২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অয়োময়

-

এক সময়ে অধিক সম্পত্তির মালিক ছিলেন আজিজুর রহমান। এখন আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। সারা বছর যে ভাইদের পড়ালেখার খরচ আর সুখশান্তির পেছনে সময় ব্যয় করেছেন, সে ভাইয়েরা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত। বড় ভাইয়ের কোনো খোঁজখবর রাখে না বলতে গেলে। এই নিয়ে আজিজুর রহমানের মনে দুঃখ অনেক। সেই দুঃখের কেবল ভাগীদার পলাশ। আজিজুর রহমানের একমাত্র ছেলে।
সঠিক বয়সে বিয়ে করলেও দাম্পত্য জীবনের ষোলো বছর পর সন্তানের মুখ দেখেন আজিজুর রহমান। এক পাখি ডাকা ভোরে পলাশের জন্ম। বাবা হতে পেরে আজিজুর রহমান সেদিন অঘোরে কেঁদেছেন সুখের কান্না।
২.
পলাশ এখন অনার্সে পড়ে। অভাব অনটনের দৃশ্য দেখে দেখে বড় হলেও পলাশ কখনো বাবার প্রাচুর্যের জীবন দেখেনি। সব সময়ে শুনে এসেছে বাবা তার চাচাদের জীবন যাপনে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সেই চাচারা আজ এতই ব্যস্ত যে বাবার দিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বড় হতে হতে পলাশ দেখেছে তার চার পাশের কঠিন পৃথিবীকে। সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে পলাশ বরাবরই উদ্বিগ্ন। সকাল সন্ধ্যা টিউশনিতে খুঁজে নিয়েছে আয় রোজগারের পথ। মাস শেষে ভালোই টাকা আসে। সে টাকায় অভাব খানিকটা দূর হয় বটে, কিন্তু পরিপূর্ণ সচ্ছলতা আসে না।
৩.
বার্ধক্যের কারণে রোগ শোক পেয়ে বসে আজিজুর রহমানকে। ভীষণ শ্বাসকষ্ট। টানা এক বছর যাবত ইনহেলার ব্যবহার করছেন। পলাশ টিউশনির টাকায় মাস শেষে ইনহেলার কিনে এনে বাবার হাতে তুলে দিলে আজিজুর রহমান শব্দ করে কেঁদে ফেলেন আর ছেলের জন্য দোয়া করেন। পলাশের আর যাই ভুল হোক, বাবার জন্য ইনহেলার কিনতে ভুল হয় না।
রাতে পলাশের ফোনে ফারুকের কল আসে। ফারুক পলাশের বন্ধু। কল রিসিভ করে পলাশ। ফারুক ওপার থেকে পলাশের কাছে হাজারখানেক টাকা ধার চায়। কিন্তু পলাশ আশার বাণী শোনাতে পারে না। আফসোসের সুরে বলে, ‘মাফ করিস ভাই। হাতে কেবল ৮০০ টাকাই আছে। বাজারের আনোয়ার ক্লথ স্টোরে একটি নীল শার্ট পছন্দ হয়েছে। ইচ্ছে থাকার পরও কিনতে পারছি না। আর চার দিন পর বাবার জন্য ইনহেলার কিনতে হবে। নীল শার্টের চেয়ে বাবার জন্য ইনহেলার কেনাটাই জরুরি। সামনের মাসে ধার দিতে পারব। কোনো সমস্যা হবে!’ ফারুক কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে।
পরদিন বিকেল বেলায় আজিজুর রহমান পলাশের কাছে এসে নত কণ্ঠে বলেন, ‘তোর কাছে কিছু টাকা হবে! দরকার ছিল।’ পলাশ টুঁ শব্দ না করে পকেট থেকে ৮০০ টাকার সব বের করে বাবার হাতে দিয়ে দেয়। বাবার হঠাৎ টাকার কেন দরকার, জানতেও চায় না।
৪.
সন্ধ্যায় আজিজুর রহমান পলাশের হাতে একটি শপিং ব্যাগ তুলে দেন। ব্যাগের ভেতরে একটি নীল শার্ট দেখে পলাশ অবাক হয়। এই শার্টটিই তো সে আনোয়ার ক্লথ স্টোরে পছন্দ করেছে।
পলাশ বাবার কাছে এই শার্টের রহস্য জানতে চায়। আজিজুর রহমান হেসে বলেন, ‘কাল রাতে তোর ফোনালাপের সব কথা শুনেছি আড়াল থেকে। আমার ইনহেলারের জন্য এই শার্ট তুই কিনতি না। তাই আমিই কিনে এনেছি। হা হা হা।’
বাবা হাসছেন। অনেক দিন পর বাবাকে এভাবে হাসতে দেখেছে পলাশ। শপিং ব্যাগ খুলে নীল শার্টটি বের করতেই চোখ ভিজে এলো পলাশের।

 


আরো সংবাদ



premium cement