০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

দেশে সুদের বিস্তার

-

বাংলাদেশে সুদের কারবার আজকের নয়। কিন্তু বর্তমানে এর ব্যাপকতা যেকোনো সময়ের চেয়ে বহু গুণে বেড়েছে। এখনো আমাদের দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে যে প্রচলন রয়েছে, তার চিত্র ভয়াবহ। যেখানে ব্যাংক সুদের হার বেশি হলে ১০-১২ শতাংশ; সেখানে গ্রামে কিংবা শহরে অপ্রাতিষ্ঠানিক সুদী কারবারিরা সুদ নিচ্ছেন ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ এক হাজার টাকার ওপর সুদ বছরে ৫০০ টাকা বা এক হাজার টাকা। সুদ পরিশোধ না করতে পেরে বহু লোক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে আমাদের সমাজে। আমাদের দেশে এই কারবার প্রধানত মুসলিমরা করছেন। অথচ ধর্মীয় বিধান অনুসারে, মুসলমানদের জন্য সুদ হারাম। আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে সুদ হারাম করেছেন। অথচ সুদের কারবারে বাংলাদেশের সব এলাকায় মানুষ জড়িয়ে পড়ছেন। ইসলামে শরিকানা ব্যবসা জায়েজ, অর্থাৎ কয়েকজন মিলে টাকা একত্রে করে এমনকি কোম্পানি করে ব্যবসা করতে পারেন। লাভ-লোকসান ভাগাভাগি করে নিতে পারেন তারা। এ ব্যবসাকে ইসলামের পরিভাষায় মোশারাকা বলে। আরেক ধরনের ব্যবসা হচ্ছেÑ একজন অর্থ দেবেন; আরেকজন পরিশ্রম করবেন এবং লাভ ভাগাভাগি করে নেবেন। এ ব্যবসাকে মুদারাবা বলা হয়। আরেক ধরনের ব্যবসা হচ্ছে কেনাবেচা। মালামাল কিনে অন্যের কাছে লাভে বিক্রি করা। এ ব্যবসাকে বাই মোরাবাহা অথবা বাই মোয়াজ্জল বলা হয়। এ ছাড়া ইসলামী শরিয়াহতে ভাড়া দেয়া বৈধ। যেমনÑ একজন বাড়ি করে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেন। অন্যে ভাড়া নিতে পারেন।
সুদের ধরন হচ্ছে দুই রকমের। এক. অর্থ দিয়ে তার ওপর অতিরিক্ত অর্থ নেয়া। যেমনÑ কাউকে এক লাখ টাকা দিয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া (একে রিবা আদ-দায়িন বলে)। দ্বিতীয় রকম হচ্ছেÑ মালের ওপর অতিরিক্ত মাল নেয়া। যেমনÑ ১০ মণ ধান দিয়ে পরে ১৫ মণ নেয়া। এই দ্বিতীয় প্রকারকে রিবা আল ফদল বলে। বাংলাদেশে টাকার ওপর অতিরিক্ত টাকা নেয়ার সুদের হার অনেক বেশি। আরো এক ধরনের সুদ খুব ব্যাপক, গ্রামাঞ্চলে কৃষককে ১০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে প্রতি ফসলে পাঁচ মণ করে ধান নেয়া। এখানে কোনো বেঁচাকেনা হয় না বলে এটি সুদ।
উন্নত জীবনব্যবস্থা ও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার প্রধান অন্তরায় হলো সুদ ও সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। ইসলামে সুদ হারাম। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘যারা রিবা (সুদ) খায়, তারা দাঁড়াতে পারবে না, তবে দাঁড়াবে ওই ব্যক্তির মতো, যে শয়তানের থাবায় পাগলামিতে উন্মত্ত। তাদের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ, তারা বলেÑ ব্যবসাও তো রিবার মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল, আর রিবাকে করেছেন হারাম। যার কাছে তার প্রভুর (সুদ থেকে বিরত হওয়ার) উপদেশ পৌঁছেছে এবং সে (সুদ থেকে) বিরত হয়েছে, ওই ক্ষেত্রে সে অতীতে যা খেয়েছে, তা তো খেয়েছেই। তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আল্লাহর। কিন্তু যারা (সুদের) পুনরাবৃত্তি করবে, তারা হবে ‘আসহাবুন নার (আগুনের অধিবাসী), সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো অকৃতজ্ঞ পাপিষ্ঠকে’ (সূরা বাকারা : ২৭৫-২৭৬)।
