০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

চিকিৎসাবিজ্ঞানে শব্দদূষণ

-

শব্দদূষণ নগরজীবনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন, ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বিকট শব্দ, সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তৃতা, নানা কিছিমের সভা-সমাবেশের তীব্র আওয়াজ, ব্যান্ড পার্টির গগনবিদারী চিৎকার এখন নগরজীবন বিষিয়ে তুলেছে। শব্দদূষণের এ অসহনীয় মাত্রার বিরূপ প্রভাব কী হতে পারে তা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে ব্যাখ্যা করলে এর ক্ষতিকর দিক অনুধাবন করা আমাদের জন্য সহজ হবে।
কানের সর্ববাইরে যে অংশটি তার নাম auricle এটি উৎপাদনকৃত শব্দপ্রবাহ সংগ্রহ করে কানের পর্দা পর্যন্ত পৌঁছায় external canal-এর মাধ্যমে। ওই শব্দপ্রবাহ মধ্যকর্ণে অবস্থিত ক্ষুদ্র অস্থি যার নাম stapes-এ পৌঁছায় অন্য দু’টি ক্ষুদ্র অস্থি malleus ও incus-এর মাধ্যমে যা শব্দপ্রবাহ অস্থিগুলোর বিভিন্ন অংশকে প্রকম্পিত করে। ওই শব্দপ্রবাহ perilymphatic fluid -কে কম্পমান করে তোলে। শব্দশক্তিকে মস্তিষ্কে পৌঁছানো একটি বিশাল ভূমিকা রাখে মধ্যকর্ণ। মধ্যকর্ণ শব্দকে বায়ুমণ্ডল থেকে অন্তঃকর্ণে নিয়ে আসে। শব্দ এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুমজ্জায় অবস্থিত অডিটরি সেন্টারে পৌঁছে। তখনই আমরা শুনতে পাই। পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েক মিলি সেকেন্ডে হয়ে থাকে। অন্তঃকর্ণে অবস্থিত cochlea নামে অংশটি শোনার মূল নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত। কোনো কারণে যেমনÑ ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, মামস, প্রলম্বিত ভাইরাল জ্বর অথবা অজানা কোনো কারণে cochlea বিনষ্ট হলে মানুষ আর শুনতে পায় না।
০-১০ ডেসিবল হচ্ছে সবচেয়ে ভালো শোনা, ১১-২৫ ডেসিবল স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা, ২৬-৪০ ডেসিবল অল্প শ্রবণশক্তি সম্পন্ন, ৪১-৫৫ ডেসিবল যারা moderate deafness-এ আক্রান্ত। ৫৬-৭০ ডেসিবল, যারা severe deafness এ আক্রান্ত, ৭১-৯০ যারা very severe deafness-এ আক্রান্ত, ৯১ থেকে এবং তার উপরে profound deafness-এ আক্রান্ত । শহর-বন্দরে উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ নগরবাসী পর্যায়ক্রমে উপরে উল্লিখিত ধারাবাহিক বধিরতায় ভোগেন। দীর্ঘ দিন ধরে গ্যারেজে কাজ করা শ্রমিক, জেনারেটর-সংক্রান্ত কার্যক্রমে নিযুক্ত শ্রমিক, কোনো মেশিনারি কাজে ব্যস্ত শ্রমিকের সাধারণত ওই বধিরতার ক্রমানুসারে শ্রবণশক্তি লোপ পেতে শুরু করে।
এখন হাইড্রোলিক হর্নের দৌরাত্ম্য কিংবা বিভিন্ন ব্যান্ড সঙ্গীতের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ নগরবাসীর শ্রবণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারেও কানের বধিরতায় ভুগতে পারেন কেউ। কারণ মোবাইল থেকে নিঃসৃত Electromagnetic wave ধিাব অন্তঃকর্ণের স্নায়ুমজ্জাকে আঘাত করতে পারে, ফলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমতে থাকেÑ একপর্যায়ে শোঁ শোঁ আওয়াজ, খিটখিটে মেজাজ উৎপন্ন হয়। অতএব কানে মোবাইলে কথা না বলে লাউড স্পিকার দিয়ে কথা বলাই শ্রেয়। সাম্প্রতিক সময়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ জনজমায়েত প্রতিরোধে অনেক সময় sonic device ব্যবহার করছে। এটি ব্যবহারে অন্তঃকর্ণে অবস্থিত স্নায়ুমজ্জাকে ধীরে ধীরে আঘাত করে শ্রবণশক্তি ক্ষয় পেতে শুরু করে। sonic deviceসাধারণত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয়। ওই ডিভাইসের নাম HS-16 Acoustic Hailing Device । শুধু বিক্ষোভকারী নয়, অনেক নির্দোষ পথচারীও এতে আক্রান্ত হতে পারেন যদি এটি জনবহুল রাজপথে অতিরিক্ত ভলিউমে ব্যবহার করা হয়। এই ডিভাইসের শব্দ এক কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করে এবং পথচারীদের কানে অনায়াসেই প্রবেশ করে। এসব ডিভাইস ব্যবহারের ফলে দাঙ্গা পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে হয় না। এটা মানুষের অন্তঃকর্ণে স্নায়ুমজ্জাকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিতে পারে। যেটার মেডিক্যাল চিকিৎসা আদৌ নেই বললেই চলে। ওই ডিভাইসে ১৪৮ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ অতিক্রম করে। এটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে কানের স্নায়ুরজ্জুকে চিরতরে নষ্ট করে দিতে পারে এবং পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্থায়ী বধির হিসেবে সমাজে পরিচিতি পায়। আমরা সাধারণত ৬০ ডেসিবলের মধ্যে কথাবার্তা বলি । যদি শব্দ ১৩০ ডেসিবল অতিক্রম করে তখন স্বাভাবিকভাবে ব্যথা অনুভূত হয়। ৮৫ ডেসিবলের ওপরে শব্দ অতিক্রম করলে শ্রবণশক্তি লোপ পায়। যেটি আমেরিকার National Institute for Occupational Safety and Health এর গবেষণায় জানা গেছে। দুই বছর আগে ঢাকার শাহবাগে আহূত বাম দলের আধা বেলা হরতালের সময় ওই ডিভাইস পুলিশকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
যত্রতত্র মাইক বাজানো, পণ্য বিক্রির জন্য হাই ভলিউমে গান বাজিয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ, রাজপথ দখল করে সমাবেশ এবং সারাক্ষণ মাইকে বিভিন্ন বক্তৃতা ভাষণ বাজানো প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি সচেতন নগরবাসীকে এগিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। হ
লেখক : কনসালট্যান্ট (ইএনটি)
Email:[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
মার্কিন জাহাজকে পানামা খালে টোল দিতে হবে না নবাবগঞ্জে তাফসিরে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান আজহারি শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাংবাদিক মনির হায়দার শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শুরু উত্থান দিয়ে ডেভিড বিসলির ও রবার্ট এ ডেস্ট্রোর সাথে বিএনপি প্রতিনিধির দলের সাক্ষাৎ শৈলকূপায় মহাসড়কে টায়ার ফেটে বাসে আগুন নিকারাগুয়ায় অভিবাসীবাহীদের নৌকাডুবিতে শিশুসহ মৃত্যু ৫ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে কতটা উদ্বিগ্ন ভারত শুধু কংক্রিটেই নয়, ফ্যাসিবাদের চিহ্ন আছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাঁকে : ফজল আনসারী

সকল