২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভালোবাসার রকমফের

ভালোবাসার রকমফের -

আবহাওয়াটা চমৎকার হাল্কা শীতের ছাট আবার একটু একটু গরম, ভোরে কুয়াশার আগমনও ঘটে আবার বিকেলের রোদটাও উপভোগ করার মতো। কেমন একটা ঝিরিঝিরি আমেজ প্রকৃতির মাঝে। শহুরে ইট-কাঠের ঠাসাঠাসি ভেদ করেও মাঝে মাঝে কোকিলের ডাক শোনা যায়। এমন মিষ্টি সকালে পাখির কিচিরমিচির না শুনে খুকির চেঁচামিচিতে ঘুম ভাঙল রোহানের।
ভাইয়া বাবার চশমাটা ভেঙে গেছে ঠিক করাতে হবে। রোহান ভীষণ বিরক্ত মুখে বলল- আমি পারব না, আজ অনেক কাজ আছে। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হবে। বাবার কানে কথাটা পৌঁছাল, চুপচাপ বসে আছেন। রিমা ও ঘর থেকে মাকে গিয়ে চশমা ফেরত দিতে দিতে বলল, তুমি জানো ভাইয়া এসব পছন্দ করে না, তবুও আমাকে দিয়ে বলাইলা।
আজ একটি বিশেষ দিন। এই দিনটি কিছুতেই রোহান ফালতু কোনো কাজে নষ্ট করতে পারবে না। টিএসসির সামনে যাবে প্রিয়তীর সাথে ঘুরবে ফুচকা খাবে আর সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করবে। প্রিয়তী রোহানের জন্য আজ শাড়ি পরে আসবে, না জানি কতটা সুন্দর লাগবে! এসব ভেবেই রোহানের পুলকিত হচ্ছে মন।
অফিসে কোনোরকমে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে পড়ল রোহান। অনেক রকম ফুল কিনল প্রিয়তীর জন্য। সাথে খোঁপার মালাও। কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাচ্ছে প্রিয়তী আসছে না।
রোহান মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিচ্ছে রিসিভও করছে না, প্রথমে রোহান ভাবল ও তো বলেছিল শাড়ি পরতে অনেক সময় লাগে আর সাজগোছ করবে হয়তো এ জন্য ব্যস্ত। টানা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বিরক্ত হয়ে রোহান প্রিয়তীর বাসার দিকে রওনা দিলো।
টেক্সট করে রাখল- আমি তোমার বাসার নিচে আসছি।
প্রিয়তী বের হয়ে এলো বাসা থেকে-
কি ব্যাপার তুমি কি করতেছ? প্রিয়তী ফিসফিস করে বলল, আস্তে কথা বলো, বাবার গেস্ট আছে বাসায়। উনারা এসছেন অনেক দিন পর তাই আজ ব্যস্ত ছিলাম ফোন ধরতে পারিনি, কাল দেখা করব তো সমস্যা কী? এত ফোন দাও কেন? রাগে দুঃখে রোহানের মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেছে ও চেঁচিয়ে উঠল এটা কোনো গুরত্বপূর্ণ কাজ হলো? তুমি জানো না আজ ভালোবাসা দিবস? প্রিয়তী শান্তস্বরে জবাব দিলো- হ্যাঁ, জানি তাই আমার বাবাকে খুশি করার জন্য বাড়িতে বাবার সাথে থাকব, আমি বাবাকে প্রচুর ভালোবাসি। এখন যাও পরে কথা হবে।
রোহান খিটখিটে মেজাজে হনহন করে বেরিয়ে সোজা বাসার দিকে রওনা দিলো আর ভাবছে- প্রিয়তী কি ওকে অবহেলা করছে? এটা এমন কী কারণ যে আজকের দিনটা নষ্ট করে দিলো? বাবার সাথে বসন্ত উদযাপন? হাস্যকর বিষয়টা! এ মেয়ের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
বাসার গেটে এসে দেখে বাড়িতে অনেক ভিড়, হইচই সবাইকে ঠেলে ভেতরে এসে যা অবলোকন করল তার জন্য রোহান একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। ওর বাবাকে সামনে নিয়ে বসে আছে সবাই।
বাবা ঘর থেকে উঠোনে বেরোতে গিয়ে পিলারে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে, প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে পা থেকে আর উঠতে পারছেন না। সবাই বলছে চশমা ছাড়া কেন বের হলেন তিনি?
রোহানকে দেখে মা চিৎকার দিয়ে বলছেন, তুই চশমাটা ঠিক করে দিলে এমন হতো না রোহান।
বাবা অস্পষ্ট চোখে ফ্যালফ্যাল করে শুধু রোহানের দিকে তাকিয়ে আছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement