২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাড়িওয়ালাদের বোধোদয় হোক

-

করোনা সঙ্কটে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ঢাকায় শহরে বসবাস করা নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর বহু পরিবার শহরের পাঠ চুকিয়ে আবার গ্রামে পারি জমিয়েছে, যাদের আবার ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এসব মানুষের বেশির ভাগই গ্রামেই জীবিকা নির্বাহে কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা চাকরির ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। ভাড়াটিয়া পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, ৫০ হাজার ভাড়াটিয়া ঢাকা শহর ছেড়েছেন। চট্টগ্রামসহ অন্য শহরগুলো থেকেও গ্রামে চলে গেছেন হাজার হাজার ভাড়াটিয়া।
মহামারীর ফলে দেশব্যাপী লকডাউন এবং কর্মক্ষেত্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক কারণে লোকজন গ্রামের বাড়ি চলে গেলেও বাসা ছাড়ার পেছনে বাড়িওয়ালাদের কঠোরতা ও চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বেশ প্রভাব ফেলেছে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও তা মেনে না চলা, ভাড়াটিয়াদের গভীর রাতে বাসায় ফেরা নিষেধ করা, পরিবারের সদস্য বেশি হলে ভাড়া না দেয়া, বেশি পানি ও গ্যাস ব্যবহারে নিষেধ করা, বাসায় বেশি মেহমান আসা নিষেধ করা, বাসায় গান শোনা ও সন্তানদের খেলাধুলাও নিষেধ করা এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভাড়া বৃদ্ধিসহ একরকম কঠোর চাপে রাখা হয় ভাড়াটিয়াদের।
ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষের জীবন, করোনাকালে ভাড়াটিয়াদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে কিছু মানবিক বাড়িওয়ালার সন্ধান পাওয়ার বিপরীতে তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করাসহ এক মাসের ভাড়াও কম না নেয়া এবং কোনো ছাড় না দেয়া, এমন কঠোর মানসিকতার বাড়িওয়ালার পরিচয় পাওয়া গেছে গণমাধ্যমের কল্যাণে। বাসাভাড়া পরিশোধ করতে বহু ভাড়াটিয়া মূল্যবান সামগ্রী বিক্রি করেছেন। বাড়িওয়ালাদের এ ধরনের কঠোর ও অমানবিক আচরণে গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দু’বার ভাবতে হয়নি তাদের। দিন দিন মানুষ জীবিকার সন্ধানে পরিবার নিয়ে শহরমুখী হওয়ায় বাড়ি ভাড়া দিতে ভাড়াটিয়ার অভাব না থাকায় বাড়িভাড়া বাড়ানোসহ কঠোর থেকে কঠোরতর নিয়ম বেঁধে দিয়ে বাসা ভাড়া দেন বাড়িওয়ালারা। ভাড়াটিয়ারাও মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
তবে লকডাউনের সময়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ভাড়াটিয়ারা গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় বাড়িওয়ালারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। একই সময়ে একাধিক ফ্যাট ও কলোনিগুলোতে একাধিক রুম ফাঁকা হওয়ায় এক রকম সর্ষেফুল দেখেছেন অনেক ভাড়িওয়ালা। বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রামের সর্বত্র। ভাড়া কমিয়েও দিতেই পাচ্ছেন না ভাড়াটিয়া। বাড়িওয়ালাদের চিন্তার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে বহুবার। ভাড়া বৃদ্ধি এবং কঠোরতার মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করার বিপরীতে ভাড়াটিয়া খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন বাড়ির মালিকরা।
বহু বাড়ির মালিক আছেন যাদের কোনো পেশা নেই, তারা শুধু বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়েই সংসার চালান। এ ধরনের বাড়িওয়ালার চাকরি কিংবা ব্যবসায় নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ থাকলেও তা না করে বাড়ি ভাড়ার অর্থ দিয়ে জীবন চলে যাবে বিশ্বাস নিয়ে চলেন। মূলত তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ভাড়াটিয়াদের সাথে কঠোর আচরণ করেন, ভাড়া বৃদ্ধি করেন ছয় মাস কিংবা এক বছর পরপর। পেশাজীবী বাড়িওয়ালাদের মধ্যেও অনেকে অর্থের মোহে পড়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের ভাড়াটিয়াদের প্রতি মানবিক না হয়ে কঠোর আচরণ করেন।
করোনা সঙ্কটে মানুষ গ্রামমুখী হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। গ্রামে এখন মানুষ ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিয়োজিত হচ্ছেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নতি হওয়ায় গ্রামেও বাড়ছে কর্মক্ষেত্র। সেই সাথে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন গ্রামে বসেও অনলাইনভিত্তিক বহু কাজ করা সম্ভব হওয়ায় এরই মধ্যে গ্রামে চলে যাওয়া লোকজনসহ ভবিষ্যতেও অনেকে গ্রামে চলে যাবেন। গ্রামে বসবাস করলে বাড়িভাড়া দিতে হবে না বিধায় শহরের চেয়ে কম রোজগার করেও ভালোভাবে জীবন ধারণ করা সম্ভব।
শহরে স্থিত ভাড়া বাসাগুলোসহ নির্মাণাধীন ভবনগুলো মিলিয়ে পর্যাপ্ত ভাড়াটিয়া পাওয়া গেলেও আগের মতো রমরমা অবস্থা থাকছে না, সহজেই তা বলা যায়। এ অবস্থায় বাড়িওয়ালাদের কঠোর মনোভাব, যখন তখন ভাড়া বৃদ্ধি পরিহার করা, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে চলা, সর্বোপরি ভাড়াটিয়ার প্রতি মানবিক আচরণ করার কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে করোনাকালের মতো ভবিষ্যতেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে বাড়িওয়ালাদের। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম শিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিজেম


আরো সংবাদ



premium cement