০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

ওরাও আমাদের ভাইবোন

-

পথশিশু শব্দটি সেসব শিশুকে নির্দেশ করে, যাদের কাছে রাস্তা, বস্তি, পতিত জমি ইত্যাদি স্বাভাবিক বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। জীবন চলার পথে আমরা অনেক মানুষ দেখতে পাই। এখানে কেউ উচ্চবিত্ত, কেউ মধ্যবিত্ত, কেউবা নিম্নবিত্ত। এই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকেই পথশিশু ধারণার জন্ম। দেশের অলিতে-গলিতে বরং পথশিশু আছে, যাদের কারো বাবা নেই, কারো মা নেই কিংবা কারো পরিবারের কেউ অসুস্থ। এসব পথশিশু তখন নিজেরাই পরিবারের বোঝা বহন করে। দারিদ্র্যের কশাঘাত সহ্য করতে না পেরে কেউ ইটভাটা, কল-কারখানায় কাজ করে, কেউ গাড়ির হেলপারি করে, কেউ রাস্তা বা ফুটপাথ থেকে এটা সেটা কুড়ায়, কেউ ভিক্ষা করে। অনেকে ক্ষুধার তাড়নায় চুরিও করে। রাস্তাঘাটে, হাটবাজারে, স্কুল-কলেজের সামনে অনেক পথশিশুকে দেখা যায়। কিন্তু কখনো কি একজন পথশিশুর জীবনের গল্প শুনতে চেয়েছি? অদ্ভুতভাবে বেড়ে উঠে এই পথশিশুরা। অল্প বয়সেই জীবনকে বুঝে নিতে শেখে তারা। এরা সমাজের সুবিধা ভোগ করতে পারে না। সে জন্যই এদের আরেক নাম সুবিধাবঞ্চিত শিশু।
যে বয়সে আমরা পড়াশোনা করি, বন্ধুদের সাথে খেলায় মাতি, সে বয়সে এই পথশিশুরা বেঁচে থাকার উপকরণ খোঁজে। পড়ালেখা করে যে বিবেকবোধ আমরা তৈরি করতে পারি না, পথের ধুলোয় বেড়ে ওঠার মধ্যেও তারা নিজেদের বিবেকবোধ তৈরি করে নেয়। যে বয়সে আমরা ভাবতাম স্কুলে গিয়ে টিফিনে কী খাবো, কার পাশে বসব, কোনো হোমওয়ার্ক আছে কি না। আর এসব পথশিশু ভাবে রোজ সকালে কোন রাস্তায় ভিক্ষা করলে বেশি টাকা পাবে। ৫০ টাকা আমাদের এক দিন মোবাইল খরচ হয়। আর ওদের পরিবারের সবাই মিলে ওই টাকায় এক বেলা খাওয়া হয়ে যায়। জীবন একটা, স্রষ্টাও একজন অথচ কত পার্থক্য! যেখানে আমাদের উচিত তাদের দেখাশোনা করা, উল্টো আমরা অহঙ্কার করি। গরিবদের মানুষ ভাবি না। আবার কখনো তাদের গায়ে হাততেও দ্বিধা করি না। আমাদের ভাব ভঙ্গি এমন যে, আমাদের যে সামাজিক মর্যাদা বা গ্রহণযোগ্যতা তা নিজেদের অর্জন। অথচ তাদের জায়গায় নিজেকে ভাবলে কেমন বোধ হবে! ছিন্নমূল এসব মানুষের জীবন বৈচিত্র্যের সাথে তুলনা না দেয়া পর্যন্ত সত্যিই বুঝি না আমরা কতটা সুখে আছি, কতটা ভালো আছি। একজন পথশিশুর দিন যেভাবে কাটে, সে জায়গায় নিজেদের অনুধাবন করলে তবেই তাদের দুঃখকষ্ট বোঝা যাবে।
সকালে যখন অন্য শিশুরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলে ছোটে, তখন কক্সবাজারে ১২ বছর বয়সী ছোট্ট ছেলে ফরহাদ ছোটে অন্য গন্তব্যে। কাঁধে ব্যাগের বদলে থাকে প্লাস্টিক কুড়ানোর বস্তা। সারা দিন কাগজ আর প্লাস্টিক কুড়িয়ে দিন কাটে তার। সন্ধ্যায় সেই প্লাস্টিক বিক্রি করে নিজের মুখে আহার তোলে ফরহাদ। প্রকৃতির বুকে যখন অন্ধকার ভর করে, তখন ফরহাদের ঠিকানা হয় ফুটপাথ অথবা মার্কেটের নিচে। তার মা নেই, বাবা কোথায় মনেই করতে পারে না সে।
সাত বছর বয়সী সুমি যখন ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে গাড়ির দরজায় দরজায় গিয়ে ফুল বিক্রি করছিল যখন, হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ে এক কালো মার্সিটিজ গাড়ির দিকে। গাড়ির দরজায় গিয়ে টোকা দেয় আর বলে, স্যার দুটো ফুল কিনবেন? আমি সকাল থেকে কিছুই খাইনি। যদি এই দুটো ফুল বিক্রি করতে পারি তা হলে কিছু খেতে পারব । তখন হঠাৎ গাড়ির মধ্যে থেকে একটা হাত তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় আর বলে, ওই ছোটলোক, গাড়িতে টোকা দিস কেন? তখন সুমির মানসিক অবস্থা কেমন হয়েছিল তা কি আমরা কল্পনা করতে পারি?
এমন হাজারো পথশিশু আছে যারা অধিকার বঞ্চিত। শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একাধিক সংস্থা জানিয়েছে, পথশিশুদের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ আদমশুমারিতে ভাসমান মানুষ সম্পর্কে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, দেশে চার লাখের মতো পথশিশু রয়েছে, যার অর্ধেকই অবস্থান করছে মহানগরী ঢাকায়। অন্য দিকে জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ঢাকার হিসাব অবশ্য তাদের কাছে নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকাতেই ছয় লাখ পথশিশু রয়েছে। সারা দেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের ও বেশি।
‘আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ এই বাক্যটি শুধু আমরা নীতিকথা হিসেবেই বলে থাকি। কখনো কি আমরা তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু করতে পেরেছি? তারা যে আগামীর ভবিষ্যৎ সেটা চিন্তা করে কখনো কি আমরা তাদের ইচ্ছা, স্বপ্ন, অধিকারকে মূল্যায়ন করেছি? সুবিধাবঞ্চিত শিশুরও তো অধিকার রয়েছে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার। তাদেরও অনেক স্বপ্ন আছে। তারা প্রতিভা বিকশের সুযোগ পাচ্ছে না বলেই আজ অঙ্কুরেই ঝরে যাচ্ছে। এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাদেরই বয়সী আমাদেরও ভাইবোন, ছেলেমেয়ে আছে। অন্তত এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে হলেও তাদের প্রতি একটু ভালোবাসা ও স্নেহ দেখানো দরকার। মানবিক দিকগুলো চিন্তা করে তাদের মুখে দু-এক বেলা খাবার তুলে দেয়া জরুরি। আমরা সবাই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই, তাদের প্রতিভাগুলো বিকাশের চেষ্টা করি। তাদের সুন্দর একটি জীবন উপহার দেয়ার চেষ্টা করি; যাতে তারাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবেই তো মানবতার জয় হবে । হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
ই-মেইল : ধধমযধষরন.ফরংফঁ@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ গাজীপুরে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতায় শহীদ যারা’ স্মারকের মোড়ক উন্মোচন রাজনীতিতে ফের সক্রিয় সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজান সিনহা গণহত্যার বিচারের পর নির্বাচন দিতে হবে : রফিকুল ইসলাম খান হিজাব শুধু অধিকার নয়, এটি সভ্যতার উপাদানও বটে : জাবি ভিসি ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত বিজয়ের ব্যত্যয় জাতির জন্য আত্মহত্যার শামিল : অ্যাডভোকেট জুবায়ের প্রতি বছর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ ফেনী যুবদলের নেতৃত্বে নাসির-বরাত নীলফামারীতে অর্ধকোটি টাকার হিরোইন আটক পাটগ্রামে ৩ সন্তানের জননীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা রায়গঞ্জে আ’লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার দাবিতে শিবিরের বিক্ষোভ

সকল