২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি

-

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় পুরো পৃথিবী দিশেহারা। আমদানি-রফতানির ভারসাম্যহীনতার কারণে অর্থনীতিরও বেহাল দশা। সময়ের সাথে কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বারা সৃষ্ট আতঙ্ক, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা বহুলাংশে হ্রাস পেলেও মানুষের মধ্যে ভর করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আতঙ্ক। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, মাছ, গোশত, সবজি সবকিছুর দাম হু হু করে বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে গত কয়েক দিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় ছয়টি পণ্যের দাম বেড়েছে বলে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ব্রয়লার মুরগি। বিপরীতে মোটা চাল, আটা, জিরা, দারুচিনি, এলাচ, ধনে ও তেজপাতা এ সাতটি পণ্যের দাম কমেছে বলে জানিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের। পণ্যটির দাম এক লাফে ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বড় অঙ্কের দাম বেড়েছে দেশী পেঁয়াজেরও। ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
তরকারি রান্নার অপরিহার্য আরেক পণ্য রসুনের দামও নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে রসুনের দাম ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। এতে পণ্যটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের দাম ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা আমদানি করা আদার দাম ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হয়েছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের এরূপ গগনচুম্বী দামের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্তের মানুষ। এমনিতে করোনায় প্রভাবে মানুষের আয় কমে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য। অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রমেই বাড়ছে জীবনযাত্রা নির্বাহের ব্যয়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রুখতে না পারলে তা খেটে খাওয়া মানুষ ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে কাজ করবে। এ জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ বাজার মনিটরিং এবং অসাধু ব্যবসায়ী চক্রকে শনাক্ত করা এবং ভোক্তা অধিকার আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ। তা ছাড়াও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ নিশ্চিত করতে টিসিবির মাধ্যমে সুলভমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা যেতে পারে। ব্যবসায়ীদের অসাধুতা পরিহার করে সৎ, বৈধ পন্থা অনুসরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বোঝাতে হবে নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে শুধু মুনাফার লোভ কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সরকার, ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 


আরো সংবাদ



premium cement