আল্লাহ আরো বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং মানুষের কাছে তোমাদের যে সুদ পাওনা (বাকি) রয়ে গেছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা সত্যিকার মুমিন হয়ে থাকো। আর তোমরা যদি তা (পরিত্যাগ) না করো, তা হলে আল্লাহ এবং তার রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা গ্রহণ করো। আর যদি অনুতপ্ত হয়ে (সুদ) পরিত্যাগ করো, তবে আসলটা (মূলধন) ফেরত নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ। তোমরা জুলুম করো না এবং জুুলুমের শিকারও হয়ো না’ (সূরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)।
আমাদের বর্তমান অর্থব্যবস্থায়ও বিভিন্ন ধরনের সুদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। নিত্যনতুন নানা ধরনের ব্যবসা পদ্ধতির সাথে সুদের প্রবেশ ঘটছে। সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থায় মানুষের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি হয়। ব্রিটেনের অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরো পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছেন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। পক্ষান্তরে, ৯৯ শতাংশ লোকের জন্য থাকছে মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ। এটি সুদভিত্তিক অমানবিকতারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। সুদের অভিশাপে মানবজীবনে শান্তির বদৌলতে অশান্তি ডেকে আনে, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই; যে কারণে অনেকে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো অমানবিক পথে পা বাড়ান। আমাদের সবারই ভেবে দেখা প্রয়োজন, আল্লাহর পক্ষ থেকে সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ আমরা সুদ পরিত্যাগ করতে পারছি না। সুদের শেষ ফল কী; তা আমরা সবাই কমবেশি অবগত। এটা জেনেও জাগতিক লোভে পরকালের কঠিন আজাবকে তোয়াক্কা না করে সুদের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছি। বর্তমান সময়ে অভাব-অনটন, দুর্বল অর্থনীতির প্রধান কারণ হলো সুদী কারবার। সুদের কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্রে আর্থিক বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। পরকালীন মুক্তির জন্য সুদী লেনদেন পরিহার করে আরশের মালিকের বিধান নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে কুরআনের আলোকে জীবন রাঙিয়ে তোলাই হবে প্রত্যেক মুমিনের একমাত্র কাজ। এ ব্যাপারে যাদের কুরআনের গভীর জ্ঞান রয়েছে; তাদের সুদের কুফল সম্পর্কে সাধারণকে সচেতন করার গুরুদায়িত্ব রয়েছে; যাতে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমাদের সমাজে সুদমুক্ত হতে পারে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
মার্কিন জাহাজকে পানামা খালে টোল দিতে হবে না নবাবগঞ্জে তাফসিরে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান আজহারি শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাংবাদিক মনির হায়দার শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শুরু উত্থান দিয়ে ডেভিড বিসলির ও রবার্ট এ ডেস্ট্রোর সাথে বিএনপি প্রতিনিধির দলের সাক্ষাৎ শৈলকূপায় মহাসড়কে টায়ার ফেটে বাসে আগুন নিকারাগুয়ায় অভিবাসীবাহীদের নৌকাডুবিতে শিশুসহ মৃত্যু ৫ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে কতটা উদ্বিগ্ন ভারত শুধু কংক্রিটেই নয়, ফ্যাসিবাদের চিহ্ন আছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাঁকে : ফজল আনসারী

সকল