আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নেপথ্য কথা
- দিল আফরোজ রিমা
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আমরা বাঙালি। আমাদের ভাষা বাংলা। এই বাংলাদেশ আর বাংলা ভাষা আমাদের দরদি প্রাণের ভালোবাসার সম্পদ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণের এই মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মহুতি দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই নতুন করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার বিশ্বজনীন স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিভাগের ইউনেস্কো ফ্রান্সের রাজধানী প্যরিসে বাঙালির অমর একুশে ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দিনটি পুরো বাঙালি জাতির জীবনে একটি ঐতিহাসিক গৌরবমণ্ডিত ও আন্দঘন দিন।
ইউনেস্কোর ৩০তম দ্বীবার্ষিক সম্মেলনে পৃথিবীর ১৮৮টি বহুভাষিক বহুজাতিক সদস্যদেশ সর্বসম্মতভাবে বাঙালির প্রিয় মাতৃভাষাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। এর সাথে পৃথিবীর ছোট-বড় প্রত্যেকটি মাতৃভাষার প্রতিও স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে। পৃথিবীর প্রায় চার হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার ও বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার বিশ্ব সমাজের পদর্শিত এই বিরল স্বীকৃতি ও সম্মান অতুলনীয়।
ইউনেস্কোর সদর দফতর প্যারিসে দ্বিবার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়- ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ এবং সেদিন যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি প্রেস করার আগে ইউনেস্কোর ২৮টি সদস্যরাষ্ট্র এ প্রস্তাব অনুমোদন ও সমর্থন করে। পাকিস্তানও এই ২৮টি রাষ্ট্রের মধ্যে এই প্রস্তাবের অন্যতম সমর্থক ছিল।
একুশে ফেব্র“য়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের এই স্মরণীয় ঘটনায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিওর, আওয়ালসহ আমি সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয় ১৯১৩ সালে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। যিনি বাংলা ভাষাকে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মানে ও আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলা ভাষায় প্রথম ভাষণ দিয়ে সদ্যস্বাধীন বাঙালি জাতির রাষ্ট্রভাষাকে বিশ্ববাসীর কাছে মর্যাদার সাথে উপস্থাপন করেছিলেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ অনেককে শ্রদ্ধা জানাই যারা অকুতোভয়ে বাংলা ভাষার গৌরবের কথা উচ্চারণ করেছেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবষ হিসেবে একুশে ফেব্র“য়ারিকে ঘোষণার জন্য যারা প্রথম ভূমিকা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা হলেন- কানাডা প্রবাসী পৃথিবীর মাতৃভাষাপ্রেমিক গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-ভাষী ১০ জন সদস্য। তাদের মধ্যে রয়েছেন দু’জন ফিলিপেনো, দু’জন ইংরেজি ভাষী, একজন ক্যন্তনিজ ভাষী, একজন জার্মান, একজন হিন্দি ও দু’জন বাংলাভাষী বরেন্দ্র ভাষাপ্রেমিক ব্যক্তি। অত্যন্ত বিস্ময়ের কথা- যে দু’জন বাঙালি প্রস্তাবক তাদের একজনের নাম রফিক, আরেকজনের নাম সালাম। যেন স্বপ্নের মতো বাংলার সেই সালাম ও রফিক আবার বুকের রক্ত দিয়ে বিশ্বসভায় বাংলা ভাষাকে গৌরবের বেদিতে বসিয়ে দিয়ে গেলেন। ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ তারা জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব কফি আনানকে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের যৌক্তিকতা দেখান। এই দিবস হিসেবে একুশে ফেব্র“য়ারিকে স্বীকৃতি প্রদান ও বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দেন। জাতিসঙ্ঘ থেকে জানানো হয়- কোনো বিশেষ গোষ্ঠী থেকে নয় বরং বাংলাভাষী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা সমীচীন। জাতিসঙ্ঘ অবশ্য এ ধরনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতার প্রশংসা করে।
মাতৃভাষাপ্রেমিক গ্র“পের পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলাম ২৩ জুন ১৯৯৯ বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনকে পত্র লিখেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশন তা সাদরে গ্রহণ করে। প্রস্তাবটি ইউনেস্কো দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে যথাসময়ে উপস্থাপন ও প্রেরণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবটি ইউনেস্কো সম্মেলনে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ২৮ অক্টোরর ১৯৯৯, একুশে ফেব্র“য়ারিকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সদর দফতরে পৌঁছে যায়। তারপর দীর্ঘ প্রক্রিয়া- বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বের নানা জাতির , নানা দেশের মধ্যে মতবিনিময় ও সর্বসম্মত যৌক্তিক সমর্থনে বাংলাদেশ ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে এই গৌরব অর্জন করে।
এই একুশে ফেব্র“য়ারি শুধু বাঙালির স্মরণীয় বরণীয় দিন নয়। এ দিন বিশ্বের সব তথা সব ভাষীর শ্রদ্ধা ও অর্ঘে বিভূষিত একটি দিন।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক করণীয় রয়েছে। বাংলা ভাষার প্রচলন ও ব্যবহার, বাংলা ভাষায় আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা আমরা এখনো আকাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে পারিনি। বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের জাতীয় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে বাংলার প্রয়োগকে আরো সমুন্নত করতে হবে।
বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বিশ্বের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর আপন আপন মাতৃভাষাকে সম্মান জানানো। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার ও বিকাশকে সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান।
আজ থেকে এক হাজার ২৫৪ বছর আগে প্রথম বাংলা ভাষার চর্যাপদ রচিত হয়েছিল। বহু বছর ধরে বহু কবির লিখনীর পথপরিক্রমা পার হয়ে আজকের এই সহজ সরল বাংলা ভাষা। এই ভাষা এখন স্বধীন। এই ভাষা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানের ভাষা বাংলা। আমাদের শিক্ষার মাধ্যম এখন বাংলা। আমরা আমাদের মাতৃভাষার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখব ইনশা আল্লাহ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা