মধ্যবিত্ত
- হৃদয় হাসান ফুয়াদ
- ২৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০৫
জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। অগোছালো জীর্ণশীর্ণ দেহটাই শুধু পড়ে আছে। ভাঙা কাঁচের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে আমার ভেতরটা। যন্ত্রণার ঘাত-প্রতিঘাতে আমি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। আমার জীবন কি কলঙ্কিত হতে যাচ্ছে? আমি কি হেরে যাচ্ছি জীবনের কাছে? কারণ, আমি তো আর টেনে নিতে পারছি না আমার মাথার উপরের ভারী বোঝাটা। মধ্যবিত্তের বোঝা বইতে বইতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি।
এসব যখন ভাবছি তখন ফারহান দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকল। আমি নড়েচড়ে উঠলাম। রেগেমেগে ওর মুখ লাল হয়ে গেছে। কপাল দিয়ে ঘাম বেয়ে বেয়ে পড়ছে। পাঞ্জাবিটা খুলে বলের মতো পেঁচিয়ে এক কোণে ফেলে রাখল। বিড়বিড় করে কাকে যেন যা তা গালি দিচ্ছে।
আমি বললাম, কিরে কী হয়েছে?
শান্ত হয়ে বস আগে।
পানি খাবি বলে বোতলটা এগিয়ে দিলাম। ঢকঢক করে অর্ধেক বোতল পানি খেয়ে ফেলল। বুঝতে পারছি পেটে ক্ষুধা।
এবার বলো, কী হয়েছে?
আর বলিস না, মাসের ১০ তারিখ পার হয়ে যাচ্ছে, এখনো টিউশনির টাকা দিচ্ছে না। এই কয়েকটা টাকার কথা কতদিন বলা যায়। আত্মসম্মান বলেও তো একটা কথা আছে। পাঁচ তারিখের পর থেকে ঘ্যান ঘ্যান করছি। তাদের কানেই বাজছে না। এ দিকে আমার পকেট একদম শূন্য। পকেটে চল্লিশ টাকা ছিল, ভাবলাম আসার সময় এক হালি ডিম কিনে আনব। দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলে প্রতি পিস পনের টাকা, হালি ষাট টাকা।
কেমন টা লাগে বল তো দেখি।
এই শহরে কি না খেয়ে মরব?
ডিমটাই সম্বল ছিল, শেষে কিনা এটাও....
এখন তো মনে হচ্ছে সকাল-বিকেল শুকনো মরিচ গিলে খেতে হবে।
তারও তো উপায় নেই। ১০ টাকায় গুনে গুনে দশটা মরিচ হাতে ধরিয়ে দেয়।
ওর কথা শুনে আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ার থেকে ওঠে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। আমি নিজেই তো এসবের ভুক্তভোগী। ওকে কী সান্ত¡না দেবো?
আমি কিছুকাল চুপ হয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে মাথা নিচু করে আত্মমগ্ন হয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণের জন্য ফারহান ও আমার ধ্যানে শরিক হলো। ওর চোখ দুটো টলমল করছে। প্রচণ্ড রাগের মাঝে যাদের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে তাদের যন্ত্রণা বোঝার সাধ্য আমার আপনার নেই।
এবার এ শহরের চরিত্র ওকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। ও যে বোঝে না বিষয়টা এমন না। এতদিনে ও এ শহরের রক্ত মাংস সব চিনে ফেলেছে। ঢাকার জনকোলাহপূর্ণ রাজপথ, হাজারো বাহনের জটলা, জ্যামের দীর্ঘ লাইন, দূষিত বায়ুর গন্ধ, ফুটপাথে শিশুদের আহাজারি, বস্ত্রহীনদের আর্তনাদ, এসবের সাথে ফারহান এখন বেশ পরিচিত। ফারহান এও জানে, এখানে তিরস্কার করার কেউ নেই, মুখ শুকিয়ে থাকলে কেউ ফিরে তাকাবে না, মুখ ভারী হলেও কেউ লক্ষ করবে না। এখানে নিজের চোখে নিজেকে দেখতে হয়।
এখানে হাত পাতলে ভিক্ষাও জোটে, করুণারও স্থান আছে। আশ্রয় মেলে, তবে সেটা নিজের চেষ্টায়; যেচে এসে কেউ তোমাকে দয়া দেখাবে না। আদর করে বরণ করে ঘরে তুলে নেবে না। খাবারের চেষ্টাটা যে নিজেকে করতে হয়, থাকার জায়গাটুকু যে নিজেকে খুঁজে নিতে হয় তা এতদিনে ফারহান ভালো করেই বুঝে গেছে। তবুও যে ছেলেটা মিছে মিছে কেন কষ্ট পাচ্ছে!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা