করল সোজা পথ ধরে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর সেই বৃদ্ধ মহিলাটিকে দেখতে পেলো নুইয়ে নুইয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটু লম্বা কদমে মহিলাটির কাছে গিয়ে ‘দাদী’ বলে ডাক দিলো। বৃদ্ধ মহিলাটি মাথাটা উপরের দিকে তুলে বলল- কিছু কইবেন? আসিফ না সূচক মাথা নাড়িয়ে মুখে বলল ‘না’ এরই ভেতর ‘একশো টাকার একটা নোট বের করে বৃদ্ধার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নেন, এইটা রাখেন। কাঁপা কাঁপা হাতে বৃদ্ধা টাকাটি নিলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সোজা পথ ধরলো আসিফ। তার দু’চোখের কোণায় দুটি অশ্রুফোঁটা জ্বলজ্বল করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা