২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিচিত্র পৃথিবী

বিচিত্র পৃথিবী -

বিচিত্র পৃথিবীর রঙ। আলুথালু পরিবেশ। উষ্কুখুষ্কু হয়ে মানুষের আনাগোনা। হন্তদন্ত হয়ে এখানে সেখানে ছুটে চলা। পুরো পৃথিবীটাই যেন জীবিকার সমরাঙ্গন। সকাল সকাল। রোদ এখনো তেজি হয়ে ওঠেনি। হালকা হালকা রোদ জানালার গরাদ বেয়ে বেয়ে গায়ে লাগছে। উষ্ণ গরমে অস্থির লাগছে শরীর। কারেন্টও চলে গেছে দীর্ঘক্ষণ হলো। সারা দেশে চলছে লোডশেডিং নামক এক মহাগজব।
ঘুম ঘুম চোখ। হঠাৎ এক দুঃস্বপ্নে ভেঙে গেল ঘুম। সবাই বিভোর ঘুমে মত্ত। সকালের প্রকৃতি দেখতে গা ঝেড়ে উঠলাম বিছানা ছেড়ে। জানালার গ্রিল ধরে উৎসুক চোখে দাঁড়ালাম। দেখতে পেলাম কিছু কিছু শিক্ষার্থী পরিপাটি হয়ে শিক্ষাঙ্গনে ছুটছে। ছোট ছোট মাসুম শিশু। হাতে বই-খাতা। অসাধারণ ভালো লাগছিল তাদের। সহসা চোখ সরে গেল অন্য দিকে। ছোটে গেল সবার অলক্ষে পাশের বহুতল ভবনের উত্তুঙ্গে।
দেখতে পেলাম- দু’জন মানুষ রশিতে দুলছে। দূর থেকে ঝাঁপসা ঝাঁপসা দেখা যাচ্ছিল। হাতে বড় মাপের একটি ব্রাশ। কোমরে বাঁধা একটি প্লাস্টিকের বালতি।
রোদে পুড়ছে। ঝরঝর করে ঘাম ঝরছে শরীর বেয়ে। কখনো কখনো ঝুলন্ত রশিতে বাঁধা- বাঁশের টুকরো খণ্ডটিতে বসে জিরুচ্ছে। বিবেককে জিজ্ঞাসু স্বরে- বললাম, এত কষ্ট কেন করছে তারা?
বিবেক বলে আমায়, মহাশয়! কৃতজ্ঞ হোন, শুকরিয়া করুন মহান রবের। রব আপনাকে সুখে রেখেছেন। সসম্মানে সময় মতো পৌঁছে দিচ্ছেন আহার্য। অজান্তেই মুখ ভরে বেরিয়ে এলো আলহামদুলিল্লাহ।


এসব ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম। এতক্ষণে রোদ তীব্র হয়ে উঠেছে- গরমও প্রচণ্ড। শরীর বেয়ে টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে ঘাম। গেঞ্জি ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। পরক্ষণেই দেখতে পেলাম এক আজনবিকে। রাস্তার পাশ ঘেঁষে ঘেঁষে হাঁটছে। জীর্ণশীর্ণ শরীর তার। হাতে একটি বাঁশের লাঠি। এঁকেবেঁকে হাঁটছে। খু-উ-ব ধীর গতিতে। হয়তো মুখে মুখে কিছু জপছেও। কিন্তু উপর থেকে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। কী জপছে সে! আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু ব্যর্থ হলাম।
হাতে একটি মাঝারি ধরনের ক্যানেস্তারা। কিছুক্ষণ পর- এক ভদ্রলোককে দেখতে পেলাম দূর থেকে দু’টাকার একটি কয়েন নিক্ষেপ করল সেই ক্যানেস্তেরায়। তা দেখে বুঝে নিলাম হয়তো সে ভিক্ষুক। শারীরিক অক্ষমতা ও অভাবের তাড়নায় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে। তার অভাবজনিত হাল আমাকে খুব বেদানাহত করেছে। হঠাৎই মনটা দুঃখী হয়ে উঠল।


মানুষের দুঃখী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। অনতিদূরে আবারো দেখতে পেলাম- এক টোকাই ক্ষুধার তাড়নায় ডাস্টবিন থেকে পচা, দুর্গন্ধ কেক অবলীলায় মুখে দিয়ে দিলো। যেন সে কোনো মজাদায়ক খাবার খাচ্ছে। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। তবুও তৃপ্তিভরে ছুটে চলছে সম্মুখপানে।
আশপাশে কত কত মানুষের বিচরণ! কিন্তু সবাই নিজ নিজ ব্যস্ততায় মহাব্যস্ত। এসব নিয়েই ভাবছিলাম- পেছন থেকে ইউসুফ কামাল ভাই ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে ওঠলেন- ওঠ ওঠ সবাই ওঠ! ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। আমার ভাবনায়ও ছেদ ঘটে গেল। আজ থাক, অন্যদিন কথা হবে। ইনশাআল্লাহ।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল