আইনানুযায়ী ভোক্তা অধিকার
- মীর শুভ
- ২৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০
সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মহাবিপদের এ সময়েও দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করেছেন। বিশেষ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম হয়েছে আকাশছোঁয়া। এ ছাড়া বাজার ছেয়ে যায় নকল ও নিম্নমানের স্যানিটাইজার সামগ্রীতে। এমন প্রেক্ষাপটে ভোক্তা হিসেবে আমাদের করণীয় কি আমরা জানি? বাজার থেকে নকল পণ্য কেনার পরই বা আমাদের করণীয় কী? হয়তো আমরা অনেকেই ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। ফলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হতে হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ রয়েছে। একজন ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘিত হলে এ আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া বিধান আছে। জনসচেতনতা ও পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ সম্পূর্ণ কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। উন্নত দেশগুলো ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। ইউরোপ ও আমেরিকায় অনেক আগেই ভোক্তা অধিকার আইন বাস্তবায়িত হওয়ায় সেখানকার নাগরিকদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে এসেছে।
নব্বইয়ের দশকের আমেরিকার একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘১৯৯৪ সালে ঈসা লিসবেক নামে এক মার্কিন নারীর শরীরে ম্যাকডোনাল্ডসের ৫০ সেন্টের কফি পড়ে পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল ছয় লাখ ডলার। শুধু স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কফি দেয়ার জন্য এ জরিমানা গুনতে হয়েছিল’ (প্রথম আলো, ১৫ মার্চ ২০১৭)।
ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে আন্দোলন শুরু হয় গত শতকের পঞ্চাশের দশকে মার্কিন নাগরিক রালফ নাদেরের হাত ধরে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ পাস হয়েছে। প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে ভোক্তা কে? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ধারা ২(১৯) অনুযায়ী, ভোক্তা হলেÑ এমন কোনো ব্যক্তি যিনি, মূল্য পরিশোধ বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোনো পণ্য কিনেন। সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করে বা সম্পূর্ণ বাকিতে পণ্য অথবা সেবা ক্রয়কারী অথবা আংশিক মূল্য পরিশোধ করে বা আংশিক বাকিতে পণ্য অথবা সেবা ক্রয়কারী; কিস্তিতে পণ্য অথবা সেবা ক্রয়কারী; ক্রেতার সম্মতিতে ক্রীত পণ্য ব্যবহারকারী তিনি।
একজন ভোক্তা যে যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করতে পারেন তা হলোÑ কোনো আইন বা বিধি দ্বারা কোনো পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রি করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হবার তারিখ স্পষ্টভাবে লেখা না থাকলে। মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করলে। সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা হলে। ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে ওষুধ বা সেবা বিক্রয়। খাদ্য নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ। ভেজাল পণ্য বা ভেজাল ওষুধ বিক্রি, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ. মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করা? ওজনে কারচুপি, দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতাতে কারচুপি এবং পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয় যা সেবাগ্রহীতার জীবন বিপন্ন করতে পারেÑ এসব অপরাধের জন্য কোনো বিক্রেতা বা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ধারা ৩৭-৫৬ তে দণ্ড ও জরিমানা দেয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অভিযোগ করলে ভোক্তার কী লাভ? আমরা অনেকেই শুনেছি মামলা (অভিযোগ) করলে অর্থ খরচ হয়। কিন্তু মামলা করে অর্থ পাওয়া যায় এটি হয়তো অনেকেই জানেন না। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এমন একটি আইন যেখানে এ বিধান অনুযায়ী কোনো অভিযোগ করা হলে যদি কর্তৃপক্ষের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়; তা হলে যে পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হবে এর অর্থাৎ আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীকে দিতে হবে।
বাণিজ্যিক আইনের ভাষায় একটা কথা আছেÑ ‘ক্রেতা সাবধান নীতি’, অর্থাৎ একজন ক্রেতা বা ভোক্তা হিসেবে সাবধান করা। কোনো পণ্য না দেখে বা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ না করে ক্রয় করা যাবে না। সবশেষে বলতে হয়, মহামারী করোনাভাইরাসে স্থবির পুরো বিশ্ব। ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করুন। সেই সাথে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান, নিয়মিত বাজার তদারকি করুন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনুন; যাতে কেউ যেন ভোক্তার অধিকার হরণ করতে না পারে।হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা