ফেলনা জিনিসে ছবি আঁকেন নদী
- শফিকুর রহমান
- ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সুপারির খোল, ম্যাচ বক্স, গাছের পাতা নেহায়েতই ফেলনা জিনিস। ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয়। আর এই ফেলনা জিনিসে সুন্দর সব ছবি আঁকেন নুসরাত জাহান নদী। সে সব ছবি ভালো বিক্রি হয়। হাত খরচের টাকা আসে। নদী এবার ফেনী থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। বাবা-মা, দুই বোন এক ভাই নিয়ে তার পরিবার। থাকেন ফেনীতে। পড়াশোনা আর আঁকাআঁকি করছেন তিনি সমানতালে। দুই ক্ষেত্রে তার সফলতার গল্প জানাচ্ছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
ছোটবেলা থেকেই তার আঁকাআঁকির শখ। কিছু একটা পেলেই তাতে পেন্সিলের ছোঁয়া লাগাতেন। ভিন্ন কিছু করতে চাইতেন। প্রথম রঙ তুলি হাতে নেন এসএসসি পাসের পর। তার আগ পর্যন্ত পেন্সিলে স্কেচ করতেন। তাও পরিচিত দেখলে প্রশংসা করতেন। সুন্দর তো, এমন মতামত শুনতেন। আর দশজন যা করে তা নয়। ভিন্ন কিছু করতে চাইতেন। সে কারণেই নদী আঁকাআঁকির মাধ্যম ভিন্ন। সুপারির খোল, দেয়াশলাই, গাছের পাতায় ছবি আঁকেন, পেপার ইত্যাদিতে ক্যালিগ্রাফি করেন। ক্যানভাস করেছেন একটি।
দেয়াশলাই বাক্স। খুব ছোট, তেমন শক্তও না। এর উপর অসংখ্য নজরকাড়া সব ছবি তার। কিভাবে সম্ভব? দেয়াশলাই বাক্সের ভেতরে সাদা বাক্স থাকে। যেখানে কাঠিগুলো থাকে। সেখানটাতেই নদী ছবি আঁকেন। কাগজেই আঁকা তো, কে কারণে রঙ উঠে না। টিকে ও অনেকদিন। এত কিছু থাকলে ছবি আঁকার মাধ্যম ম্যাচ বক্স কেন? জানতে চাইলে নদী বললেন, ‘আমি সবসময় অন্যরকম কিছু খুঁজি যেখানে ছবি এঁকে তাকে আরো সুন্দর একটা রূপ দেয়া যায়। বাসায় দেয়াশলাই বাক্সের ব্যবহার হয়। মাথায় এলো এগুলোতেও ছবি আঁকা যায়। তখন অনেকগুলো বাক্স জমিয়ে সেগুলোতে ছবি এঁকেছিলাম। আমার সেই কাজটা মানুষ অনেক পছন্দ করেছিল। এখনো দেয়াশলাই বাক্সে ছবি আঁকছি।’ ফেসবুকে ম্যাচ বক্সে আঁকা ছবি পোস্ট দেন ২০১৯ সালে। তুমুল সাড়া পড়ে তখন। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ছবিটি পছন্দ করে। শতাধিক মানুষ মতামত দেয়।
সুপারি পাতার খোল। নেহায়েতই ফেলনা জিনিস। ছবি আঁকার মাধ্যম হিসেবে নদী এটাও বেছে নিয়েছেন। খোল কেটে শেপ করে প্লেট বানান। সেখানে ছবি আঁকেন। নদী জানালেন, ভাঙা, পানিতে ভেজা, ছিড়ে না গেলে টিকে থাকে অনেকদিন এই শিল্পকর্ম।
সুপারি পাতার খোলে আঁকা ছবি মানুষ পছন্দ করেছে। দেশ-বিদেশে অসংখ্য মানুষ তার থেকে ছবি নিয়েছে। মানুষের বাসায় দেয়ালে তার ছবি শোভা বাড়াচ্ছে। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে মানুষ এ সব নেয়। দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে। মূলত গাছপালা, ফুল, পাখি, সূর্যাস্ত, প্রকৃতির ছবি তিনি বেশি আঁকেন বলেও জানান।
প্রায় সবই ফেলনা জিনিস। স্থায়িত্ব কেমন? রঙ উঠে যায় নাকি? আমার সব পেইন্টিংই এক্রেলিক রঙে করা। যা সহজে নষ্ট হয়ে যাবে না। ঠিকমতো যতœ করে রাখলে বছরের পর বছর একটি পেইন্টিং ভালো থাকে। সুপারির খোল বা দেয়াশলাই বাক্সের মধ্যেও আমি এক্রেলিক দিয়ে রঙ করি। আর সেটা অনেক দিন থাকবে। বললেন নদী।
শখের বসে তিনি গাছের পাতার উপর ক্যালিগ্রাফি করেছেন। পাতার উপর ক্যালিগ্রাফি রেখে দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি আরো পরীক্ষা -নিরীক্ষা করছেন বলে জানান। যেন বেশি দিন পাতায় শিল্পকর্ম অক্ষত থাকে। থ্রিডি আর্টও করেছেন তিনি। মাছ, প্রজাপতি, মাকড়সা ইত্যাদির থ্রিডি ছবি এঁকেছেন।
