২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এক সন্ধ্যায় নদীর তীরের ভয়ঙ্কর কাহিনী

এক সন্ধ্যায় নদীর তীরের ভয়ঙ্কর কাহিনী -

আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ফেনী নদী। আর এই নদীতে নাকি অসংখ্য ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে আগে। এমনকি এমনো শুনেছি, নদীর চরে নাকি রাতে মুখের মধ্যে আগুন নিয়ে কারা জানি দৌড়াদৌড়ি করত, আবার বিভিন্ন গরু, ছাগলের, মুরগির আকার ধারণ করে নদীর তীরে ঘুরাঘুরি করে এসব রহস্যময় প্রাণী। মানুষ এসব প্রাণীর সংস্পর্শে এলে তারা নাকি বাতাসের সাথে মিশে যেত। কিন্তু আমি কখনো সাক্ষী হইনি এসব ঘটনার। তবে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা যা আমার জীবনে অনেক কিছু শিক্ষা দিলো।
একদা আমরা তিন বন্ধু নদীর চরে আড্ডা দিতে গেলাম। সময়টা পড়ন্ত বিকেল বেলা। তিন জনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সন্ধ্যা নেমে এলো। এর মাঝে আমরা দেখতে পেলাম নদীর অপর পাশে একটা হাঁস ডাকছে। অন্ধকার নেমে এলো তারপরও হাঁসটা বাড়ি যাচ্ছে না। তখন আমরা তিন বন্ধু চিন্তা করলাম হাঁসটা নদীর পাড়ে এভাবে রাত পর্যন্ত থেকে গেলে হয়তো কোনো জীবজন্তু খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু রহস্যময় কথা হলো, হাঁসটা পাশ দিয়ে কয়েকজন মানুষ নদীর পানি নামল তারা কেউ দেখল না। শুধু আমরা অপর পাশ থেকে দেখছি হাঁসটা। অন্ধকার যখন নেমে এলো আমরা ভাবলাম হাঁসটা নিয়ে আসবো নদী পার হয়ে। তার ধারাবাহিকতায় আমরা তিন জনে একটা ভাঙা নৌকা নিয়ে রওনা দিলাম নদী পার হওয়ার। নদীতে বর্ষাকাল হওয়াতে প্রচুর স্রোত আর বড় বড় কচুরিপানা। আমরা ভাঙা নৌকাটা নিয়ে খুব কষ্ট করে নদী পার হলাম। আস্তে আস্তে পায়ের শব্দ না করে গেলাম হাঁসটার কাছে। কিন্তু হাঁসটা যে বরাবর ছিল তার ওপরে বিশাল জঙ্গল আছে এবং ঠিক এই জায়গায় নাকি তৎকালীন সময়ে অনেক জিন, ভূতের ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটছে। আমাদের মনে মনে সে ভয়টাও আছে। যখনই হাঁসটার স্থান বরাবর গেলাম তখনই দেখি হাঁসটা নেই ওইখানে। আমরা মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে সাহস নিয়ে ওপরে জঙ্গলের দিকেও দেখলাম। কোথায়ও নেই হাঁসটা। এবার সে জঙ্গলে কিছু বাঁশগাছ আছে। বাতাসের সাথে সাথে বাঁশগাছগুলো যেন আমাদের মাথার ওপর ভেঙে পড়বে এমন অবস্থা হচ্ছে। আমরা সাথে সাথে জায়গাটা ত্যাগ করে নৌকায় উঠলাম নদী পার হতে। কিন্তু নদীর মাঝখানে আসার পর নৌকার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করল। প্রচুর পানির স্রোত আর অসংখ্য কচুরিপানা নৌকাকে নদীর মাঝপথে শুধু চার দিকে ঘুরাচ্ছে। কী এক বিপদ! চার দিকে অমাবশ্যার অন্ধকার। বর্ষকাল হওয়াতে নদীতে পানির পরিমাণ বেশি। সব কিছু মিলে কী এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে। সাথে আমাদের তিন বন্ধুর কাছে তিনটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। আমরা মনে মনে দোয়া পড়ছি- তাও কোনো কাজে আসছে না। মাঝে মাঝে দূর থেকে বড় বড় কচুরিপানার দল আসে, যেন মনে হয় বিশাল একটা পাহাড় আসছে নৌকার দিকে। সব কিছু দেখে মনে হলো লোভ করায় আজকে কোনো একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে আমাদের সাথে। তখন মনে উঠে আসে তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন মানুষ নাকি এই নদীর পানিতে ডুবে মারা গেছে এসব ঘটনাও। অবশেষে কচুরিপানার সাথে আমাদের নৌকাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে একটু নদীর পাড়ের কাছাকাছি এসে আমরা নৌকা থেকে নিচে নেমে নৌকাটা টেনে ঘাটে আনলাম। অবশেষে বুঝতে পারলাম ওইটা আসলে হাঁস ছিল না। কোনো এক রহস্যময় কিছু ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement