২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঋতুরাজ বসন্ত

ঋতুরাজ বসন্ত -

শীতের উত্তরে বায়ুপ্রবাহের পর দখিনা হাওয়া আর স্বস্তিকর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া সঙ্গে নিয়ে আগমন ঘটে বসন্তকালের। যদিও বসন্তের বাতাস স্থির থাকতে চায় না- তার মধ্যে কাজ করে দুরন্তপনা! আসলে বসন্তের বাতাস হলো আউলা বাতাস।
বাংলাদেশের ঋতুচক্রে বসন্তকালই সম্ভবত সবচেয়ে স্বল্পকালীন। বর্ষপঞ্জির পাতায় বসন্তকে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের অধীনে রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ঋতুর স্থায়িত্বকাল এক বা অর্ধ মাসের বেশি নয়। তবে ক্ষণকালের এই পটপরিবর্তনই প্রকৃতিতে এনে দেয় স্নিগ্ধতা ও সজীবতার এক নতুন মাত্রা।
বসন্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। শীতের নির্জীব প্রকৃতি যেন সহসা প্রাণ পায়। পাতাশূন্য গাছগুলো সুশোভিত হয় নতুন পত্রপুষ্পে। ফুলের গাছগুলোতে শোভা পায় রঙবেরঙের বিচিত্র সব ফুল। গোলাপ, শিমুল, অশোক, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিমতায় সেজে ওঠে পুষ্পকানন। আমগাছে মুকুল আসে। সবুজের সমারোহে ভরে যায় মাঠ-দিগন্ত। মৃদু বাতাসে দুলে ওঠা ধানের শীষগুলো কৃষকের মনেও দোলা দিয়ে যায়।
বসন্তের মনকাড়া প্রকৃতি- পুষ্পপল্লবে ভরা গাছগাছালি কোকিলের সুমধুর কণ্ঠে যেন জোয়ার এনে দেয়। কুহু তানের সুরলহরিতে সে মাতিয়ে রাখে সারা পাড়া। বৃক্ষ থেকে বৃক্ষে- এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে উড়ে গেয়ে বেড়ায় সুখের গান। ভ্রমরের গুঞ্জন-পাপিয়ার পিউ পিউ ডাক যেন কোকিলের কুহুতানে একাত্ম হয়ে মুখরিত করে তোলে চার পাশ। আম বাগানে-তরুলতা বনে পাখির কলরবে সৃজিত হয় ‘মন কেমন করা’ সুরের মূর্ছনা।
বস্তুত গ্রীষ্মকালের ফলফলাদির জমজমাট বাজারের প্রস্তুতি পর্ব হলো বসন্তকাল। এই সময়ে গজিয়ে ওঠা মুকুলই গ্রীষ্মকালে এসে পরিপূর্ণ ও পক্ব ফল হয়ে আমাদের হাতে আসে। তাই বসন্তে খুব বেশি ফলের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ আমাদের হয়ে ওঠে না। ফুটি, তরমুজ, খরমুজ, ডাব ইত্যাদি এই ঋতুর প্রধান ফল।
বসন্তকালে পরিবেশ থাকে স্বস্তিকর ও আনন্দদায়ক। প্রচণ্ড গরমে হাঁপিয়ে উঠতে হয় না আবার ঠাণ্ডার তীব্রতায় লেপ-কাঁথা মুড়ি দিতে হয় না। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়া যায় খোলা আকাশের নিচে। রাত নামলে তারার মেলা বসে। ঝলমল করে জ্বলতে থাকে আকাশের বুকে। দলে দলে জোনাকি বের হয়- যেন শত শত প্রদীপ্ত মশাল। আকাশের স্থির তারকারাজি আর জোনাকির রঙিন মশাল এক মুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করে! মনোরম এই প্রকৃতির কারণে বসন্তকালকে ‘ঋতুরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
বসন্তের নির্ধারিত সময়কাল শেষ হওয়ার আগেই দেখা দেয় গ্রীষ্মের পূর্বাভাস। প্রকৃতিতে হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ চোখে পড়ে। বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে- যা কখনো কখনো রূপ নেয় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিতে। এভাবেই গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা শুনিয়ে বিদায় নিতে থাকে প্রকৃতির উজ্জীবনকাল- ঋতুরাজ বসন্ত।

 


আরো সংবাদ



premium cement