২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যবসা হোক আলেমদের কর্মস্থল

-

ব্যবসা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে ভালো। কোনো মুসলমান যখন মিথ্যা, প্রতারণা ও খেয়ানতের আশ্রয় না নিয়ে পূর্ণ সততার সাথে ব্যবসা করেন, তখন তার ব্যবসা একটি ভালো কাজে পরিণত হয়। এমন ভালো পেশায় শামিল হয়ে উলামায়ে কেরামরাও নিজেদের জন্য হালাল উপার্জনের সুন্দর একটা পথ তৈরি করে নিতে পারেন। সাধারণত একজন আলেম ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করতে চাইলে সাধারণ মানুষ ক্ষেত্রবিশেষ কিছু আলেমও বিষয়টি আড় চোখে দেখে থাকেন। অনেকেই ধারণা করে নেন যে, তিনি ভালো আলেম নন বিধায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আবার যদি কোনো ইমাম বা খতিব ইমামতির পাশাপাশি ব্যবসা করেন; সামাজিকভাবে আপত্তি তোলা হয়, একজন ইমাম কিভাবে ব্যবসা করেন? এটি কী একজন ইমামের জন্য মানায়? এমন ইমামের পেছনে নামাজ পড়ব কিভাবে? তার পেছনে নামাজ পড়ে মজা পাই না। এমন পরিস্থিতির জন্য ধর্মীয় বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা যেমন দায়ী, তেমনি উলামায়ে কেরামের এককেন্দ্রিক মানসিকতাও কম দায়ী নয়। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা মনের অজান্তে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছি যে, একজন মাদরাসাছাত্রকে শুধু মাদরাসা নিয়েই পড়ে থাকতে হবে। মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে হবে। অন্য কোনো কর্মব্যস্ততায় লিপ্ত হওয়া তাদের জন্য বেমানান। তাই সাধারণ মানুষও এই ধ্যান-ধারণা হৃদয়ে বদ্ধমূল করে নিয়েছেন। তারাও ভাবেন আলেমদের কাজ হলো ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকা। যার ফলে শুনতে হয়, ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’। অথচ ইমাম আবু হানিফা রহ: একজন বিজ্ঞ আলেম ও মাজহাবের ইমাম সাথে সাথে একজন বড় ব্যবসায়ীও ছিলেন।
জানা যায়, দারুল উলুম দেওবন্দের বেশির ভাগ উস্তাদ মাদরাসার খেদমতের পাশাপাশি হালাল উপার্জনে আলাদা ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। মাদরাসা তাদের খেদমতের স্থান, কিন্তু মূল উপার্জনের মাধ্যম ও কর্মক্ষেত্র হলো ব্যবসায়িক কার্যক্রম। কিন্তু আমরা এটা থেকে দূরে, বহু দূরে। হীনম্মন্যতা, সামাজিক ভয়, লজ্জা ও এককেন্দ্রিকতা আমাদের এমন কঠিনভাবে গ্রাস করে নিয়েছে যে, আমরা এখন চাইলেও নিজেকে নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে নিতে পারি না। এর অনেক কারণের অন্যতম একটা, আমরা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ব্যবসাসংক্রান্ত আয়াতের সম্বোধনপাত্র হিসেবে নিজেকে পেশ করতে পারিনি। যখন এই আয়াত পাঠ করা হয়; তখন মনের অজান্তেই নিজেদের এই আয়াতের প্রথম সম্বোধনপাত্র ভাবতে পারি না। বাস্তব জীবনে নিজেই এর সবচেয়ে বড় হকদার, তা ভাবতে পারি না। কিন্তু আফসোস, সাধারণ মানুষ আলেমদের দেখে শেখা তো দূরের কথা, এর যোগ্যই মনে করেন না! এ সুযোগ আমরাই তাদের তৈরি করে দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ভাবা এখন সময়ের দাবি। পবিত্র কুরআনের ব্যবসাসংক্রান্ত আয়াত নিয়ে গবেষণা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আজ যদি আলেমরা বাস্তব জীবনে ব্যবসাকে উপেক্ষা না করে ব্যবসায়ী হতেন তা হলে ব্যবসা ক্ষেত্রে অনেক বেশি সততা ফিরে আসত। উলামায়ে কেরামরাও দ্বীনি খেদমত করতে গিয়ে কারো তোষামোদি করতে হতো না, কটুবাক্য শুনতে হতো না। আর্থিকভাবে কারো দ্বারস্থ হতে হতো না। প্রায় দেখা যায় ইমাম, খতিব ও মাদরাসার উস্তাদরা ক্ষেত্রবিশেষ জনসাধারণ এবং কমিটির অন্যায়, অমানবিক কথা শুনতে হয়। যদি ব্যবসার মাধ্যমে আয়ের ভিন্ন উৎস তৈরি করা যেত; তা হলে এ প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হতো না।
আমরা বেমালুম ভুলে গেছি, ব্যবসা ও দাওয়াতÑ এই দুই নিয়তেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন পূর্বকালের আলেমরা। আর ইসলামের মহান আদর্শ পৌঁছে দিয়েছিলেন মানুষের ঘরে ঘরে। কালের আবর্তনে ইমানদারদের পছন্দনীয় পেশা ব্যবসা কলুষিত হয়েছে অন্যদের হাতে। তাই ব্যবসার ময়দানে আলেমদের পদচারণা ব্যাপক পরিসরে বাড়াতে হবে। তা হলে মসজিদ, মাদরাসা ও দ্বীনের অন্য কাজগুলো খেদমত হিসেবে করা সহজ হবে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী


আরো সংবাদ



premium cement