২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জীবনের বাঁকে বাঁকে

-

খালামনির বাসার ছাদে সবাই বারবিকিউ করছে। ওয়াটসঅ্যাপের ফ্যামিলি গ্রুপে এ নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছিল ক’দিন ধরে। জনপ্রতি কত করে পড়বে, নান রুটি কেনা হবে না ফ্রোজেন পরোটা, অনলাইনে অর্ডার দেয়া হবে নাকি কেউ একজন বাজারে যাবে; এসব নিয়ে তুমুল বাতচিত করেছে সব ভাইবোন। আমি আর কি করব, ওদের কথার ফাঁকফোকর দিয়ে অল্প মজা করেছি। বিদেশ বিভূই বসে এর চেয়ে বেশি আর কি-ই বা করতে পারি!
এখন যখন সবাই গ্রুপে ছবি দিচ্ছে, তখন আমাদের এখানে মাত্র সূর্য ডুবল। হাতের কাজ সব সেরে আমি আয়েশ করে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবার ছবি দেখছি। মাকনুনের হিজাবটা সুন্দর। মেয়েটাকে হিজাব পরলে একদম রসগোল্লার মতো মিষ্টি লাগে! আর আম্মু আমার পছন্দের লাল থ্রিপিসটা গায়ে দেয়ায় তার বয়স যেন কমে গেছে! ছবিতে খালামনি আর ভাবীকে খুঁজে পাইনি। পরে জানলাম বউ-শাশুড়িতে মিলে নাকি পরোটা ভাজছিল। এক ছবিতে মামী আর নানু সাঙ্ঘাতিক হাসাহাসি করছে। অত হাসতে হাসতে গলে যাওয়ার কি হয়েছে জানতে বড় মনে চায়!
এত শত ছবির মধ্যে একটি ছবি দেখে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠল! আমার নানুভাই মাথায় একটি শীতটুপি দিয়ে ছাদে বসে পরোটা আর মাংস খাচ্ছে। সহজ সরল ছবি। বিশেষ ভালো রেজুলেশন নেই, ফোকাসও অত মানের না। আর ছবিতে নাই কোনো ভনিতা বা কোনো প্রকার নাটকীয়তা। তারপরও গাঢ় এক ধরনের মায়া আছে ছবিটায়। আমি অনেক সময় নিয়ে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নানুভাই এমন একজন মানুষ যার সাথে আমার এক সরিষার দানা সমান খারাপ অভিজ্ঞতা নেই। এই মানুষটার হাত ধরে আমি স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি গেছি। মিরপুর-১-এর কাঁচাবাজারে গিয়ে খেজুরের গুড় কিনেছি। মেকানিকের দোকানে গিয়ে টর্চলাইট আর টিভির রিমোট ঠিক করিয়েছি। ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। বড়শি দিয়ে তেলাপিয়া মাছ ধরেছি। বসার ঘরে টিউবলাইট লাগিয়েছি। একটি ফাটাফাটি ভালো গাড়ি সব মিলিয়ে যত কিলোমিটার দাপিয়ে বেড়াতে পারে তার চেয়েও বেশি ঘুরেছি আমি নানুভাইয়ের সাথে। অথচ মানুষটার কত বয়স হয়ে গেল! আগের মতো অত দ্রুত হাঁটতে পারে না। একটা চোখে দেখে না। চামড়ায় ভাঁজ পড়ে একাকার!
ইন্টারনেটের সময়ে ভিন দেশে বসে সবার সাথে যোগাযোগ করা সহজ। তারপরও, হুট করে নানুকে মজা করে ভয় দেখাতে পারি না। ছোট ভাইগুলোর সাথে বসে গল্প করতে পারি না। চাইলেই দৌড়ে গিয়ে আমার খালামনির রান্না খেতে পারি না। আর আমার ভালোবাসার নানুভাইয়ের পাশে বসে তার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো শুনতে পারি না!
জুয়াইরিয়া জাহরা হক
গাজিয়ান্তেপ, তুরস্ক

 


আরো সংবাদ



premium cement