২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মুখোশের আড়ালে

মুখোশের আড়ালে -

রফিক সাহেব ভাবনায় পড়ে গেলেন। তিন মাস ধরে এই কেসটির দায়িত্ব পড়েছে। অথচ আজ অবধি কোনো ক্লু খুঁজে বের করতে পারলেন না। তবে কি এই কেস রহস্যই থেকে যাবে? রোজ বেওয়ারিশ পথিক আর টঙ দোকানের চায়ের কাপে আড্ডায় চলবে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা? রফিক সাহেব পুলিশ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন ১৭ বছর ধরে। একজন সৎ ও দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার বলতে যা বোঝায় তা সব কিছুর ছাপ রয়েছে চাকরি জীবনে। জীবনে বহু কেসের ফাইল তার টেবিলে এসেছে। আসামি যতই দুর্ধর্ষ আর ভয়ঙ্কর হোক না কেন। রফিক সাহেবের স্বচ্ছ চোখ ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই তো কয়েক মাস আগেও পত্রিকায় ফলাও করে নিউজ ছাপানো হয়েছে।
সৎ মেধাবী ও চৌকস অফিসার হিসেবে এ বছর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছেন রফিক সাহেব। অফিসের টেবিলে মাথা গুঁজে কি যেন ভাবছিলেন!
হঠাৎ করে রুমে একটি মেয়ে ঢুকে বলল, আমাকে বাঁচান স্যার। আমাকে আমার স্বামী মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। ঘরে বন্দী করে রেখেছিল। অনেক কষ্ট করে আমি বাইরে এসেছি। রফিক সাহেব কিছুতে ভেবে পাচ্ছেন না। অফিস রুমের বাইরে ডিউটিরত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এই মেয়ে অফিস রুমে এলো? মেয়েটির মুখের দিকে তাকাতেই রফিক সাহেবের বুকে ধক করে উঠল। বাস্তব নাকি কল্পনায় এসব দেখছেন? এই মেয়েকে তো আজ থেকে তিন মাস আগে রফিক সাহেব নিজ হাতে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছেন।
শুধু হত্যা করেছেন বললে ভুল হবে। হত্যা করার আগে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছেন। শেষে মেয়েটির লাশ গুম করেছেন ম্যানহোলের ভেতর। রফিক সাহেব তার স্বচ্ছ অবয়বের ভেতরে সব সময় পুষে রাখতেন এমন ঘৃণিত লালসা। সবাই যাকে একজন সৎ পুলিশ অফিসার ভেবে ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে। চায়ের কাপে, টঙ দোকানে মানুষের মুখে মুখে সবসময় যার নাম উচ্চারিত হয়। কেউ ঘূণাক্ষরেও জানে না সেই মানুষটির লোভ লালসার শিকার এমন কত কত নিরীহ মানুষ। তবে এ সমাজ ব্যবস্থা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কাছে জিম্মি ওরা সবাই। মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস হয় না। রফিক সাহেব বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে জোরে জোরে চিৎকার করেন। তবে মেয়েটির ভয়ঙ্কর অট্টহাসিতে, রফিক সাহেবের চিৎকারের আওয়াজ চার দেয়ালের বাইরে কেউ শুনতে পায় না। এক সময় মেয়েটি রফিক সাহেবের খুব কাছে চলে আসে। চিৎকার করে বলতে থাকে- তোমার ডিপার্টমেন্টের যে পুলিশের মার্ডার কেসের আসামি ধরতে তুমি ব্যস্ত। হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে ফিরছ সব জাগায় আমি সেই আসামি। আজ নিজেই এসেছি হাজিরা দিতে তোমার অফিস রুমে।
সেদিন ওই মুখোশ পরা পুলিশকে আমি মেরে ফেলেছি। কারণ আমার মতো শত শত নিরীহ বোনকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে। লাশ গুম করেছে। নয়তো আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিত।
আজ তোমার পালা, পালাবে কোথায়? এ কথা বলেই মেয়েটি রফিক সাহেবকে ঠিক একইভাবে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেললেন। ঠিক যেমন করে তিন মাস আগে তাকেও মেরে ফেলেছিল।
অনেক সময় পরে, রুমের দরজা ভেঙে রফিক সাহেবের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে। সবাই অবাক হয়ে গেল। বাইরে ডিউটিরত পুলিশ। সিসি ক্যামেরা, কেউ কোনো সঠিক কারণ খুঁজে দিতে পারল না। এমন কি রফিক সাহেবকে কোন সময়ে কে বা কারা এসে খুন করেছে তার কোনো প্রমাণও বের করতে পারল না। ঢাকা থেকে বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা এলেন। কিন্তু আজ অবধি কেউ রফিক সাহেবের মৃত্যুর রহস্যরজট খুলতে পারল না। আজ অনেক বছর পরে খবরের কাগজে বড় বড় অক্ষরে ছাপা হয়েছে। পুলিশ অফিসার রফিক সাহেবের বড় মেয়েকে কে বা কারা রুমে ঢুকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে। খবরের কাগজ পড়ে চায়ের কাপে আবারো আড্ডার ঝড় ওঠে। সবাই বলাবলি করে মেয়ের বাবা রফিক সাহেব তো খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার মেয়েকে এমন নিষ্ঠুরভাবে কে খুন করল। অথচ কেউ জানে না মুখোশের আড়ালে মানুষ কতটা ভয়ঙ্কর।

 


আরো সংবাদ



premium cement