পড়াশোনা আর আঁকাআঁকি চলছে সমানতালে। সমস্যা হয় না? নদী বললেন, ‘গুছিয়ে কাজ করলে সমস্যা হবে কেন। পড়াশোনার ফাঁকে অবসরে এসব করি। আমার পরিবার সমর্থন দেয়। অলস সময় কতজনই না কতভাবে কাটায়। তারা এসব সৃজনশীল কাজ করতে পারে।’
কলেজের গণ্ডি পার হননি। এর মধ্যে নিজে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। টুকটাক আয়ও হচ্ছে। অর্জনও কম নয়। অবশ্য ফেসবুকে পেজ খোলা। অন্যান্য কাজে শুরুর দিকে বেশ জড়তা ছিল নদীর। শোনা যাক সে কথা তার মুখে, ‘অনেক আগে থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল এই ছবি আঁকা নিয়ে কিছু করার। অন্যদের কাছে দেখেও সেই ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়। কিন্তু অনেক জড়তার কারণে আর এগোনোর সাহস পাইনি। আমি নিজেও অনেক সঙ্কোচের মধ্যে ছিলাম। পরে কয়েক মাস আগে ঠিক করলাম পেজ চালু করব। অনেকেই করছে তো, সে ক্ষেত্রে আমিও চেষ্টা করে দেখতেই পারি। এটা ভেবেই সব লজ্জা, সঙ্কোচ দূর করে পেজ চালু করলাম। সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু। ফেসবুকে নদীর পেজের নাম ঘঁংৎধঞ'ংথঅৎঞথইড়ড়ক । যাদের তার ছবি পছন্দ হয়। এই পেজে অর্ডার দিতে পারে। দেখতে পারে তার আঁকাআঁকি। আবার তার ফেসবুক আইডি ইনবক্সে অর্ডার দেয়া যায়। সুপারি পাতার খোলে পেইন্টিং। সেখান থেকে প্রথম আয় করেন নদী। পরবর্তীতে সেই টাকা আর্টের পেছনে ব্যয় করেন। এরই মধ্যে ২০২০ সালে ঋঅজঝঝ কধহপযবষ অৎঃ ঝঁসসরঃ থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন। বিভিন্ন মানুষ নদীর আর্ট সম্পর্কে জানতে চায়। আমি তাদের বুঝিয়ে বলি। যতদূর সম্ভব উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করি। বললেন নদী।
ব্যতিক্রমী মাধ্যম। আঁকতে অনেক শ্রম দিতে হয়। ছবির দাম বুঝি অনেক। নদী বললেন, একেক ছবির দাম একেক রকম হয়। ছবির উপর দাম নির্ভর করে। কোন ছবিতে কি রকম শ্রম দিতে হয়েছে, কতটা সময় লেগেছে; ছবির সাইজ কেমন, দামটা নির্ধারণে এসব ভূমিকা রাখে। ক্যানভাসের ক্ষেত্রে এক রকম দাম হয় আবার গ্লাস ফ্রেমের আরেক রকম। শত থেকে হাজার পর্যন্ত একটি ছবির দাম হতে পারে। তবে আঁকাআঁকি থেকে যা হয় তাতে নদী সন্তুষ্ট বলে জানালেন। অল্প ক’দিনে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি আর্টকে নিয়ে এসেছি বেশি দিন হয়নি। তবে এরই মধ্যে ভালো সাড়া পাচ্ছি। নদীর মুখে কথাগুলো জানা গেল।
শুধু ছবি আঁকা নয়। ক্যালিগ্রাফি করেও নদী বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেন। ক্যালিগ্রাফি যে শুধু আরবি হয় এমন নয়। নদী বললেন, ক্যালিগ্রাফির প্রতি আমার একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করেছিলে। প্রথম প্রথম করতে একটু কষ্ট হয়ে যেত। পরে নিজে নিজে করতে করতে একটু শিখেছি। বিভিন্ন রকমের ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইন করে তাতে একেক সূরার ক্যালিগ্রাফি করি।
যারা আর্ট করতে চায়। এই লাইনে নতুন। তাদের জন্য নদীর পরামর্শ হলো- সব ভয়, সঙ্কোচ দূরে ঠেলে দিতে হবে। যে যাই বলুক, নিজের মতো এগিয়ে যেতে হবে। কাজে মনোযোগী হতে হবে। ভালোবেসে কাজ করলে সফলতা আসতে সময় লাগবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা