২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর ভাড়াউড়া লেক

অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর ভাড়াউড়া লেক -

চায়ের রাজধানীখ্যাত পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গল। যা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত একটি নাম। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত শ্রীমঙ্গল শহর। প্রায় দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন চা-শিল্পের ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী দীর্ঘকালের পথ পরিক্রমায় প্রাকৃতিক আশ্রয়ে গড়ে উঠা পাহাড় ও সমতল ভূমির ওপর ছোট এই শহরের অবস্থান। অপরূপ নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, পাহাড়ি ঝরনা, পাহাড়, হাইল-হাওরের মতো জলাভূমি এবং অতিথি পাখির বিচরণের অভয়ারণ্য বাইক্কাবিল, লেক ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ এই উপজেলা।
উঁচু-নিচু পাহাড় ঘেরা বন-বনানী আর নীল আকাশের সাথে যেন সবুজ পাহাড়ের গভীর এক মিতালি। নিজ চোখে না দেখলে শুধু শব্দের গাঁথুনি দিয়ে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল! এই বিচিত্র রূপ আর সৌন্দর্য এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ-বিদেশের প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন- প্রকৃতির রানী শ্রীমঙ্গলে। প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে আপনি দেখতে পাবেন- দৃষ্টিনন্দন চা-কন্যা ভাস্কর্য, মৃত্যুঞ্জয়ী-৭১ বা স্মৃতিস্তম্ভ বধ্যভূমি-৭১, চা-জাদুঘর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, অতিথি পাখিদের অভায়ারণ্য বাইক্কাবিল, সবুজে ঘেরা চা-বাগান, টার্কিশ স্থাপত্য শিল্পের জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, লেক, হাইল হাওর, চার শ’ বছরের পুরনো বরুণা জামে মসজিদ, বরুণা মাদরাসায় নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদে আবুবকর রা:, চিড়িয়াখানা, লেবু-আনারস, রাবার বাগান ইত্যাদি।
ছোট-বড় মিলিয়ে অনেক পর্যটন স্থান রয়েছে এখানে। তেমনি একটি পর্যটন স্থান- ‘ভাড়াউড়া লেক’। এটি শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ভাড়াউড়া চা-বাগানে অবস্থিত। সবুজে ঘেরা চারপাশে চা-বাগানে মাঝখানে এই বিশাল লেক। স্থানীয় লোকজনসহ অনেক পর্যটক এখন এই লেকটিতে বেড়াতে আসেন প্রতিনিয়ত। লেকের দক্ষিণ-পূর্বে পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতানের সীমানা, পশ্চিমে মূল ভাড়াউড়া চা-বাগান, উত্তরে রেললাইন ও পূর্বে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। চার দিকে সবুজের সমারোহ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ। অপরূপ সৌন্দর্যের ভাণ্ডার নিয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে এই লেকটি। লেকের মনোরম পরিবেশ ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গত ২৮ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিজেদের অবসর সময় কাটাতে ও লেকের অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে বিকেলে উপস্থিত হয়েছিলাম আমরা ক’জন প্রকৃতিপ্রেমী। এ কাফেলায় যারা সাথে ছিল প্রিয় বন্ধু আরিফ হোসেন, হিফজুর রহমান, জুবায়ের আহমদ জুবেল। শহরের কলেজ রোড থেকে অটোরিকশা চড়ে প্রথমে ভাড়াউড়া চাবাগানে পৌঁছি। লেকে যেতে হলে প্রায় ৩০ মিনিটের পাহাড়ি পথ একটু হেঁটে যেতে হয়। হেঁটে চলার পথটি এতই সুন্দর যে, হাঁটার ক্লান্তি আপনিই ভুলে যাবেন। প্রায় ৩০ মিনিটে পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ হেঁটে পৌঁছি- আমাদের কাক্সিক্ষত সেই ভাড়াউড়া লেকে। লেকের শাপলা ফুলগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের মধ্যে লালের ছোঁয়া। চা-বাগানে বেষ্টিত লেকের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে বিমুগ্ধ হয়ে পড়ি আমরা। নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে- সুবহানাল্লøাহ। আর গেয়ে ওঠি- ‘সবুজ শ্যামল এই অপরূপ লীলাভূমি/স্র্রষ্টার অপার দান, লাখো লাখো আদমের শাহাদত সিঞ্চিত আমারই প্রাণতান। মহিরুহ পলললে, পাখিদের কলললে/স্বর্গের সন্নিবেশ। আমার জন্মভূমি প্রিয় বাংলাদেশ। এ জন্যই বুঝি আল্লøাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লøাহ সব কিছু করতে সক্ষম।’ (সূরা আনকাবুত-২০) এ ছাড়াও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিম্নে উক্ত কবিতাটির পঙক্তিগুলোর মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়। কবিতাটি- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু’।
অতঃপর আসরের সময় হলে লেকের স্বচ্ছ পানিতেই অজু করে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করি। নামাজে ইমামতি করেন প্রিয় বন্ধু জুবায়ের আহমদ জুবেল। প্রায় দু’ঘণ্টা লেকের শোভা সৌন্দর্য উপভোগ করে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে আসি। কিন্তু মনটা পড়ে থাকে লেকে!
যেভাবে যাবেন : বাস, ট্রেনে কিংবা অন্য যেকোনো যানবাহন দিয়ে দেশের যেকোনো স্থান থেকেই আসুন না কেন, প্রথমে আপনাকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরে আসতে হবে। অতঃপর শহরের চৌমুহনা পয়েন্ট থেকে কলেজ রোড হয়ে অটোরিকশা বা সিএনজিতে সোজা চলে যান ভাড়াউড়া চাবাগান। এখানে যেতে সময় লাগবে রিকশায় ১০ মিনিট। অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা নেবে। চাইলে গাড়ি রির্জাভ করেও যেতে পারেন। সে জন্য আলোচনাসাপেক্ষে গাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে নিলেই ভালো। অতঃপর সেখান থেকে প্রায় ৩০ মিনিটের পাহাড়ি পথ একটু হেঁটে গেলেই পেয়ে যাবেন- আপনার কাক্সিক্ষত ভাড়াউড়া লেক।

 


আরো সংবাদ



premium cement