সৃষ্টিকর্তা যা দিয়েছেন এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছুতে হয় না
- জুয়াইরিয়া জাহরা হক
- ২৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০
যখন দেশে ছিলাম বিকেলে হাঁটতে চাইতাম। কখনো ছোট বোনগুলোকে নিতাম, সময় পেলে মম বা নওরিনও চলে আসত। মিরপুর হেঁটে বেড়িয়েছি কয়েক শ’ বার। চূড়ান্ত ভিড়ে মানুষের পর মানুষ ঠেলে হাঁটতে হাঁটতে ২০ টাকার বাদাম মাখা অথবা টক মিষ্টি আমসত্ত্ব চিবুতাম আমরা। দুনিয়ার সব আলাপ করতাম। কোনো চায়ের দোকানের কাঠের টেবিলের নিচে হয়তো এক হালি কুকুরছানা চিচি করছে। পিটিপিটি চোখগুলো দেখে তখনই পাগল হয়ে গেছি! আবার কখনো কুকুর দেখে ঢিল ছোড়া দুষ্টু ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে অমন কাজ করতে নিষেধ করেছি। হাতে পয়সা নেই তাতে কি, মিরপুর ২ থেকে ১০ অবধি কাপড়ের যত শোরুম সব ঘুরে বেড়িয়েছি আর হাপিত্যেশ করেছি!
এখানেও আমরা সুযোগ পেলে হাঁটি। তা হোক ঝগড়া-পরবর্তী পরিবেশ ঠাণ্ডা করা উপলক্ষে অথবা ব্যস্ত সপ্তাহ ফুরালে একটু রিফ্রেশমেন্টের উদ্দেশ্যে। আসলে এখানে প্রায় সবাই হাঁটে। শীতের সময় কম হলেও গ্রীষ্মে প্রচুর মানুষকে রাস্তায় দেখা যায়। রিকশার বিলাসিতা যেহেতু এখানে নেই তাই খুব দূর না হলে- সময়ের টানাটানি না হলে সবাই নিজের পায়ের যানে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পছন্দ করে। যদিও ইলেকট্রিক বাইকের খুব কদর দেখছি আজকাল। ফুটপাথ একটু বেশিই চওড়া আর পরিবেশ যারপরনাই সুন্দর। তাই অসুবিধা হয় না। কিন্তু একটু বেশি পরিশ্রম হয় যেহেতু পাহাড়ের উপরে এই শহর। রাস্তাঘাট-স্কুল-হাসপাতাল কী নেই! কিন্তু, কিছু হয়তো নিচুতে আর কিছু উঁচুতে। আর কিছুক্ষণ পরপর কিং সাইজের পার্ক। ছোট ওপেন স্পেসও আছে। সেখানে হৈ-হুল্লোড় করে শিশুরা খেলে। চেয়ারগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় নানু-দাদুরা উল বুনছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- তারা এদিক ওদিক তাকায়, পাশের জনের সাথে তুমুল আড্ডা দেয় কিন্তু ঠিকই হাতে হাতে মুখস্থ উল বুনে যাচ্ছে!
আমাদের বাসা থেকে গাজিয়ান্তেপ ক্যাসেল খুব কাছে। হেটে গেলে ১০ মিনিট। আমরা প্রায় যাই ওদিক। টিকিট কেটে ভেতরে না ঢুকলেও বাইরে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। চোখ জুড়ানো বেশ কয়টি মসজিদ আছে। বের হলেই আমরা একেক মসজিদে ওয়াক্ত মতো নামাজ পড়ি।
এলাকাটি ট্যুরিস্ট স্পট আর এখন গরমের সময়- দুইয়ে মিলে অনেক মানুষ থাকে এখন। বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন দূরের শহর থেকে ঘুরতে আসে। আমরা শেষ যেদিন গিয়েছিলাম দেখলাম এক বাস ভরা ট্যুরিস্ট ইজমির থেকে আন্তেপ ঘুরতে এসেছে। আয়োজন করে বাকলাভা খাচ্ছে। ও আচ্ছা, আন্তেপে সবচেয়ে মজার ও ভালো মানের বাকলাভা বানানো হয়। ওদের আগ্রহ নিয়ে খাওয়া দেখে নিজেরও খেতে ইচ্ছা করছিল। তবুও ইচ্ছাকে লাগাম দিলাম। কী বলব, এখানে এসে আমার এক খারাপ খাসলত হয়ে গেছে। বাসা থেকে বের হলেই কিছু কিনতে হবেই হবে! কিছু না কিনলে কেমন যেন আজব ধরনের একটি গিলটি ফিলিং হয়! সে দিন কিনলাম ক্যাসেলের ছবিওয়ালা একটি ফ্রিজ ম্যাগনেট। আরেকদিন কিনলাম হাতে বোনা এক জোড়া গোলাপি মোজা! এই মোজা কে পায়ে দেবে আল্লাহ মালুম! বেহুদা এসব কিনে স্যুটকেসে গুঁজে রাখি। যাই হোক। তুর্কিরা ট্যুরিস্টদের খুব সমাদর করে খেয়াল করেছি। ক্যাসেলের আশপাশের পুরো এলাকায় বাজার বসে। ঘরে বানানো ফ্রেশ পনির, টকদই, সিরকায় ডোবানো হরেক রকম জয়তুন আর মরিচসহ নানা রকমের জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। তামা আর সিরামিকের পাতিল-বাটি-চিনিদানি এসবের দোকানও আছে ভূরিভূরি। এই বাজারের বয়স কয়েক শ’ বছর। বলা যায়, এ বাজারটিও একটি ট্যুরিস্ট স্পট। আমরা দু’জন হাঁটি আর প্লান করি। হাতে আঁকা তুর্কি কাপসেট কিনব- এক সেট সুন্দর দু’তলা চায়ের কেটলি কিনব। সুযোগ পেলে তাকে কিরা কাটিয়ে নেই যে, আমাকে একটি কাঠের গয়নার বাক্স কিনে দিতে হবে! যদিও জানা আছে গলা কেটে হাতে ধরিয়ে দেয়া দামের কাপসেট আমার শোকেসে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তারপর হয়তো সুন্দর কিছু ছবি তুলি। সন্ধ্যা কাছাকাছি এলে বাসায় চলে আসি। সত্যি বলতে, জানি না ইহজিন্দেগিতে আমার সংসারে এক সেট তুর্কি ঝাড়বাতি আসবে কি না। বলতে পারি না আমার আদরের অল্পস্বল্প গয়নাগুলো কাঠের বাক্সে বাসা বাঁধতে পারবে কি না। শখের রঙিন ধোঁয়া কিছু দিনেই উড়ে যাবে! তবে চোখ দুটো দিয়ে যা দেখার সৌভাগ্য সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হয় না!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা