০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

নেতৃত্বের চর্চা

-

নেতার গুণই নেতৃত্ব। যৌথ কোনো কাজে সফলতা পেতে হলে নেতৃত্ব হতে হবে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল। নেতৃত্বের কারণে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়, অনেক ক্ষতি থেকেও নেতৃত্বের গুণেই টিকে থাকা যায়। সঠিক নেতৃত্বের প্রভাবে একটি পরিবার, প্রতিষ্ঠান, দেশÑ এমনকি বিশ্বও বদলে যেতে পারে। একজন যোগ্য নেতা ও তার নেতৃত্বের হাত ধরে একটি নতুন সমাজ বিনির্মাণ হতে পারে। তাই সৎ, যোগ্য, সাহসী এবং সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের জন্য নেতৃত্ব চর্চার বিকল্প নেই।
সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোনো জাতি, দেশ, কোনো সংগঠন চলতে পারে না। জাতির উত্থান-পতন অনেকাংশে নির্ভর করে নেতৃত্বের ওপর।
দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবারসহ সব স্থানে সঠিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। একটা পরিবারে যদি সঠিক নেতৃত্ব না থাকে; তাহলে ওই পরিবারে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সমাজেও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে হানাহানি, মারামারি, সহিংসতা দেখা দেয়। কোনো দেশই নেতৃত্বের অভাবে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। সুতরাং সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশে প্রায় সব ক্ষেত্রে অভাব রয়েছে যোগ্য ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দক্ষ নেতৃত্বের।
নেতৃত্ব ধারাবাহিক চর্চার বিষয়। ছাত্রজীবন থেকেই নেতৃত্বের চর্চা করা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন এবং লিডারশিপ ট্রেনিংগুলোতে যোগদানের মাধ্যমে আমরা নেতৃত্বের চর্চা করতে পারি। দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে চাইলে নেতৃত্ব চর্চার বিকল্প নেই। সফল নেতৃত্ব সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সহজেই বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত নেতৃত্বের বিকাশ সাধন ও চর্চায় মনোযোগ দেয়া উচিত।
নেতৃত্ব অর্জন করতে হলে বা নেতৃত্ব দিতে হলে নেতৃত্বের গুণগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। নেতৃত্বের গুণ সম্পর্কে সান জু বলেন, নেতৃত্ব হলো বুদ্ধিমত্তা, বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবিকতা, সাহস ও শৃঙ্খলাবোধের বিষয়। যার মধ্যে এসব গুণের সমন্বয় ঘটবে, তার মধ্যে সঠিক নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে। তা ছাড়াও দূরদৃষ্টি, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা, যোগাযোগ দক্ষতা, ধৈর্য ধারণ ক্ষমতা, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা, সময়নিষ্ঠ ও বিনয়ী হওয়া ইত্যাদি গুণ নেতৃত্বের জন্য জরুরি। একজন সফল নেতার দায়িত্ব হচ্ছে তার অনুসারীদের শুধু অনুপ্রাণিত ও পরিচালিত বা তাদের দিয়ে কাজ করানোই নয়; বরং অনুসারীদের মাঝ থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনের প্রতিভার অন্বেষণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া। কেউ জন্ম থেকে এসব গুণ নিয়ে জন্মায় না, সবই চেষ্টা এবং চর্চার ফসল।
লিঙ্কন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এন মেরি ই. ম্যাকসোয়েনের মতে, ‘নেতৃত্ব আসলে ক্ষমতা : নেতাদের শোনার ও পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা, সব স্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করায় উৎসাহ দানে নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা, জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ ও দূরদর্শিতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা।
সমাজ বিনির্মাণ ও পরিবর্তনের প্রথম শর্ত সঠিক নেতৃত্ব। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের গুণে এগিয়ে যেতে পারে সমাজ ও দেশ। তাই আমাদের সবার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু নেতৃত্বের চর্চা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে যেকোনো সঙ্কটে আমরা সফল হতে পারি। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য সব ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্ব এখন সময়ের দাবি। দেশের প্রশাসন আর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রয়াস চালাতে হবে, যাতে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসে। নেতৃত্বের চর্চা আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করবে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 


আরো সংবাদ



premium cement