কুয়াশায় জড়ানো চাঁদ
- হুসাইন আহমদ
- ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
রাতের আকাশ জ্যোৎস্নার মিষ্টি আলোয় ঝলমলে আর নিকষ কালোয় ঢাকা থাকে এটাই জেনেছি। যে জ্যোৎস্নার আলো নিয়ে তৈরি হয়েছে কত শত গল্প-কাহিনী, কবিতা-সাহিত্য ও প্রেম-ভালোবাসার রচনা। যা আমরা শুনেছি ও কোথাও পড়েছি। আবার ইচ্ছায় অনিচ্ছায় জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়েছি। চাঁদনী রাতের ঝলমলে আলোয় কখনো বা পথ চলেছি। কিন্তু কখনো হয়তো এই অপূর্ব মন মাতানো জ্যোৎস্নার রূপটা গভীরভাবে দেখিনি। শুধু রাতের আকাশকে নিছক অন্ধকার ও রাত্রিবেলা বলেই ভেবেছি। আর এই শীতকালে রাতের জ্যোৎস্না? সে তো ভাবি কুয়াশাচ্ছন্ন ঝাপসা আলোয় অমাবস্যার চাঁদ দেখার মতো। এই কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে আবার চাঁদ দেখা যায় নাকি? যে জ্যোৎস্না দেখা যাবে...! আর রাত মানেই তো চারদিকে নেমে আসা শুধুই স্তব্ধতা। যদি সেটা হয় শীতের রাত তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু এই সময়েও যে রাতের পৃথিবীতে সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যময় সমারোহ ঘটতে পারে তা কখনো আমার জানা ছিল না। জানা হলো এই তো সেদিন রাতে! হঠাৎ করে সেদিন রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। আরামের বিছানাটাকেও অসহ্যই লাগছিল। তাই বিছানা ছেড়ে কামরার সামনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। চার পাশের নীরব নিস্তব্ধতায় আকাশে চন্দ্রোলোকিত রাতের শোভা দেখছিলাম মুগ্ধ নয়নে। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে ইট পাথরের এই শহরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন মাদকতা কখন অনুভব করিনি। যদিও আকাশ আমার খুব প্রিয় কিন্তু কখনো রাতের কালো আকাশ এভাবে কখনো আমার দেখা হয়নি। দেখা হয়নি রাতের আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘেদেরও। রাতের আকাশের ঝলমল করা হাজারো তারা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়। তাই সাধারণত তারার আলোর ভিড়ে কখনো জ্যোৎস্নার ওই মোহনীয় রূপটাকে দেখা হয় না। কিন্তু সেই রাতে জ্যোৎস্নার মায়াবী রূপ-মাধুরী নিজ চোখে অবলোকন করার সৌভাগ্য আমার হয়। সে এক অপরূপ রাত, রূপময় জ্যোৎস্না রাত। সে যেন এক স্বপ্নের রঙিন রাত। আগেই বলেছি সময়টা শীতকাল।
তাই চাদরটা জড়িয়ে সেখানে গিয়ে চাঁদের দিকে তাকাতেই চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় অভিভূত আমি। চার পাশে আলো না থাকায় চাঁদের এমন আলো দেখে মনে হলো, স্বচ্ছ রূপালী ঝর্ণার মতো, যেন চাঁদের আলো চার পাশ ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
আকাশে মেঘগুলো ছুটে বেড়াচ্ছিল। আর কুয়াশার চাদর ভেদ করে মিষ্টি আলোর বন্যা ছড়াচ্ছিল রূপময় চাঁদটি। চাঁদ যতই উপরে উঠছিল ততই বাড়ছিল তার উজ্জ্বলতা। বাড়ছিল সেই মায়াবী রাতের অপরূপ সৌন্দর্য। কিন্তু চাঁদের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্যের সাথে সাথে শীতের তীব্রতাও বাড়ছিল। তবুও এমন মায়াবী একখানা চাঁদ রেখে কি কামরায় আসতে মন চায়? চায় না। কেননা, বারান্দার এই ছাদের মতো খোলা জায়গায় আকাশের নিচে জ্যোৎস্নার সৌন্দর্যের যে এমন সমারোহ ঘটতে পারে তা কখনো আমার কল্পনায় ছিল না। আগে কখনো রাতের বেলায় শহরের ইট পাথরের এই ভবনের বারান্দার খোলা জায়গা বা ছাদে এমন অনুভূতি নিয়ে হাঁটিনি, অবস্থান করিনি। তাই এমন অপূর্ব অনুভূতি কখনো মনে আগে জাগেনি। যদিও আগে কখনো চিরচেনা এই জায়গায় দিনরাতের কোনো অংশে এমন নিরব নিঝুম পরিবেশ পাওয়া যায়নি। সব সময় গাড়ি ঘোড়া ও মানুষের চলাচল ও আনাগোনা থাকেই। কিন্তু আজকে বাইরের চারদিকটা নীরব, নিস্তব্ধ আর নিঝুম। সব পাখপাখালি তাদের নীড়ে ঘুমাচ্ছে শীতে। মাঝে মাঝে কনকনে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। যেন সম্পূর্ণ প্রকৃতি শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে এই জগতসংসার থেকে। খুব করে মনে হচ্ছিল আমার সাথে শুধু বুঝি জেগে আছে ওই বিশাল আকাশের উজ্জ্বল চাঁদটি আর তার সাথিরা। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় সবকিছুকে কেমন যেন মায়াবী দেখাচ্ছিল। এত অপরূপ, এত মায়াবী, এত সুন্দর জ্যোৎস্না দেখে ইচ্ছে করছিল এখানেই সারারাত থেকে যাই। এখানেই এই অপরূপ সৌন্দর্যের সবটুকু সময় অবলোকন করি। আজ বুঝতে পারলাম যুগে যুগে কবি সাহিত্যকরা কেন জ্যোৎস্নার প্রতি এত আবেগপূর্ণ ছিল। কেন তারা তাদের কবিতা, উপন্যাস ও রচনায় জ্যোৎস্না রাতের বর্ণনা দিয়েছেন। কেন তারা তার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেয়েছিল।
আজকে আমিও তো তার রূপ সৌন্দর্যে অভিভূত, মুগ্ধ। সম্পূর্ণ পরিবেশটা আমাকে অনেক আবেগপ্রবণ করে তুলছে। জোনাকি পোকার আলো আর প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এদিকে অনেক সময় কেটে গেছে। সকালবেলা দরসের চাপ আছে। মন চাচ্ছিল না বারান্দার ছাদের মতো এই খোলা জায়গা থেকে কামরায় চলে আসতে। তবুও কামরায় চলে এলাম। আর মনে মনে ইচ্ছে করলাম ও অপেক্ষায় রইলাম আজকের মতো আরেকটি জ্যোৎস্না রাত দেখার ও উপভোগ করার।
অতএব, আকাশের উজ্জ্বল আলোময় কুয়াশার চাদরে আবৃত চাঁদ, চার পাশে তারই প্রভাবে অপূর্ব সৌন্দর্যময় পৃথিবী এবং মনমাতানো ফুলের সুরভির সাথে জোনাকি পোকার খেলা আপ্লুত করে তোলা। যেই অপূর্ব দৃশ্যের কারণে কবি ও শিল্পীদের কবিতা, গান লেখা ও আরো...। আল্লাহ তায়ালা এমন আলো ঝলমল জ্যোৎস্না রাতকে দেখার, উপভোগ করার ও অভিভূত হওয়ার ও সর্বোপরি শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা