২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নারী রূপ : মা নাকি বউ?

নারী রূপ : মা নাকি বউ? -

যখন থেকে মানুষ সামাজিক মর্যাদায় বিবাহবন্ধন নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে সমাজ গড়ে তোলে। তৈরি হয় চেইন সম্পর্কের। সম্পর্কের যেমন পিঠ বদল হয় সাথে বদল হয় দু’জন নারীর রূপ। একজন মেয়ে থেকে বউ আর অন্য জন বউ থেকে শাশুড়ি টাইটেলপ্রাপ্ত। এসব বাঙালি শাশুড়ি বউয়ের মিল-অমিল বরাবরই প্রশ্নসম্মুখীন। পরের বাড়ির বউমা যেমন রূপবতী, ভদ্র, সুশীল, গুণী ও মিষ্টি হয়। পাশের বাড়ির শাশুড়িও হন মমতাময়ী, দয়ালু আর আন্তরিকপ্রবণ।
প্রাচীন সময় থেকেই শাশুড়ি নামক বয়োজ্যেষ্ঠরাই কর্তৃক খাটিয়েছেন সংসারে। আধুনিক যুগে তার বিপরীত রূপও দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো সংসারে রয়েছে সমান কর্তৃত্বের সংখ্যালঘু কায়া বা দ্বন্দ্ব।
দ্বন্দ্বটা যদি দু’জনে সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে কোনো কথা ছিল না কারোর। মাথা ব্যথাও থাকত না কোনো। বউ শাশুড়ির এ দ্বন্দ্ব দু’জন ছাড়িয়ে তিনজনে, চারজন বা একটি সংসারের সুখ-দুঃখের ফসল। আত্মীয় নামক চেইন সম্পর্কে তেঁতো ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। দায়ীর পরিমাণ বেশি কম সে বউ শাশুড়ি হয়ত কেউ একজন। মূল কথা দাঁড়ায় নারী বা তার রূপ।
প্রচলিত প্রথানুসারে, সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে। আশ্চর্য! কতশত প্রথা ভেঙেছে। বিধবা বিবাহের মতো কঠিন আইনও পাস হয়েছে, মুসলিম নারীদের স্বাধীনতাও পেয়েছে, কতশত নতুন আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু একবারও ভাবা হয়ে উঠেনি- যেখানে সংসার গড়ে নারী-পুরুষের প্রচেষ্টায়। কিভাবে ক্রেডিট নারীর একার অর্জন?
পুরুষজাতি নারী শব্দটাকে বরাবরই দুর্বলতার চোখে দেখেছেন। গোটা ক’জন দেখেছেন মমতাময়ী, অলরাউন্ডার আর শ্রদ্ধাভরে।
ছেলেসন্তান মেয়েসন্তানের কদর এখন সমান হলেও মনের আনন্দে কোথাও একটা কমতি রয়ে যায়। বংশ রক্ষার একটা গোপন তাগিদ কাজ করে মনের অজান্তেই। নারী পুরুষের অধিকার যতই সমান বলা হোক না কেন একটা জায়গায় ঠিক নারীরা আটকে যাবেন। হয়ত প্রতি পদে পদে।
বিয়ের পর ছেলের পরিবার থাকবে ছেলের সাথে কিন্তু মেয়ের পরিবার নয়। এটা রেওয়াজ। হয়ত, আপদে-বিপদে বা প্রয়োজন রক্ষার্থে অস্থায়ী গোটা ক’দিনের ঠাঁই হয়। সেটাও সংখ্যায় নগণ্য। নারী উপার্জনকারী হওয়া সত্ত্বেও তা সম্ভব নয়। পুরুষ চাইলেই পারেন বউকে উপেক্ষা করে মা, বোন-ভাগ্নীকে কাছে রাখতে খোঁজখবর নিতে।
যা নারী বহুরূপের অধিকারী হয়েও পারেন না।
আবার কিছু কিছু পুরুষ নারীর রূপ পার্থক্য এমনভাবে গড়েন অর্থাৎ বউ মায়ের দুটো রূপ গুলিয়ে ফেলেন। সংসারের সূচনালগ্নেই মা ভক্ত ছেলে বা বউ পাগল বর টাইটেল সহজেই লাভ করেন সে পুরুষ।

