২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আজিব ঘড়ি

আজিব ঘড়ি -

আমার প্রিয়ার হাতের ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ঘোরে না। হয়তো ঘড়ির ব্যাটারির সমস্যা।
তাই প্রিয়া আমাকে ডেকে বাজারে গিয়ে ঘড়ির মেকানিক কৃষ্ণদার দোকান থেকে ঘড়িটা ঠিক করে আনতে বলল।
তৎক্ষণাৎ আমি রিকশায় চড়ে বাজারে চলে এলাম। দোকানের সামনে এসে দেখি, দোকানটি এখনো বন্ধ আছে। অপেক্ষা করতে লাগলাম
প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেল।
হয়তো ঘড়ির মেকানিক কৃষ্ণদা আজ আসবে না। বাজারে এই একটিই ঘড়ির দোকান। কৃষ্ণদা আসছে না বলে, আমার মনটি খুব খারাপ। এখন বাড়ির দিকে চলে আসব বলে ভাবলাম। ঠিক এ সময় কৃষ্ণদা হাজির।
তাকে দেখে আমার মুখে হাসি চলে এলো। দোকানের দরজা খুলেই সে আগরবাতি জ্বালিয়ে, আর কী যেন মনে মনে মন্ত্র পড়ে চার দিকে জল ছিটিয়ে দিলো। শেষে তার কাছে ঘড়িটা দিলাম। ঘড়িটা খুলে তার চারপাশ ওয়াশ করল। ঘড়ির কাঁটা এখন ঘুরছে। কৃষ্ণদা কোনো টাকা নিলো না।
আমি খুশি মনে বাড়িতে আসার অর্ধেক পথে ঘড়িটার দিকে চেয়ে দেখলাম ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না। ফের কৃষ্ণদার কাছে চলে এলাম। ব্যাটারি পাল্টাতে হবে। তখন তাকে একটু দামি ব্যাটারি লাগাতে বললাম। ৪০ টাকার দামি ব্যাটারি লাগিয়ে দিলেন। তারার ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে তো ঘুরছেই।
বাড়িতে এসে পড়লাম। এখন প্রিয়াকে দিতে যাব, এ সময় দেখি ঘড়ির কাঁটা আবার বন্ধ হয়ে গেছে।
তারপর, কোনো গাড়ি না পেয়ে বাজারে দৌড়ে চলে এলাম। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখি এখন আবার ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে।
কৃষ্ণদাকে ঘড়ির ঘটনাটি বললাম। আরো ভালোভাবে ঘড়িটা ওয়াশ করে দিলেন।
ঘড়িটা দেখতে দেখতে আমি বাড়িতে চলে এলাম। এখন প্রিয়ার হাতে দেবো না, আরো দু-তিন ঘণ্টা পর দেবো। ভাবছি যদি আবার ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়!
প্রায় তিন ঘণ্টা পর প্রিয়ার কাছে গেলাম।
সে জিজ্ঞেস করল,‘কত টাকা খরচ হয়েছে।’
আমি ৪০ টাকা না বলে ২০ টাকা বললাম। প্রিয়া বলে কথা। আমি পারলে তো পৃথিবীতে যত ঘড়ি আছে সব ঘড়িই কিনে দিই তাকে। সে তো আমার কাছ থেকে কিছুই নেবে না। প্রিয়া আমাকে ২০ টাকা দিয়ে চলে গেল। এর এক ঘণ্টা পর প্রিয়া আমাকে ডেকে বলল, ‘কীরে! ঘড়ির কাঁটা তো ঘুরছে না। কী ঠিক করে আনছস? যা, ভালোভাবে ঠিক করে নিয়ে আয়।’
আমি ঘড়িটা নিয়ে আবার বাজারে চলে এলাম। তখন রাত ৯টা বাজে।
মনে মনে ভাবলাম হয়তো দোকান বন্ধ করে ফেলছে। দোকানের সামনে গিয়ে দেখি, দোকান বন্ধ করে এখনই চলে যাবে কৃষ্ণদা। তাকে রিকোয়েস্ট করে আরো ভালোভাবে ঘড়িটা মেরামত করতে বললাম।
কৃষ্ণদা বললেন, ‘একটি নতুন ঘড়ি কিনে নিয়ে যাও।’ আমি বললাম, ‘না, এই ঘড়িটাই ঠিক চাই। তবে একই ঘড়ি থাকলে কিনে নিয়ে যেতাম।’
এই ব্যাটারিও ঠিক করে দিলেন।
আমি বাড়িতে চলে এলাম। বাড়িতে এসে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে রইলাম। রাত পোহালেই প্রিয়াকে ঘড়িটা দিয়ে দেবো।
আমি সারারাত ঘুমাইনি, শুধু ঘড়ির কাঁটা দেখেছি বন্ধ হয় কি না। সকালেই প্রিয়ার কাছে দিতে যাব। এমন সময় আবারো একই সমস্যা। মানে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না!


আরো সংবাদ



premium cement