২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আফসোস : কলমের শেষ কালি

আফসোস : কলমের শেষ কালি -

অবকাশের সময়গুলোতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় কলম এবং কালো কালির পরত দিয়ে। নিজের ভাবনাগুলোকে কলমের কালি দিয়ে পূরণ করতে হয় সাদা ধপধপে কাগজের পাতায়। আপনি হয়তো জানেন-ই না যে, এখনো অনেক শূন্যস্থান বাকি যা অবহেলায় পড়ে রয়েছে ‘জীবন’ নামক এক ধুলোই পড়া ডায়েরিতে। যে ডায়েরিটাতে শুধু আপনার ‘নাম’ লেখা আছে প্রমাণস্বরূপ। কিন্তু শূন্যস্থানের ফাঁকা জায়গাগুলো ফাঁকাই রয়ে গেল। শূন্যস্থানের অজানা কথাগুলো আপনার জীবনে জানা খুব প্রয়োজন। খুব। শুধু জানাতেই ক্ষ্যান্ত নয়; জানা কথাগুলো বাস্তবায়ন করাটাও তেমন প্রয়োজন।
কালো কালির তরল পদার্থের অভাবে আমার কলমের মেয়াদ শেষের দিকে উপনীত হয়েছে। তাকে নতুন যখন এনেছিলাম তখন তার গায়ের রঙ ছিল খুব সুন্দর। কোনোরকমের ঘাটতি ছিল না তার সৌন্দর্যের। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কলমটিকে আমি যখন আমার ধারালো দাঁতের আঘাত বসিয়ে দিতে লাগলাম ঠিক তখন থেকেই তার সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটতে লাগল! তবে কলমটাকে আমার দাঁত দিয়ে আঘাত করাটা একান্তই আপন ভালোবাসা থেকেই করা হয়। তো! বাদ দেই এসব কথা। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার কলমের কালি প্রায় শেষের দিকে। অল্প একটু লিখলেই কালি শেষ হয়ে যাবে। বাইরে গিয়ে যে একটা কলম ক্রয় করব তার উপায় নেই। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। অধিকাংশ সময়ে মুষলধারে যে বৃষ্টি হয় তা খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়। প্রকৃতির বেঁধে দেয়া নিয়মে আজকের বৃষ্টিটাও খুব স্বাভাবিক। তবে বাইরে গিয়ে একটা কলম ক্রয় করা খুব কষ্টসাধ্য। কারণ, গ্রামের মেঠোপথ বুঝতেই পারছেন! একটু পানির ছিটা লাগলেই রাস্তাঘাট কাদাতে একাকার হয়ে যায়। সব মিলিয়ে-ই বাইরে গিয়ে পাঁচ টাকার একটা কলম ক্রয় করে নীড়ে ফেরা বড়সড় একটা চাপ হয়ে যাচ্ছিল বলেই বাইরে যাওয়া হয়নি।
কী আর করব! মুষলধারে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমাকে বেদনার মাঝামাঝিতে ডুবিয়ে দিয়েছে। না পারছি বাইরে গিয়ে একটা কলম ক্রয় করে মনের মতো করে লিখতে, না পারছি কলমের অল্প কালির পরত দেখতে! আমি আসলেই শূল বেদনার আহাজারিতে আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত।
তবুও মনের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এক কিঞ্চিত কলমের কালি নিয়েই ডায়েরির পাতায় বাংলা বর্ণমালার অক্ষর দিয়ে শব্দের গাঁথুনির এক বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। চেষ্টার কমতি রাখিনি। লিখেছিলাম এভাবে
‘আমি ক্লান্ত,আমি ক্ষুধার্ত -
আমি দুর্ভাগা, আমিই শ্রেষ্ঠ।
আমি হাল্কা, আমি সবলতা -
আমিই সব, আমিই সবলচিত্ত।
আমি একাধিক পথের পথিক
আমি নয়ইতো এক পথের পথিক।
চলতে থাকা এই পথচারীর
জয়ের নিশানা উঠবেই উঠবে।
রাজত্বের রাজ্য বিজয়ের হাসি
গরিবের ব্যবধান চোখের পানি।
রাজত্বের আছে শুধু আহাজারি!
গরিবের কাছে রাজত্ব হয় এক অবিশ্বাসী।’
এটুক লেখার পর দ্বিতীয় পৃষ্ঠার মাঝ বরাবর ভিন্ন কিছু লেখার চেষ্টা করছিলাম ঠিক এভাবে- ‘মানুষ আচরণ প্রাথমিক পর্যায়ের হলেও কিছু আচরণ অসমতুল্য; কিছু আচরণ নিম্নস্তরের এক অশান্তিপূর্ণ। আমরা এই বিষয়টি দু-ভাগে বিভক্ত করব।

এক. স্নিগ্ধ ভালোবাসার নীল রঙের সাদা মানুষ এবং তার আত্মমর্যাদার সহানুভূতি। ব্যক্তির মিষ্টিভরা একটু কথা হাজার মানুষের প্রশান্তি আর সুখের আবির।
দুই. রাস্তায় পড়ে থাকা পথশিশুর প্রতি ব্যক্তির নজর অবজ্ঞা আর অবহেলায়!
প্রথমজনের প্রশংসা কেবল হৃদয়ের অকপটের গহিন থেকেই। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য আমার আফসোস হয় আফসোস!’
‘আফসোস’ শব্দটা লিখতেই আমার কলম কালির সংবরণ হয়। ভাবছিলাম তাকে নতুন করে সাজাব। কিন্তু সাজানো আর হলো না, কারণ কলমের কালি শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমাকে এটুক শিক্ষা দিয়েছে যে, ভালোবেসে কলমকে দাঁত দিয়ে আঘাত করাটা যেমন তোমার কাছে ভালো লাগা, ঠিক তেমন প্রতিটা কলমের কাছে তার কালি দিয়ে ভালো কিছু গাঁথুনির শেষ শব্দটা প্রতিটা কলমের ভালোবাসা। শেষ শব্দটা যেহেতু ‘আফসোস’ হয়েছে, সেহেতু কলমটা না হয় আমার কাছে আফসোসের রেখা টানতে থাকুক। যে দিন রেখাটা পূরণ হবে সে দিন আবারও লিখব জীবনের ‘শূন্যস্থানের’ ক্ষত জায়গাগুলোর দিক। শেষে একটা কথা না বলা আমার খুব অন্যয় হবে। শেষ কথা, দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য আমার আসলেই আফসোস হয়, আসলেই।


আরো সংবাদ



premium cement