কেউ কেউ বউকে এত্তটা ভালোবাসেন। যার জন্য সমাজে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। দিনকে দিন ভারী হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমের আকাশ। তারা ভুলেই যান তাদের সৃষ্টির কথা। বউ ভুলে যান যাকে নিয়ে সংসার করছেন তিনি সেই ঘৃণিত শাশুড়ির গর্ভের ফসল।
ব্যতিক্রম কথাটা এ পৃথিবী তে আজন্ম রবে। বউ শাশুড়ির কর্তব্যপরায়ণ সংসারও আছে সংখ্যা নগণ্য। আমি বরাবর পাল্লা ভারীর দিকে। স্মাইল।
অনেকের হয়ত প্রশ্ন হবে শাশুড়ি কি কখনো মা হতে পেরেছেন, নাকি বউ কখনো মেয়ে হতে পেরেছেন?
একটা নতুন সঙ্গী, নতুন মানুষ, নতুন স্বপ্ন, নতুন কল্প, নতুন পরিবেশ, নতুন জন। আপন পরিবার ছেড়ে কিছু অজানা অচেনা মানুষকে আপন করার তাগিদ।
নিজেকে খাপ খায়িয়ে নিতে ভুলের লিস্টে কিছু সময় অতিবাহিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। কেউ যদি বলেন আমি পরিপূর্ণ সুখে আছি। তা অবিশ্বাস্য। নাতি-নাতনীদের জন্য হলেও বউ নামক নতুন মাকে কথা শুনতে হবে। আর যত সুশীল বউ হোক না কেন। স্বামীর ভবিষ্যৎ ভাবনাতে একবার হলেও বলবেন সেভিংয়ের কথা। যেখানে দ্বন্দ্ব নামক শব্দটা সহজেই নেড়ে ওঠে।
এবার হোক সেসব পুরুষের কথা যারা মায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। এত্তটাই মা ভক্ত সেসব পুরুষ। মায়ের বিলাসিতার জন্য নিজের অধঃপতনের ধারও ধারেন না। বউ সন্তানে মৌলিক চাহিদা পূরণেও রয় ঘাটতি। কোনো রকম ডাল ভাতের ব্যবস্থা করেই দায় সাড়েন। আর দমে দমে মায়ের জন্য সজাগ রন! একটা স্বভাবসিদ্ধ ধারণা পুরুষের রয়ে যায়। বউ কখনো শাশুড়ি নামক মাকে ভালোবাসতেই পারেন না। কর্তব্য পালন যতই হোক না কেন স্বামীদেবতার সন্তুষ্টি পাওয়া এত্ত সহজ নয়। বলছি সেসব পুরুষের কথা- তবে আপনার উচিত যত দিন মা বেঁচে রবে তত দিন বউ নামক বিয়ের সম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন।
ধিক জানাই সেসব পুরুষকে যারা মা আর বউ দুই নারীর পার্থক্য বুঝেন না।
পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের কর্তৃত্ব থাকা সত্ত্বেও সুযোগ সন্ধানী পুরুষ নারীর উপরেই পুরো দোষ চাপিয়ে দেন অবলীলায়।
নারীর শ্রদ্ধা শুরু হোক ঘর থেকে, পাক সমঅধিকার। তবেই নারী নামক সংসার কলঙ্ক ঘুচবে। সংসার সুখের ভাগ যেমন নারীর একার নয়, দুঃখের ভাগও নয়।
নর-নারীতেই সুখ-দুঃখ নিহিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement