২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অপেক্ষা, বিরতি ও দীর্ঘশ্বাসের জীবন

অপেক্ষা, বিরতি ও দীর্ঘশ্বাসের জীবন -

অপেক্ষা। শব্দটা কি আনন্দের। নাকি বিরক্তির। কখন থেকে এ শব্দের উৎপত্তি। ক্রমবিকাশ। প্রয়োজনে আয়োজন। নাকি শুধু শব্দগঠন। কতকি বদল হয়। নাম। স্থান। পেশা। বাসা। এমনকি সম্পর্কও। এর আগে কখনো শুধু এই শব্দ নিয়ে কেউ কিছু লিখেছে কি না জানা নেই। কখনো কখনো এ শব্দটা বেশ নতুনবোধ হয়। সব নতুনই সুন্দর। সুন্দরের কি রূপ আছে। আছে নিশ্চয়ই। তাই অপেক্ষারও সৌন্দর্য আছে। আছে আনন্দ। এ যে সবসময়ই সুখের তা কিন্তু নয়। তবুও কিছু কষ্ট সুখের করে নিতে হয়। আপন করে নেয়াতেই আনন্দ। দেখার বিষয় কে কতটা সখ্যতা গড়ে তোলে। নাকি কারোরই তা আর হয়ে উঠে না। কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু জীবনগল্পে কেমন জানি আঠার মতো লেগে থাকে । অনেকটা দাওয়াত বিহীন মেহমানের মতো।
প্রকৃতির সৌন্দর্য ও তাই। একটি ঋতু অপেক্ষায় থাকে আরেকটি ঋতুর। একেক সময়ের থাকে ভিন্ন আবেগের রেখা। থাকে চাওয়া-পাওয়ার ফুলঝুরি। এসবই সময়ের বিরতিতে বিভিন্ন মুগ্ধতায় ফুল-ফলান্তি নিয়ে হাজির হয় । বিরতির পালায় যুক্ত হয় মাঠভরা সবুজবীথি। কি অপরূপ সুন্দরী হয়ে ওঠে। মন চায় পেখম মেলে উড়তে। এ সময়েই অপেক্ষারা সুন্দর থেকে সুন্দর হয়ে আকাশ থেকে ঝড়ে পড়ে। থোকা থোকা মেঘের ছায়ায় লুকোচুরি চলে অবিরাম। হাসি-কান্নার অদ্ভুত মিশেল তৈরি হয়। কখনো কখনো বিরতির এ অপেক্ষা নিতে চায় না মন। কিন্তু পরক্ষণেই দ্বিগুণ হয়ে ওঠে বিরতির এ অপেক্ষাযাত্রা। কিছু জানার থাকে। বুঝারও। কষ্ট নিয়ে ভালোওবাসতে হয়। বিরতির রেখা জেগে উঠে জীবনের বাঁকে বাঁকে।
অনেক দিন পর চার বন্ধুর দেখা। পরিচিত জায়গায় আড্ডা দেয়ার সুযোগ তো হয় না সহসা। যেই ভাবনা সেই কাজ। আয়োজনের ডালায় হরেক রকমের বাহারি খাবারের আনন্দ। কত স্মৃতিচারণ। দীর্ঘশ্বাসের ললাট চুম্বন। নানাবিধ পরিকল্পনায় অযাচিতভাবে এসে যায় বিরতির পালা। আহা বিরতি। জীবনের সাথে কত মধুরতায় জড়ানো। কখনো আসে কষ্ট দিতে। আসে সময়কে বুঝাতে। আসে সরব হয়ে। নীরবতার মোড় ঘুরিয়ে। চাদের হাট বসিয়ে। বাতাসের ক্ষিপ্রতায়। তবুও রোজ আসে। দরজায় কড়া নাড়িয়ে। চোখবন্ধ করে। হাসিমুখো হয়ে। এই যে আসা এর কোন যাওয়া নেই। সৃষ্টির প্রতিটি বিষয় এর বিদায় আছে। আছে পরিণতি। তবুও হেসে উঠে পৃথিবী। যেমনি হাসে প্রকৃতি।
