রেজাল্ট
- শেখ সজীব আহমেদ
- ০৫ জুন ২০২২, ০০:০০
আমি যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। পড়াশোনায় তখন আমার মন বসছিল না। অঙ্ক পরীক্ষার খাতায় কবিতা লেখাসহ অন্যান্য বিষয়েও আবোল-তাবোল যা মন চাইত তা লিখে আসতাম। মাঝে মধ্যে নিজের নামও পরিবর্তন করে রাখতাম। সজীব থেকে আহমদ, আহমদ থেকে সজীব আহমেদ। এক সময় কোনো এক মেয়েকে পছন্দ হলো তার নামের সাথে মিল রেখে দিলাম শাহনেওয়াজ।
টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণা করবে। তাই যার যার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে নিয়ে আসতে বলা হলো। আমি মাকে নিয়ে গেলাম। সবাই রেজাল্ট ভালো করলেও আমি ভালো করিনি। সব বিষয়ে ফেল করেছি। আমাকে যখন শাহনেওয়াজ বলে ডাক দিলো তখন আমি দাঁড়ালাম। এ সময় মা আমাকে বললেন-
-তুই দাঁড়াইলি ক্যা? তোর নাম তো ডাকে নাই।
আমি তোতলিয়ে বললাম-
-এটাই আ-আমার নাম।
একজন শিক্ষক বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
-তোমার গার্ডিয়ান কে?
-এই যে, আমার মা। মা, দাঁড়াও।
মা দাঁড়ানোর পর প্রধান শিক্ষক মাকে বললেন-
-আপনার ছেলে সব বিষয়েই ফেল করছে। অরে দিয়া মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাইব না।
আপনার ছেলে একজন বেয়াদব। অঙ্ক পরীক্ষায় কবিতা ল্যাখছে। আর ক’দিন পরপরই নাম চেঞ্জ করে। অরে নিয়া অনেক আশা করছিলাম।
যা হোক, অর পড়াশোনার পিছে টাকা নষ্ট কইরা লাভ নাই। যেকোনো একটা কাজে লাগাই দেন।
মা কান্নামুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
- কী রে! পরীক্ষা এ্যামন করছত ক্যা?
আমি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললাম-
-আমার কিছুই মন থাকে না।
অতঃপর, আমি মন খারাপ করে বাড়িতে চলে এলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম পড়াশোনা আর করব না। কাজ করতে শহরে চলে যাব। আমি নাপিতের দোকানে চুল ছাঁটতে গিয়ে পত্রিকা পড়ার সময় দেখতে পেলাম চাকরির বিজ্ঞপ্তি। ঠিকানা মুখস্ত করে রাখলাম। পরের দিন ঢাকায় যাব এই চাকরির জন্য।
অবশেষে, ঢাকায় এলাম। চাকরি হলো। তবে নগদ তিন হাজার টাকা দিতে হবে। থাকা খাওয়ার জন্য আর ফরম পূরণের জন্য এক হাজার টাকা। আমি এক হাজার না দিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে বললাম-
-আপাতত, আমার কাছে তেমন টাকা নেই। আগামীকাল বাড়ি থেকে জামা-কাপড় আনার সময় তিন হাজার টাকা নিয়ে আসব।
আমি চাকরির কার্ডটা নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। বাড়িতে এসে মা-বাবাকে বললাম-
-আমার চাকরি হয়ে গেছে। তিন হাজার টাকা লাগব।
-অভাবের সংসার, টাকা পামু কই?
আমি কান্নাকাটি করলে, সমিতি থেকে মুনাফায় টাকাটা এনে দিলেন।
পরের দিন রওনা হলাম। যখন বাসে উঠব তখনই দেখা আমার বোনজামাতার সাথে। তিনি বললেন-
-আপনে কোথায় যান?
(বোনজামাতা আমাকে নেনদেন করে বলেন কারণ, বোন আমার চেয়ে ছোট)
চাকরি অইছে? তাই ঢাকা যাচ্ছি।
-কী চাকরি?
-সুপারভাইজার, শার্টের গার্মেন্টসে। কম্পিউটারও শিখাইব বলছে। বেতন ১৫ হাজার টাকা।
-চাকরি অইছে তা প্রমাণ কী?
-আছে, প্রমাণ আছে। দ্যাহেন আমার ছবিসহ এই, এই কার্ডে স্বাক্ষর করা আছে।
-দ্যাহি কার্ডটা, বোনজামাতা তার বন্ধুকে কার্ডটা দেখিয়ে বললেন-
-দ্যাখ তো কী লেখা আছে? পড়ে বললেন-
-এ সব ভুয়া। হয়তো টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি।
কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সুপারভাইজার পোস্টে চাকরি। এটা কি সম্ভব? আর অর যে চেহারা, অরে কেউ সুপারভাইজার মানব নাকি? ওখানে গেলেই গুম করে মুক্তিপণ চাইব। তারপর, আমাকে বুঝিয়ে নিয়ে এলো স্যারদের কাছে। স্যাররা সবাই অবাক। আমি কাজে চলে যাব বলে। এক স্যার বললেন-
-উই তো ভালো ছাত্র ছিল। এখনো সময় আছে, ভালোভাবে পড়লে মেট্রিকে ভালো রেজাল্ট করবে।
বোনজামাতা ও তার বন্ধুর অনুরোধে আবার পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগল। বাড়িতে এসে আমাকে পাঠ্যবইয়ের অঙ্কগুলো বুঝিয়ে দিলেন। অবশেষে, আমি মেট্রিক পরীক্ষা দিলাম। রেজাল্ট এলো ‘এ’ গ্রেড। আমার এই রেজাল্ট শুনে সবাই খুশি হলেন। শুরু থেকে ভালোভাবে পড়লে, হয়তো রেজাল্ট আরো ভালো হতো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা