প্রসঙ্গ : হজযাত্রীর বিমানভাড়া
- নাজমুল আহসান
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
প্রতিটি মুসলিম-অমুসলিম সরকার আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভর্তুকি দিয়ে সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করে। একমাত্র বাংলাদেশ সহযোগিতার হাত সেভাবে সম্প্রসারিত করে না। সরকার বিমানভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে যেন অসহযোগিতায় নামে। প্রতি বছরই হজযাত্রীদের জিম্মি করে বসিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাড়তি ব্যবসা করে। এর সুবাদে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সও এই সুবিধা ভোগ করে। এই সুবিধা থার্ড ক্যারিয়ারে যাতায়াত আইন করে বন্ধ রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, সাধারণ যাত্রীদের ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা বিমানভাড়া ৪০-৪৫ হাজার টাকা, ওমরাহ যাত্রীদের ভাড়া ৪৫-৫০ হাজার টাকা; অথচ একই পথের যাত্রী আল্লাহর মেহমানদের ভাড়া ২০১৯ সালে নেয়া হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। একই শিডিউলে ফ্লাইটে পাশাপাশি বসে সাধারণ যাত্রীদের দিতে হবে শুধু ৪০-৪৫ হাজার টাকা। আর হজযাত্রীদের দিতে হবে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। কত বিচিত্র এ দেশের ব্যবসায়ের নীতিনৈতিকতা। বিমান সারা বছর পুকুরচুরি, আর সাগরচুরির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের ঘানি টানবে। আর ওই লোকসানের বোঝা কমাতে কিংবা সামান্য লাভের মুখ দেখতে হজযাত্রীদের জিম্মি করে তাদের বুকে চাকু ধরে তিনগুণ ভাড়া আদায় করবে। একই হারে ভাড়া আদায় করবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স। কারণ, থার্ড ক্যারিয়ারে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ।
বিমানের একটি খোঁড়া যুক্তি রয়েছে। হজ ফ্লাইট জেদ্দায় যাত্রী পৌঁছে দিয়ে খালি ফিরে আসতে হয়। আবার ঢাকা থেকে যাত্রীশূন্য জেদ্দা গিয়ে যাত্রী নিয়ে আসতে হয়। আমরা এই যুক্তি গ্রহণ করি। তাহলে বিমানভাড়া সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ধার্য করা যায়। তবে বিমান এটা বলে না যে, শিডিউল ফ্লাইটেও প্রচুর হজযাত্রী পরিবহন করা হয়। শিডিউল ফ্লাইট কখনো যাত্রীশূন্য ফিরে আসতে হয় না কিংবা যেতে হয় না। তাহলে শিডিউল ফ্লাইটের হজযাত্রীদের তো সর্বোচ্চ ভাড়া ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যায়, আর যদি গড় ভাড়া নির্ধারণ করা হয়, তবে সর্বোচ্চ ভাড়া ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিম্নোক্ত তিনটি কারণে হজযাত্রীদের ভাড়া হ্রাস করা যেতে পারে।
১. বেশির ভাগ হজযাত্রী নিজস্ব মালিকানায় উড়োজাহাজে পরিবহন করা যাবে। কারণ, বর্তমানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ১২টি উড়োজাহাজ বিমানের মালিকানায় রয়েছে। শিগগিরই আরো তিনটি আসছে।
২. ওই উড়োজাহাজগুলোর জ্বালানি ব্যয় ২০ শতাংশ কম।
৩. গত বছরের তুলনায় এ বছর জ্বালানি মূল্য প্রতি লিটারে ১১ টাকা হ্রাস পেয়েছে।
এ ছাড়া দু’টি পলিসি গ্রহণ করলে বিমানের লাভের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
১. প্রতিদিন ওমরাহ ও হজ মৌসুমে তথা হিজরি সাবান থেকে মহররম মাস পর্যন্ত ঢাকা-জেদ্দা ও ঢাকা-মদিনা দু’টি শিডিউল ফ্লাইট বাড়ানো যায়। কারণ, বর্তমানে ওই দু’টি রুটে বিমানের টিকিট সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। সামনে আসছে রমজান তথা ওমরাহর মৌসুম। ১৫ সাওয়াল পর্যন্ত ওমরাহ ভিসার মেয়াদ থাকে। এরপর শুরু হয় হজ মৌসুম। হজযাত্রীরা ফেরত আসতে মহররম মাস প্রায় শেষ হয়ে যায়। বিমানের অন্যান্য সেসব গন্তব্যে সিট খালি রেখে বিমান যাতায়াত করে থাকে, ওইসব গন্তব্যের ফ্লাইটের সংখ্যা হ্রাস করে জেদ্দা ও মদিনা রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধি করা যায়। তাহলে অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী শিডিউল ফ্লাইটে পরিবহন সম্ভব।
২. প্রতিটি উড়োজাহাজের সব সিট পূর্ণ করে হজযাত্রী বহন করা যায়। ইতঃপূর্বে তো শুধু সিট খালি নয়, পুরো ফ্লাইটই বাতিল করতে হয়েছে। অবশ্য ২০১৯ সালে কোনো ফ্লাইট বাতিল করতে হয়নি। তবে কিছু সিট খালি থাকে। যদি রমজানের আগেই হজ ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণা করা হয় আর ওই শিডিউল মতো ট্রাভেল এজেন্টরা বাড়ি ভাড়া করেন, তাহলে বিমানের সিট খালি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এ ছাড়া হাবের সদস্যরা রমজানের পরে বাড়িভাড়ার জন্য মক্কা-মদিনা গমন করেন, এমনকি হজ ফ্লাইট চালু হওয়ার পরও সবার বাড়িভাড়ার কাজ সমাপ্ত হয় না। তাই হাবের সদস্যদের রমজানের ভেতরেই বাড়িভাড়ার কাজ সমাপ্ত করতে বাধ্য করা উচিত। এভাবেও বিমানের লাভের পরিমাণ বাড়ানো যায়। এ ছাড়া প্রতি বছরই হজ টিকিটগুলো সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায়। তখন চড়ামূল্যে হাব সদস্যদের টিকিট ক্রয় করতে হয়। গত বছর অবশ্য বিমানের টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেট হয়নি। তবে সৌদিয়ার টিকিট নিয়ে হয়েছে। উভয় সংস্থা যদি হাব সদস্যদের রেজিস্ট্রেশনকৃত হজযাত্রীর অনুপাতে সরাসরি টিকিট প্রদান করে, তাহলে সিন্ডিকেট প্রথা বিলুপ্ত হবে। আসবে স্বচ্ছতা।
গত বছর হজযাত্রীদের জেদ্দার ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হয়েছে। এতে জেদ্দা বিমানবন্দরের ভোগান্তি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তাই আমরা হজযাত্রীরা ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় নিবেদন করব এ বছরের হজযাত্রীদের বিমানভাড়া সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা নির্ধারণ করার জন্য। এতে উপকৃত হবেন হজযাত্রীরা। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা