২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জী ব নে র বাঁ কে বাঁ কে

ভাবলেই কেমন অবাস্তব লাগে

ভাবলেই কেমন অবাস্তব লাগে -


আমার মতো আলাভোলা মানুষের জন্য সম্পূর্ণ একা আকাশপথে ভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো সহজ কথা নয়! আমি এমন একজন অতি দিকভোলা মেয়ে, যে সুদীর্ঘ ১৪-১৫ বছর মিরপুর থাকার পরও প্রায় সময় মিরপুর-১০ এর গোলচক্করে এসে রাস্তা গুলিয়ে ফেলি! তাই এয়ারপোর্টে ঢোকার পর থেকেই আমার হার্টবিটের রেট ধুম করে অনেক ওপরে উঠে গিয়েছিল। আদৌ সব ধাপ ঠিকমতো পাড়ি দিতে পারব কিনা, পিঠে ল্যাপটপের ব্যাগ সাথে হ্যান্ড ক্যারিয়ার আবার ভুলে এখানে সেখানে রেখে আসব কিনা, তা নিয়ে আম্মু আর ফুয়াদের খুব চিন্তা হচ্ছিল। আর আমি মুখে খুব বীরপনা ফোটালেও ভেতরে ভেতরে ভয়ে এতটুকু হয়েছিলাম।
তো ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং, ওয়েটিং রুমের কাজ সেরে যখন প্লেনের সিট খুঁজে পেতে বসেছি, তখন রাত প্রায় সাড়ে ৯টা বাজে। হ্যান্ড ব্যাগটা সিটের ওপরের বাক্সে রেখেছি। সাথের ছোট ব্যাগটায় বারবার পাসপোর্ট আর ভিসা ঠিক চেইনে রেখেছি কিনা দেখছি। আমার সিটটা জানালার পাশে। ফুয়াদ খেয়াল করে আমার সিটটা জানালার পাশে রেখেছে যাতে আমি আরাম করে রাতের আকাশ দেখতে পারি।
বসে ধাতস্থ হয়ে দ্রুত আম্মুকে একটা ফোন দিলাম। কথা বললাম নানুর সাথে। তারপর আমার প্রিয় বন্ধু নওরিনের সাথে। কথা শেষ হওয়া মাত্রই বিমানবালারা খুব করে বলে দিলেন সিট বেল্ট বাঁধতে আর ফোন অ্যারোপ্লেন মুডে রাখতে। বিমান রানওয়ে দিয়ে চলতে শুরু করল। আর ঠিক তখনই আমার বুকটা ধক করে উঠল। আমার ভালোবাসার মিরপুর, আমার আদরের মানুষগুলোকে রেখে আমি অনির্দিষ্টকালের জন্য অনেক দূরে কোথাও চলে যাচ্ছি। ভাবলেই কেমন অবাস্তব লাগে! নাফিস-নাবিল-নওরিন-মমরা যেদিন সারপ্রাইজ দিলো, কেক-ফুল আনল সেদিনও আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবিনি। ওরা আমাকে আমাদের অনেক স্মৃতিবহুল ছবি ছাপানো একটা মগ উপহার দিলো। আমি অবাক হয়ে ওদের সব হুলস্থুল কাজ কারবার দেখলাম। ওরা একটা স্ক্র্যাপবুক বানাল আমাদের বিগত ছয়-সাত বছরের ছবি এঁটে। সাথে লিখে দিলো আমাকে নিয়ে ওদের তাবৎ মনের কথা। আমাকে খুশি আর অবাক করার কত শত প্রচেষ্টা! মম একটা খাম গুঁজে দিয়েছিল। ওর নিজে হাতে বানানো একজোড়া নীল কাঠের চুড়ি আর তার সাথে হাতে লিখা একটা সুন্দর চিঠি! এর চাইতে সুন্দর তোহফা আর কী হতে পারে আমার জানা নেই! সে চিঠিটা প্লেনে বসে একটানে দুইবার পড়লাম। সাথে খুব কাঁদলাম। এই মেয়েগুলোকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি। বেঁচে থাকলে যখন আবার দেশে যাব তখন সবার দায়িত্ব বাড়বে। ব্যস্ততা বাড়বে। আগের মতো দৌড়ঝাঁপ দিয়ে বেড়ানোর সময় সুযোগ আর হয়তো হবে না। সবই জানি- সবই বুঝি। শুধু এতটুকু আশা করি যে, আন্তরিকতা আর সখ্যতার কমতি যাতে কখনোই না হয়। মনের টানের ঘাটতি যাতে কখনোই না হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement