অঙ্ক পরীক্ষায় কবিতা
- শেখ সজীব আহমেদ
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫
আহমদ নবম শ্রেণীর পড়ুয়া ছাত্র। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। ছাত্র ভালো, তবে মাঝে মাঝে পাগলামি করে।
রাত পোহালেই অঙ্ক পরীক্ষা দিতে যাবে। আহমদ বড় চিন্তায় আছে, কোনো অঙ্কই পারে না। পরীক্ষার হলে তো যেতেই হবে, পরীক্ষা তো দিতেই হবে। চিন্তায় ঘুম আসছে না।
তাই টেলিভিশন দেখা শুরু করল, দেখতে দেখতে রাত ১টা পর্যন্ত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল।
তারপর ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে, আবার টেলিভিশন দেখা শুরু করল। তার মা-বাবা কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে-
: তোমরা কোনো চিন্তা কইরো না তো, সব অঙ্কই পারি। তাই টেলিভিশন দ্যাইখা মনটা আরো পরিষ্কার করতাছি।
আহমদ বাড়ি থেকে রওনা দিলো। পরীক্ষার হলে এলো এবং আসনে বসল। পরীক্ষা শুরু হলো।
আহমদ তো বড় চিন্তিত, অন্তত এক ঘণ্টার আগে তো খাতা জমা নেবে না, এই এক ঘণ্টা কিভাবে অতিবাহিত করা যায়? চিন্তা করতে লাগল। সাদা পৃষ্ঠা তো জমা দেয়া যাবে না, কিছু তো লিখতে হবে।
প্রথম পৃষ্ঠা সাদা রেখে, পরের পৃষ্ঠা থেকে লিখল কবিতা। কবিতা লেখা শেষ হলো ত্রিশ মিনিটে, আরো ত্রিশ মিনিট বাকি। প্রতিটি পৃষ্ঠায় একই কবিতা লিখতে লাগল।
এক ঘণ্টা শেষ হলো। আহমদ খাতা জমা দিতে গেলে, স্যার বললেন-
: পরীক্ষা শেষ নাকি?
: হ স্যার, পরীক্ষা শেষ, সব কমন পড়ছে। সারা রাতই অঙ্ক করছি, পাঁচ দিস্তা খাতা শেষও করছি।
: তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টায় শেষ? তুমি নিয়মিত ক্লাস করোনি, হাতের লেখাও তেমন দ্রুত না!
: স্যার, আমি ক্লাস না করে পড়াবেট পড়ছি, আংগ বাড়ির নীল কমল স্যার কাছে।
এখানে আইতে যাইতে অনেক সময় চইলা যায়, ভাবলাম সামনে পরীক্ষা, এই মাসটা ক্লাস না কইরা বাড়িতেই পড়ি, কামে লাগব।
স্যার : পড়াবেট পড়ছ, প্রাইভেট পড়নি?
: না স্যার, প্রাইভেট পড়িনি,পড়াবেট পড়ছি।
স্যার: দেখি তাহলে, খাতাটা?
স্যার খাতা দেখছেন, আহমদ এই ফাঁকে দৌড়িয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে চলে যেতে লাগল।
সামনে এক স্যার দেখে বললেন-
: আহমদ, দৌড় পারিস ক্যান?
: টয়লেটে যামু, এই পইড়া গেল রে!
অঙ্ক পরীক্ষক স্যার আসছেন দেখে, আহমদ আরো জোরে দৌড় দিয়ে চলে যাচ্ছে। অঙ্ক পরীক্ষক স্যার সবাইকে আহমদের খাতাটা দেখাতে লাগলেন। কবিতার নাম ‘সময়ের মূল্য’ ছন্দহীন কবিতাটি স্যার পড়ে সবাইকে শোনালেন-
: ‘যে সময় চলিয়া যায় সে সময় আসে না তো ফিরে,
নদীর স্রোত যে তীর থেকে যায় আসে না তো সে তীরে।
সময়ের গতি দ্রুত অতি পরিতাপের প্রসঙ্গ হ’বে তাহার, না করিলে সময়ের প্রতি সদ্ব্যবহার।’
এভাবে ষোলো লাইনের মতো শুনাল।
পরের দিন যখন পরীক্ষার হলে এলো, তখন আহমদকে যে ছাত্র-ছাত্রী দেখে সেই কবি ভাই বলে ডাকতে থাকে। আহমদের মুখে কোনো কথা নেই, ভয় পাচ্ছে। হয়তো আজ স্যার অনেক মারবেন।
আহমদ ভয়ে ভয়ে পরীক্ষার হলে নিজ আসনে বসল।
স্যার আসতে দেরি, আহমদকে দাঁড় করিয়ে বলতে দেরি নেই।
: তুমি যে কবিতা লেখছ এর মানে কি জানো?
তুমি সময়কে সঠিক কাজে লাগাও? সময়ের সদ্ব্যবহার করো?
: না, করি না। করি না দ্যাখাই তো সময় নিয়া কবিতাটা লেখলাম। এখন থেকে আর সময় অপচয় করুম না, প্রতি মুহূর্তকে কামে লাগামু, এই কানে ধরলাম।
: তুমি কবিতাটা বলো দেখি।
: আমার মৌখস্ত নাই।
: তুমি লেখলা আর তোমার মৌখস্ত নাই?
: আমি লেখছি, আমি মৌখস্ত করি নাই তো।
: তুমিই লেখলা, আর তোমার মৌখস্ত থাকবে না এটা একটা কথা হলো?
: কবিরা নিজের কবিতা, নিজে মৌখস্ত করে না।
: ও তাই! অঙ্ক পরীক্ষায় তো দুইটা ডিম পাইবা।
: সমস্যা কী? ভাইজ্জা খাইয়া ফেলামু।
: এখন কিছু বলব না, যখন খাতা দেখাব না? তখনই বুঝতে পারবা ডিম ভাইজ্জা খাওয়ার মজাটা কী!
পরীক্ষার ঘণ্টা শুরু হলো, সবাই পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল, সবার পরীক্ষা শেষও হয়ে গেল,
আহমদের পরীক্ষা শেষ হচ্ছে না। শেষ ঘণ্টায় সে পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিলো। স্যার খাতা দেখে বললেন-
: আজকের পরীক্ষাটা তো ভালোই দিলা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা