জীবনের গল্প
- আবিদ আলী হাসান
- ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
একটি ব্যাগ নিয়ে এদিক থেকে ওদিক হাঁটছে নাহিদ। গায়ে রয়েছে তার সাদা-কালো মিশ্রিত একটি পাঞ্জাবি। ঢিলাঢালা সে জামা। পাঞ্জাবির বাঁ পকেটে অ্যান্ড্রয়েড ফোন রাখার ফলে ওজনে পাঞ্জাবিটা বাঁ দিকে ঝুঁকে আছে। মেহগনি গাছের মতো হ্যাংলা পাতলা লম্বা সে। হাঁটার ভেতর মফস্বলী একটি আচরণ দেখা যায় তার। স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে যে পোস্টার লাগানো থাকে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সে তা একে একে পড়ার চেষ্টা করছে। এটি দেখে ওইটি দেখে চোখে কৌতূহল, নতুনত্ব নিয়ে। দেখলে বোঝার বাকি থাকবে না যে, খাঁটি গ্রাম থেকে সে উঠে এসেছে।
‘আল্লøাহ তুমি দয়ার সাগর, রাহমানুর রাহিম’ রিংটোন বেজে উঠল নাহিদের ফোনে। তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে ফোনটি বের করে রিসিভ করল। নাহিদ- ‘হ্যালো? হ, আমি অহনো ভৈরব স্টেশনে। ইকটু ফরে ট্রেইন আইবো। আইচ্ছেয়া খাইতাম না কেউ কিছতা দিলে। রাখবাম নে মোবাইল ও টাকা সাবধানে। আইচ্ছা রাইখা দেও।’ বলে ফোনটা কান থেকে সরাল। পাঞ্জাবির একটা কোণা নিয়ে মোবাইল স্ক্রিনটা মুছে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। হেডফোন, চিরুনি, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি বিক্রেতা এসে জানতে চাইলো মাক্স লাগবে কি না। ‘কত দাম’ জিজ্ঞেস করল নাহিদ। বিক্রেতা বলল, পাঁস টেকা।
‘দিন একটা’ বলে পাজামার পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ১০ টাকার একটি নোট হাতে নিলো। বিক্রেতা ১০ টাকার নোট দেখে বললল- দুইডা দেলাই মাক্স? একটা ব্যাগে রাইখা দিবেন, সময়-অসময়ে কামে দিবো। যৌক্তিটা ভালো লাগায় নাহিদ মাক্স দু’টোই কিনল।
গরমের প্রচণ্ডতায় শরীর ভিজে গেছে পুরো। মাথার ঘাম ঝরনার মতো ঘাড় বেয়ে শরীরে প্রবেশ করছে। হাঁটতে আর ভালো লাগছে না নাহিদের। যাত্রী শামিয়ানায় একটু বসে ক্লান্তি দূর করতে হেঁটে আসছে অদূর থেকে। এই ভৈরব স্টেশনটা অনেক উন্নত নাহিদের বাড়ির পাশের সোহাগী স্টেশন থেকে। সোহাগী স্টেশন এর তুলনায় কিছুই না। সোহাগীতে নাই কোনো মাস্টার। আর না আছে স্টেশন ছাউনিতে কোনো ফ্যান। ভাবতে ভাবতে চলে আসছে বসার সেই স্থানে।
কাঁধের ব্যাগটা কোলে নিয়ে মুখে মাস্ক পরে বসে আছে নাহিদ। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চতুর্পাশ দেখছে সে। ছেঁড়া একটি গেঞ্জি, মুখভর্তি দাড়ি ও অর্ধ উলঙ্গ একটি লোক হঠাৎ দেখতে পেলো ঠিক তার ডান পাশে। বুঝতে পারল, ওই লোকটা পাগল। কিছু একটা খাচ্ছে সে। একটু মনোযোগী নজর দিয়ে দেখতে পেলো- কলা খাচ্ছে খুব আয়েশ করে। নাহিদেরও এখন কলা খেতে ইচ্ছে করছে। আশপাশে চেয়ে দেখল কলা কোথায় পাওয়া যায়। ওই তো! চায়ের দোকানটাতে কলা ঝুলে আছে। ২৫ টাকা দিয়ে এক হালি কলা কিনে নিয়ে এলো আগের জায়গায়ই। একটা কলা খেলো। আরেকটা খেতে ইচ্ছে করছে। খোসা থেকে কলাটা বের করে মুখে দিতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে হাফপ্যান্ট পরা খালি গায়ে এক টোকাই এসে কলা খেতে হাত বাড়াল। ছিলা কলাটা বাড়িয়ে দিলো খেতে। টোকাই মাথা নাড়িয়ে না করল। বলল, আঙুল ইশারা করে- আছিলা ওইখান থেকে একটা দেন।
কিছু একটা বলতে গিয়েই বলেনি নাহিদ। দিয়ে দিলো সেখান থেকে একটি কলা।
নাহ, আর ভাল্লাগছে না নাহিদের বসে থাকতে। উঠে পড়ল। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল স্টেশনের প্রান্তে। বাহ! এখানে তো বেশ বাতাস আছে। দাঁড়ানো যায়। দাঁড়িয়ে আছে এক পায়ে ভর দিয়ে আরেক পায়ে হালকা ভর দিয়ে। ধুলাবালু লেগে থাকার কারণে তার সামনের চুলগুলো লড়ছে না। বাতাসে চুল নড়লে নাহিদের ভালো লাগে খুব। পেছন দিক থেকে কে কাঁধে হাত রাখল! চমকে গিয়ে তাকিয়ে দেখে একদল হিজড়া পেছনে দাঁড়ানো। একটু ভয় পেয়ে গেল সে। কি চান আপনারা? প্রশ্ন করল নাহিদ। হাততালি দিয়ে শয়তানি হাসি হেসে হিজড়াদের ভেতর থেকে একটা হিজড়া বলল, তোরে চাই। সব হেসে ভেঙে পড়ছে। নাহিদ এবার ভয় পাচ্ছে খুব। ‘কী কী বলেন এ এইতা? আ আমাকে নি নিবাইন ম ম মানে!’ ভয় পেলে সে শুদ্ধ আর আঞ্চলিক এক করে ফেলে এবং কথা তুতলিয়ে বলে। হাততালি দিয়ে আবার আরেকটা হিজড়া বলল, এই টাকা দে। কাঁপা কাঁপা হাতে ১০ টাকা দিতে চাইলে ১০০ টাকা দাবি করে। অপারগ হয়ে ১০০ টাকার নোট একটা বের করতে না করতেই ছোবল মেরে নিয়ে গেল টাকাটা। অতঃপর হিজড়াগুলো দুষ্ট দুষ্ট কথা বলে হেসে ফেটে পড়ছে। কখনো কখনো হাত বাড়িয়ে খোঁচা মারার চেষ্টাও করছে। নাহিদ ভয়ে পাথরের মতো প্রায় দাঁড়িয়ে আছে। মুহূর্তেই চেয়ে দেখে যাওয়ার ট্রেন চলে আসছে। কালবিলম্ব না করে ব্যাগটা দু’হাতে ঝাপটে ধরে একটা দৌড় মারল। কোনো প্রকার পেছনে না তাকিয়ে সোজা ট্রেনের একটি বগিতে গিয়ে উঠে পড়ল। উঠার পরই ট্রেন হুইসল বাজিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়া শুরু করল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা