যুবসমাজই পরিবর্তনের হাতিয়ার
- আবদুর রউফ
- ০৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০১
জীবনের সবচেয়ে স্বর্ণালি সময় যুব বয়স। মানবজীবনে যত অর্জন এর বেশির ভাগই অর্জিত হয় যুব বয়সে। নির্দিষ্ট কোনো আইনকানুন না মেনে জীবন উপভোগ করার প্রবণতা কাজ করে যুবক বয়সে। তাই ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় তখন। এই বয়সে যে যত সফল; তিনি শেষ সময় পর্যন্ত সফলতার পরিচয় দেন। যেকোনো সমাজ বিবর্তন যুবকদের হাত ধরেই এসেছে। প্রতিদিন পৃথিবীকে তারা নবরূপে সাজাতে প্রাণপণ চেষ্টায় রত।
বিশ্বায়নের এ যুগে যুবকরাই বেশি পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। এই যুবসমাজ ইতিবাচক পরিবর্তনের একমাত্র শক্তিশালী হাতিয়ার। বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটা জনগোষ্ঠী যুবসমাজের অন্তর্ভুক্ত। জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়-সম্পর্কিত জনসংখ্যা বিভাগের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা : ২০১৫ রিভিশন’-এর তথ্যমতে, বর্তমানের ১৬ কোটি জনসংখ্যার ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ২০ শতাংশ যুবগোষ্ঠী। আর বাংলাদেশ সরকারের মতে, ১৮-৩৫ বছরের জনগোষ্ঠী যুবক। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি যুবগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে।
এই বিশাল যুবসমাজ একটা দেশের জন্য তখনই আশীর্বাদ হয়ে ওঠে; যখন রাষ্ট্র তাদের যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে। তা ছাড়া এ বিশাল জনগোষ্ঠী বোঝাতেও পরিণত হয়। যেমনটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক কর্মহীন মানুষের দলে নাম লেখাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ, নারী ১২ লাখ ৩০ হাজার; যা মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন বছর আগে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এক দশক আগে ছিল ২০ লাখ। বিবিএস যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, প্রকৃত বেকার আরো বেশি বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে সনদ অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় শিক্ষিত বেকার যুবক বেড়েই চলছে। এর বেশির ভাগই হলো বেকার যুবক।
এ দিকে বিশ্বব্যাংকের মতে সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ওপর প্রতি বছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। সুতরাং নতুন কর্মসংস্থান তৈরির চাপ রয়েছে অর্থনীতির ওপর। বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম। আবার লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি ১০ জন শিক্ষিত তরুণের তিনজন বেকার। যারা শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন; তারা সবাই যুবক। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। কিন্তু কাজ পান মাত্র সাত লাখ। এই বিশালসংখ্যক বেকার যুবকদের কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়াই দেশের অগ্রগতির উন্নয়নে অংশ নিতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশের যে পরিমাণ উন্নয়ন হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। উন্নয়নের মূলধারার সাথে এ যুবগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত না করায় দেশ যেমন পিছিয়ে পড়ছে তেমনি তারা দেশের বোঝাতে পরিণত হচ্ছেন।
অথচ বিশাল যুবগোষ্ঠীর সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ত্বরায়ন করতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে বয়স-কাঠামোর পরিবর্তনে জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের যুবকদের নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন পারে দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে। যুব হাতিয়ারকে যেভাবে রাষ্ট্র ব্যবহার করবে সেভাবেই কাজ করবেন তারা। যুবসমাজের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সরকার আরো আন্তরিক হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। হ
ধৎড়ঁভরঁ@মসধরষ.পড়স
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা