০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

বর্ষার অপরূপ রূপবৈচিত্র্য

-

নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে, ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’। এভাবেই বর্ষার এমন চিত্র এঁকেছেন কবি সুনির্মল বসু। প্রকৃতির মায়াবী রূপের নিখুঁত ছবিই ধরা পড়েছে তার এই দুই পঙ্ক্তিতে। সজল মেঘমেদুর এর অপরূপ বর্ষার সাথে রয়েছে বাঙালি জাতির আজন্মকাল হৃদয়ের বন্ধন। বর্ষাকাল শস্য-শ্যামল আনন্দঘন নবান্ন উৎসবের নেপথ্য মঞ্চ। এই ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি পায় নতুন মাত্রা। গ্রীষ্মের খরতাপের পরই এ দেশের প্রকৃতিকে বর্ষা বারি বর্ষণে স্নান করিয়ে সিক্ত করে তোলে। জলরঙে রাঙিয়ে দেয় ধরণী। শ্যাম ঘন বর্ষা এক দিকে যেমন গ্রামবাংলার মানুষের কাছে আশীর্বাদ, অন্য দিকে দরিদ্র পল্লীবাসী অনাহারী ফুটপাথবাসীর কাছে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িছে। তবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ জীবনপ্রবাহের এক অপরিহার্য কল্যাণী ঋতু।
বর্ষার আগমনে গ্রীষ্মের বিবর্ণ প্রকৃতি হয়ে ওঠে কোমল আর সজীব। চার দিকে জেগে ওঠে প্রাণের স্পন্দন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’ কবির দৃষ্টিতে বর্ষা গভীর অর্থ ব্যঞ্জনাময় বিস্তৃত। বর্ষাকাল হলো আমাদের জীবনে অবকাশের ঋতু। শুধু অর্থনৈতিক জীবনেই নয়, সাংস্কৃতিক ভাবগত জীবনেও বর্ষা ঋতুর রয়েছে এক অনন্য ভূমিকা। বর্ষার সরস সজল স্পর্শ শুধু রুক্ষ ধূসর প্রান্তকে স্পন্দিত করে না; প্রেমিক মনকে উদ্বেলিত করে তোলে। প্রেমিকার ঠোঁটের ভাঁজে উর্বর ভাষায় উন্মাদনার চেতনা সঞ্চারিত হয় ক্ষণে ক্ষণে। বর্ষা উৎসব আনন্দে রচিত হয়েছে কাব্য, গান, উপন্যাস ও অজস্র প্রেমের কবিতা আলো-আঁধারের খেলা অনুষ্ঠিত হয় বিমোহিত করে প্রকৃতি রানীকে। নদীনালা, খাল-বিল পুকুর ডোবা কানায় কানায় ভরে ওঠে। বিলে বিলে হেলেঞ্চা, কলমিলতা, শাপলাদের সমাবেশে সেজে ওঠে প্রকৃতি কন্যা।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ । এ দেশের প্রকৃতিতে ১২ মাসে ছয়টি ঋতু রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। বর্ষাকাল ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ধাপ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে শুকনো ধরণীকে সিক্ত করে বাংলার বুকে বর্ষার শুভ আগমন ঘটে।
বর্ষার চিত্রপটটা এমনÑ বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদে এলো বান। কিংবা টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টির নৃত্যে মুখরিত হয় গ্রামবাংলা। প্রকৃতি যেন নিজের তৃষ্ণার্ত বুক ভরাতে বর্ষাকে আহ্বান করে। জেলেদের মাতানো উল্লাসে জাল ফেলে নদীতে। জাল ভরে ওঠে আসে রুপালি মাছ। জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, কলাগাছ কেটে ভেলা বানায় ছোট্ট শিশুরা। কলার ভেলায় চড়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে শৈশব। ডুব দিয়ে হার মানায় পানকৌড়িকে। বৃষ্টির মাধ্যমে বর্ষা প্রকৃতিকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলে। ফলে সতেজ হয়ে ওঠে গাছপালা। এ সময়ই বিচিত্র ফুল ও ফলের সমারোহে সেজে ওঠে প্রকৃতির প্রাণের ডালা। কদম, রজনীগন্ধা, কেয়া, জুঁই, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা গন্ধ প্রকৃতিকে বিমোহিত করে তোলে। আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলে সম্মোহিত হয় প্রকৃতি। বাংলাবর্ষ অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল।
বর্ষাকাল বাংলাদেশে বয়ে আনে অপার সম্ভাবনার বার্তা। কৃষিনির্ভর এই দেশের চাষাবাদ অনেকটাই বৃষ্টিনির্ভর। পরিমিত বৃষ্টিপাত এ দেশে প্রচুর ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অনাবৃষ্টি ও খরায় বাংলাদেশের কৃষি ভেঙে পড়ে। বর্ষাকালে এক দিকে অর্থকরী ফসল পাট কৃষকের ঘরে আসে, অন্য দিকে আউশ ধানের মৌসুম। এ সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যয়। বর্ষার সময় নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত খুব সহজ হয়। বর্ষা বাংলাদেশের আনন্দ-বেদনার এক ঋতু। এ দেশের মানুষের জীবন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে একাকার হয়ে মিশে আছে বর্ষা।
বর্ষার রূপবৈচিত্র্য তুলনাহীন। এ যেন সৃজনের এক প্রাচুর্য। বর্ষা বাংলাদেশের সমাজজীবনে ফেল বহুমাত্রিক প্রভাব।হ
লেখক : শিক্ষার্থী, নরসিংদী সরকারি কলেজ

 


আরো সংবাদ



premium cement
ক্রেন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে শেখ মুজিবের বাড়ি সড়ক দুর্ঘটনায় দাদি নিহত, আহত নাতি খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে : জামায়াত আমির ইজতেমায় হাজারো লোকের ফ্রি চিকিৎসা দিলো হাফেজ্জী চ্যারিটেবল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের ফ্যাসিবাদের সব চিহ্ন মুছে দিলো শিক্ষার্থীরা ভোটার নিবন্ধনে অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় যাচ্ছে ইসি পাবিপ্রবিতে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা হলের নামফলক ভেঙ্গে দিলেন শিক্ষার্থীরা রাবিতে মুজিব পরিবারের নামফলক ভেঙে ফেললেন শিক্ষার্থীরা সিলেটে শেখ মুজিবের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো খুলনার শেখ বাড়ি

সকল