২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জী ব নে র বাঁ কে বাঁ কে

বোটানিক্যাল গার্ডেনে একদিন

বোটানিক্যাল গার্ডেনে একদিন -


আমাদের বাসা মিরপুর হওয়ার দরুন সময় সুযোগ মিললেই দেখা যেত ছুটির দিনের বিকেলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে একটু ঘুরে আসতাম। গাছপালার মাঝে হাঁটতে বা একটা চাদর পেতে বসে গল্প করলে খুব আরাম লাগে। কিছুই না, শুধু পদ্মপুকুরের ধারে মিনিট ১৫ দাঁড়িয়ে থাকলেও খুব প্রশান্তির জোগান পাওয়া যায়। মনে হয় যেন আগামী কয়েকদিনের জন্য রিচার্জড হয়ে গেলাম!
আন্তেপেও নাকি বেশ সুন্দর একটা বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে। বাঙালিদের মধ্যে পরিচিত এক জোড়া ভাই-ভাবী বেড়িয়ে এসে ভালো রিভিউ দিয়েছেন। ছুটি না পেলে আবার বের হতে পারি না। তাই কিছুদিন আগের বন্ধে গাজিয়ান্তেপ বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে বেড়িয়ে আসলাম।
সেন্টার থেকে ট্রামে চেপে চার-পাঁচটি স্টেশন পেরুলেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। টিকিটের দাম ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিন লিরা আর বাকিদের জন্য পাঁচ লিরা।
ঢুুকেই মন চনমনে হয়ে উঠল। প্রথম দৃশ্যেই প্রেমে পড়ে গেলাম বলা যায়! যেহেতু বসন্ত চলে তাই প্রায় সব গাছে ফুল আর নতুন পাতা। শুরুর অংশের একপাশজুড়ে গাছের চারা বিকিকিনি হচ্ছে। সে কাঠের ছোট্ট দোকানের সব বাচ্চা বাচ্চা গাছ ফুলে ফুলে নুয়ে আছে। কি যে মিষ্টি লাগল দেখতে! একটা কাঠের ফলকে লেখা ছিল কিছু বিধিনিষেধ। বারবিকিউ করা বা কোনো ধরনের আগুন জ্বালানো যাবে না, গাড়ি পার্কিং করা যাবে না, কারেন্টের তারে হাত দেয়া যাবে না।
গাছে গাছে ফুল থাকায় নরম ধরনের সুন্দর একটা ঘ্রাণ পুরো বাগানজুড়ে ঘুরাফেরা করছিল। অনেক দেশের অনেক রকমের গাছ আছে এখানে। কিছু ছিল বিলুপ্তপ্রায় গাছ। জাপানের কিছু গাছ নিয়ে দেখলাম একটা অংশ ভাগ করা। আর গোলাপের গাছগুলোতে গোলগাল কলি দিয়ে ঠাসা! কয়দিন বাদেই এরা পিটিশ পিটিশ করে চোখ মেলবে। আর টিউলিপ নাকি আরো ১০-১৫ দিন আগে সব ফুটে গেছে। এখন সব ঝরে যাচ্ছে। তখন নাকি গার্ডেনটা দুনিয়ার বুকে এক টুকরো বেহেশতের মতো লাগে দেখতে! আমরা এ বছর মিস করলাম। যদিও টুকটাক কিছু টিউলিপ দেখতে পেরেছি। এ ছাড়াও অনেক নাম না জানা নতুন ফুল আর গাছ প্রথমবারের মতো দেখতে পেলাম।
