তিনিও একজন বাবা
- মনিরুল ইসলাম
- ১৭ জুলাই ২০২২, ০১:৪৬
কড়া রোদ চার দিকে। উষ্ণ বাতাসের সাথে ধূলি-বালির এক সাথে হুটোপুটি। ঢাকা শহরে আজ যেন ধূলির বর্ষণ শুরু হয়েছে। আবছা করে চাদরের মতো চার দিক ঢেকে আছে। আমাদের রিকশা খুট করে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়ল।
কী কাকা!
রিকশা থামিয়ে দিলেন যে!
সামনে যাবেন না?
না, মা! তুমি বরং নেমে একটু হেঁটে যাও। দেখো না! সামনে কেমন জ্যাম লেগে আছে। ওই তো তোমার স্কুল দেখা যায়। লোকটি হাত ইশারা করে আমাকে দেখাল। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল।
আমার কাছে মনে হলো লোকটির ‘মা’ সম্বোধনের মাঝে আলাদা একটা মায়া মায়া ভাব আছে। তাই কোনো কথা না বলে চট করে নেমে পড়লাম।
সামনে প্রচুর ভিড়-ভাট্টা। তিল ধারণের জায়গা নেই। মানুষজন হুড়োহুড়ি করে পা ফেলছে। আমি রাস্তা পার হয়ে ছোট্ট একটা জটলার মধ্যে পড়ে গেলাম। হাট-বাজারে সাপুড়ে সার্কাস দেখানোর মতো ছোট জটলা। জটলার মাঝখানে সাদা শার্টের সাথে ম্যাচ করা কালো প্যান্টের একজন ছেলে। চুলগুলো সামনের দিকে পাট করে সাজানো। হাতে চকচকে নতুন একটি ঘড়ি। গা থেকে দামি সেন্টের গন্ধ আসছে। দেখে মনে হয় কোনো বনেদি ঘরের ভদ্র স্বভাবের ছেলে। কিন্তু তার মুখের ভাষা এত কুৎসিত-কদাকার, বখাটে ছেলে বললে ভুল হবে না।
ছেলেটি মুরুব্বি গোছের রিকশাচালককে বলল, নে ধর! দশ টাকা রাখ!
এত কম দিচ্ছেন কেন স্যার! এখানের ভাড়া বিশ টাকা। অনেক দূর থেকে আপনাকে নিয়ে আসছি। আর কয়েকটি টাকা বাড়িয়ে দেন স্যার! ঈদ মৌসুম। বাড়িতে বউবাচ্চা আছে। গরিবের পেট।
আমি দেখলাম বৃদ্ধ লোকটি কথা শেষ করে ঘেমে নেয়ে উঠেছেন। রোদে পুড়ে যাওয়া শরীর ঘামে চকচক করছে। তার মুখে সাদা একমুষ্টি চাপ দাড়ি। মাথায় ফুলতোলা কিস্তি টুপি একটা। দেখেই বোঝা যায় তিনি নামাজ পড়েন। পরহেজগার ও সাদাসিধা মানুষ।
ছেলেটি হাতে তুড়ি দিয়ে বলল, আমি কোনো কথা শুনব না। দশ টাকা রাখবি? নয়তো তোকে টাকাই দেবো না।
দশ টাকা কেমনে দেন স্যার? এখানের ভাড়া বিশ টাকা। পনেরো বছর ধরে এ রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছি। গরিবের হক মাইরা খাইয়েন না স্যার! শিশুদের মতো চেঁচিয়ে বৃদ্ধ লোকটি জোড়হাতে বলল।
ছেলেটি কিছুই বলল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলন্ত একটি বাসে উঠে পড়ল। তাকে আর কোথাও দেখা গেল না।
আমি শুধু এই বৃদ্ধ বাবাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি মাথায় হাত রেখে রাস্তার মাঝে বসে পড়লেন। আমার কাছে মনে হলো চিৎকার করে এই শহরকে জানিয়ে দেই, পৃথিবীর বাবাদের কষ্ট দিতে নেই। বাবাদের কষ্টে মানুষের মন কাঁদে, প্রাণ কাঁদে। কারণ বাবাদের ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। আর তিনিও একজন মানুষের বাবা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা