বড় ভয় এ সমাজে বিচরণে!
- মোহাম্মদ আবু নোমান
- ২১ জুলাই ২০২০, ০০:০০
গাড়ি যেমন চালক ছাড়া চলতে পারে না, ঠিক তেমনি মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান কিংবা হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের দায় এড়াতে পারেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বুঝতে হবে, দেশের সব নাগরিক ‘নাবালগ’ নন। হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি (লাইসেন্স) নেই তাও জানেন না? মন্ত্রীরা এত ব্যস্ত থাকেন যে, ডিজি কিসের চুক্তি সই করার অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে যাচ্ছেন তা জানার সময়টুকুও নেই! এটি বলেই কী দায় এড়ানো যায়? এখন চেষ্টা করছেন ডিজির ওপর দায় চাপানোর। ডিজিসহ যারা তদারকি করেছেন, ফাইল বানিয়েছে তাদের এখনো সাসপেন্ড করা হয়েছে কী? প্রথম তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে ছবি ভাইরাল হওয়ায় বলেন ডিজির অনুরোধে...। দেশের একজন জনপ্রতিনিধি তথা আইনপ্রণেতা কারো অনুরোধেই ঢেঁকি গিলতে পারেন কি? স্বাস্থ্য অধিদফতর ওপরের নির্দেশে চুক্তি বলে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা তাদের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। মন্ত্রী কোনো বিষয়ে আগ্রহী হলে অধিদফতরের কিছুই করার থাকে না, এটি আমাদের প্রশাসনের বাস্তব চিত্র।
করোনার এ দুর্যোগকালীন সময়ে খুবই জরুরি সমম্বয় ও টিমওয়ার্ক। অথচ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সমন্বয়হীনতা ছাড়াও তারা যেভাবে একে অপরের মুখোমুখি হয়ে ‘ব্লেইম গেম’ খেলছে, তাতে টিমওয়ার্কের কবর রচিত হওয়ায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। এ কথা তো ঠিক যে, স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনো বড় কাজই মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া করতে পারে না, সম্ভবও নয়।
চুক্তির ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি এমন কোনো কাজ না। আর মন্ত্রীরা এসব চুক্তি পড়তেও যান না। অজস্র চুক্তি হয়। চুক্তি সই তো তারা (অধিদফতর) করেছে। তাদেরই সব কিছু জানার কথা।’ মন্ত্রীরা চুক্তি পড়েন না; মন্ত্রীরা অধস্তনদের দুর্নীতির খবর রাখেন না; করোনার বিষয়াদি আন্তর্জাতিকভাবে মনিটরিং হচ্ছে, অথচ চুক্তির সিদ্ধান্ত মন্ত্রীরা জানেন না; মন্ত্রীরা এটা করেন না, মন্ত্রীরা ওটা করেন না। তা হলে আসলে মন্ত্রীরা করেনটা কী? সব কাজই যদি সচিব থেকে শুরু করে নিচের দিকের কর্মকর্তারা করেন, সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তা হলে মন্ত্রীর দরকার কী? শুধু কি সচিবের তৈরি ফাইলে চোখ বন্ধ করে সই করা?
ঘটনার তদন্ত যদি শুধুই রিজেন্টের সাহেদ করিম, জেকেজির সাবরিনা-আরিফুলের মধ্যেই ঘুরপাক খায় তবে এ জাল-জালিয়াতির মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। তাই অন্তরালের রহস্য উদঘাটনেই মূল ফোকাসটা থাকা উচিত। সাহেদের জালিয়াতি ফাঁস হয়ে গেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়, তারা ওপরের নির্দেশে এ কাজ করেছেন। আমরা জানতে চাই, এই ওপরের নির্দেশদাতা কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এমন জনবিরোধী নির্দেশ দেয়া হয়েছিল?
করোনা ইস্যু আন্তর্জাতিকভাবে মনিটরিং হচ্ছে বিধায় পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সাবরিনা-সাহেদরা গোটা বিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে। রিজেন্ট বা জেকেজির মতো প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়া দুই শ’ বাংলাদেশীকে শুধু দেশেই ফেরত পাঠায়নি, সে দেশের সরকার ইতালির সাথে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে। এর আগে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনও অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দুর্বৃত্তকে সরকারের এত ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিলো কারা? নিশ্চয়ই সরকারি দলের ভেতরের কেউ। খুঁটির জোর না থাকলে এসব দুর্বৃত্ত এত দুঃসাহসী হতে পারে না, এতদূর আসতেও পারে না।
আমরা বুঝি না, কোনো মন্ত্রী যদি অনিয়ম করেন, তা হলে সরকার বা দল তার দায় নিচ্ছে কেন? অনিয়মের কারণে যদি মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়া হয়, এখানে সরকার বাহবা পাবে, অন্য মন্ত্রীরা অনিয়ম করতে ভয় পাবে। মাঝে মধ্যে এমন খবর দেখে অনুমান করতে বাকি থাকে না, খবরের আড়ালে আরো কত কী ঘটে চলেছে! পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সামনের দিনগুলোতে দেশের জনগণকে আরো কত কী দেখতে হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।
দুর্নীতি কমানোর কথা ও খবর শুনলে কর্মকর্তাদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তাদের মনোভাব অনেকটা এ রকম, কেনাকাটায় টাকা মারতে না দিলে ঘনিষ্ঠজনরা কামাই করবে কিভাবে? এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘(দুর্নীতির) ওপর গণমাধ্যমে বারবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচনা-সমালোচনার কারণে ক্রয় প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একধরনের ভীতির সঞ্চার করেছে। অনেকেই এ ধরনের পদে থাকতে চাইছেন না। আবার অনেকে ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকছেন কিংবা ক্রয় প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। এতে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন বিঘিœত ও সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।’ সরকারের কিছু কর্তাব্যক্তির ভাবটা এরকম, বালিশ কেনা হোক, পর্দা কেনা হোক, বাতি কেনা হোক, ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়া হোক, কোটি কোটি টাকা চুরি করুম দুদক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, সংবাদপত্রও কোনো খবর প্রকাশ করতে পারবে না!
ক্ষমতাসীন দলের ও প্রশাসনের ক্ষমতাবান, যারা এসব পাপিয়া, সাহেদ, সাবরিনাদের তৈরি করেছেন তাদের দমাতে না পারলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আটকাবস্থায় সাদা চুল কালো করা, গোফ কাটা, বোরখা পড়া, বর্ণচোরা, মুখোশধারী সাহেদকে আর একবার ‘টকশো’-তে অংশ নিতে দেয়া হোক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার আর কিছু বলার আছে কি না। দেশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাছেই কি বর্ণচোরা বহুরূপী সাহেদের কোনো তথ্য ছিল না?
এ কথা বলা হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে হাইব্রিড আর দুর্বৃত্তদের কারণে অনেকটা পথহারা হয়ে পড়ছে। তাই আমাদের প্রত্যাশাÑ দালাল, তদবিরবাজ, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ব্যাংক ডাকাত, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের অভয়াশ্রম যেন না হয় আওয়ামী লীগ। অবস্থা যে এমন হয়, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এটি বাস্তবায়ন করতে হয়। হ
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা