করোনা-পরবর্তী ক্যাম্পাসের অপেক্ষায়

দীর্ঘ পাঁচ মাস কেটে গেছে। ক্যাম্পাসের সেই সুমধুর কোলাহল শুনতে পাই না, লাইব্রেরির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পড়াশোনার সেই জ্ঞানময় আওয়াজ কানে আসে না। বিশ্ববিদ্যালয় যাদের জন্য প্রাণবন্ত সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও জাতীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভিন্ন ব্যক্তি। একদিকে তারা যেমন জ্ঞান বিলিয়ে দেয়ার জন্য আকুল হয়ে আছেন, অন্যদিকে আমরাও জ্ঞান কুড়িয়ে নেয়ার অধীর আগ্রহে দিন পার করছি। কবে হবে তাদের সাথে আমাদের ফের মেলবন্ধন? ধোঁয়াশায় দিন কাটছে জ্ঞানপিপাসুদের।
ডিপার্টমেন্টের ক্লাস শেষে টুকিটাকিতে বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডাটা আর দেয়া হয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫৩ একর-ই যেন এখন শুধু স্মৃতিতে খেলা করে। প্যারিস রোডের দুই ধারে চোখধাঁধানো গগনশিরিস গাছের ছায়াঘেরা রাস্তায় আর কোনো ভাবের বিনিময় হয় না। ভাবহীন হয়ে একলা পড়ে রবে প্যারিস রোড কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল? তাও দীর্ঘ পাঁচ পাঁচটি মাস। এখন আর নতুন ভাবের আভাস পায় না, মান-অভিমানের কথাও শুনে না দুই ধারের সুউচ্চ গগনশিরিস গাছগুলো।
টিএসসিসিতে এখন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকে না ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী। গানের সুরে, আবৃত্তির কণ্ঠে, নাট্যের সংলাপে মুখর হতে দেখা যায় না টিএসসিসি প্রাঙ্গণ। কেউ যদি নিস্তব্ধ ক্যাম্পাসে হেঁটে যান, তার পুরনো স্মৃতি মস্তিষ্ককে তবলা বাজিয়ে স্মরণ করিয়ে দেবেই দেবে।
‘ক্লাস শেষ! চল চল আমরা হলে খেয়ে আসি’, কথাগুলো আর বলা হয় না। বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং রুম হয়তো বন্ধই পড়ে আছে। দুপুর হলে হলের ডাইনিং রুমে গিয়ে আর বলা হয়ে উঠে না, ‘মামা এখানে ভাত দেন, মামা এখানে ভর্তা দেন।’
আজো সেই টুকিটাকিতে চায়ের আড্ডার অপেক্ষায়। বন্ধুরা মিলে একসাথে বসে চায়ের কাপে ফুঁ দিতে দিতে একের পর এক বিষয়ে গল্প করার অপেক্ষায় আছি। সেই দিন আবার হয়ে উঠবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণবন্ত, উজ্জীবিত, জ্ঞান সমারোহে টইটম্বুর। সেই ক্যাম্পাসের অপেক্ষায় এখনো। করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশ দেখার অপেক্ষায় এখনো। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়