কতকি জানার আছে। শেখার আছে। ভাগাভাগি আছে। কাড়াকাড়ি আছে। এসবই আনন্দের মুখ। পথধারা উপসর্গ। চারিপাশ কত জ্ঞানী গুণীজনের আনাগোনা। কতজন ভাবছে। কল্পনায় ভেসে আছে। সংখ্যাবিহীন মানুষ জলে ভাসা পদ্মফুলের মতো ভারসাম্য রক্ষায় বীরদর্পে সাঁতার কাটছে। তবুও আছে। এই প্রজন্মের ধারা। জন্মালেই মৃত্যু। এত সবার জানা। তবুও কি জানার শেষ কোথায় তা কারো জানা। না বোধহয়। মৃত্যু অবধারিত জেনেও ভোরের আনন্দে মন নেচে উঠে। সবুজের সমারোহ আন্তরিকতা বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে। লাল-নীল-বেগুনিরা রঙ ছড়িয়ে জানান দেয় বেঁচে থাকার আনন্দকে।
সময় বড় নিষ্ঠুর। নির্দয়। কারোর প্রতি দয়া দেখাতে শিখেনি। মায়া কি জিনিস জানে না। সে আপন গতিতে শুধু এগোতে জানে। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পথ চলে দৃঢ়তায়। শিখিয়ে চলে। জানিয়ে দেয় বাস্তবতা। কে জানলো কে শিখলো তাতে সময়ের ভাবনা কি? কে থেমে গেল কেই বা চলে গেল। কিছু-ই আসবে না যাবে না সময়ের। এমনই চিত্র বিরতির বিষয় ও। সে আসবেই। সময়ের সাথে সখ্যতা তার জন্ম-জন্মান্তরের। গলাগলি করে সময়কে পাশে নিয়ে ঠিকঠিক টিকটক টিকটক করে এসে যায়। বলে থামো। এবার তোমার বিরতি।
না চাইলেও যা অস্বীকার করা যায় না বা উপেক্ষা করা যায় না। তাকে ত সাদরে গ্রহণ করতেই হবে। হবে ভালোবাসতে। কঠিন রাস্তা জেনেও টিকে থাকার লড়াই করতে হবে। কারণ সংক্ষিপ্ত জীবনপরিক্রমায় সফল সেইজন যে প্রতিকূলতাকে জয় করতে পেরেছে। মনকে কষ্টের জায়গা থেকে সরিয়ে নিতে পেরেছে। সময় ও বিরতির পথ মেনে নিয়ে চলতে শিখলে অনেক কিছুই সহজতর হয়ে ওঠে।
মানুষ সৃষ্টি থেকেই ভাবুক, কেউ কম কেউ বেশি। কেউ অর্থপূর্ণ ভাবনায় দিন কাটায় কেউ বা কিছু না ভেবেই। দিন তার আপন গতিতে বহমান থাকে। এই যে পথচলার দৌড় এখানে কেউ সুখের খোঁজে কষ্ট কিনে কেউ বা কষ্টের মাঝে সুখ খুঁজে। খোঁজার এক নেশায় আমরা সবাই মগ্ন থাকি অনিমেশ। বছর ঘুরে বছর আসে, আসে প্রকৃতির পরিবর্তন আসে মনের আকাশে রঙের খেলা। কতকি করার ইচ্ছে শুধু ইচ্ছেতেই ঘুরপাক খায়, কিছু বলার থাকে বলা হয় না। কিছু পাওয়ার আকাক্সক্ষা শুধু ই গুমরে ফিরে।
কিছু সময় আর ফিরে পাওয়া হয় না। বেঁচে থাকার আলাদা এক আনন্দ আছে। সেই আনন্দ নিয়ে এক অজানাকে পাওয়ার দৃঢ়তা নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়া হয় সত্যি কিন্তু সবাই কি পারে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
স্বপ্ন বা কল্পনা যাই বলি না কেন এটিই একটা মানুষ কে সজাগ রাখে। একটা আত্মার খোরাক জোগায়। যে যত বেশি স্বপ্নময় সে তত বেশি আবেগী। আবেগ কখনো হাসি কখনো কান্না হয়ে ধরা দেয়। তবুও স্বপ্ন দেখা কেউ বন্ধ করে না। এ কারণেই রহস্যময় হয়ে উঠা বিরতির পথ কখনো শেষ হয় না। নতুন হয়ে দেখা দেয়। নতুন অবয়বে আসে।
দীর্ঘশ্বাসের বলয়ে জীবনকে মেনে নিতে শেখায়। বলে বিরতি তবে।


আরো সংবাদ



premium cement