পরিবার নিয়ে অনেকেই এখানে আসে। শিশুরা খেলে বেড়ায় আর বাবা-মা ঘাসে বসে গল্প করে। সাথে ফ্লাস্ক ভরে চা আনে আর কিছু হালকা নাশতা। আমরা যদিও তেমন বসিনি। এখানে একেক ধরনের গাছ একেক লেনে সাজানো। প্রতিটি লেনময় হেঁটে হেঁটে গাছ দেখেছি। একটা ফলকে লেখা ‘রঙ ও ঘ্রাণের বাগান’। তার মানে এ অংশের যাবতীয় গাছে সুঘ্রাণের রঙিন ফুল ফোটে। আমি সেখান থেকে পাতাফুলের ঘ্রাণ শুকেছি। এই গার্ডেনে সরু একটা লেক আছে। সে লেকে শাপলার আর জল পদ্মের মতো ফুল ফুটে আছে কিছু। আর তার উপর কাঠের সেতু।
এ গার্ডেনটিতে অনেকগুলো কাঠের তৈরি ছাউনির মতো আছে। সে ছাউনির মাথায় লতানো গাছ। একটু এগোতে দেখলাম ময়ূর। আমরা তার খাঁচার সামনে যেতেই সে পেখম মেলে আমাদের একটু নেচে দেখাল! এক রঙিন হাঁসের সাথেও মোলাকাত হলো। গাছের নিচে একমনে বসেছিল। তার পাশে ছোট কাঠের ঘর। বোঝা গেল এ ঘরের মালিক সে। এ বোটানিক্যাল গার্ডেন একদম শেষ সীমানায় আছে একটি ধাঁধার দেয়াল। সে দেয়ালে অনেকগুলো বন্ধ জানালা আর সমস্ত জানালার উপরে একটি একটি করে ধাঁধা লেখা। ধাঁধার উত্তর জানতে চাইলে জানালা খুলে দেখতে হবে। আইডিয়াটা মজার লাগল। আর আমার পছন্দের ট্রি হাউজও আছে। কিন্তু মই বেয়ে ওঠার মতো জুতো পায়ে ছিল না বিধায় ওঠা হয়নি। আফসোস!
আমরা ঘণ্টাখানেক মতো ছিলাম পার্কের ভেতর। অতটুকু সময়ের মাঝেই আমরা তিন জোড়া নতুন জামাই-বউ দেখেছি যারা এ বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিয়ের যুগল ছবি তুলতে এসেছে। তুর্কিদের রূপ নিয়ে তো নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ওরা বাই ডিফল্ট রূপবতী। তার ওপর যখন একটু সাজগোজ করে এদের দিকে তখন তাকালেই চোখে ধান্ধা লেগে যায়। কি সাঙ্ঘাতিক সুন্দর! বিয়ের মৌসুমের ছুটির দিনে নাকি সারাদিনই এখানে নব্য বিবাহিতদের দেখা পাওয়া যায়। বসন্তে আর গ্রীষ্মে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ফুলে একদম ঢেকে যায়। তখনই আবার বিয়ে করার মোক্ষম মৌসুম। গার্ডেনটা তো অসম্ভব সুন্দর, আবার নতুন বউ-জামাই এই সৌন্দর্যে যেন একটু ডিটেইংলিং যোগ করে দেয়।
তবে একটা সমস্যা হয়েছিল বৈকি। তা হলো ভাষার সমস্যা। খুব করে চাচ্ছিলাম কোনটা কোন গাছ আর তাদের বিশেষ কী বৈশিষ্ট্য তা পড়তে। লেখা ছিল ফলকে। কিন্তু তুর্কি ভাষায়। এরা আমাকে তুর্কি শিখিয়েই ছাড়বে!
যাই হোক। হাঁটাহাঁটি-ঘোরাঘুরি শেষে বাড়ি ফিরলাম আর মনে মনে ঠিক করে রাখলাম কয়দিন বাদে গোলাপ সব কলি ফুঁড়ে বেরুলে আবার বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাব। এমন সুন্দর ঘটনা দেখতে পেলে আমার চোখ জোড়া নিশ্চই আমাকে থ্যাংক ইউ বলবে!

 

 


আরো সংবাদ



premium cement