০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

কৃষকের নীরব কান্না

-

বিগত তিন মাস নজিরবিহীন দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দেশে। এমন দাম দেখে অনেক কৃষক উৎসাহী হয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন এবার। তবে যখন পেঁয়াজ উঠবে; তখন হয়তো দাম চলে আসবে কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকায়। তখন উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষক চোখ মুছবেন নীরবে-নিভৃতে। একসময় কৃষিপ্রধান দেশ ছিল বাংলাদেশ। একসময় দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর ছিলেন। বর্তমানেও গ্রামবাংলায় শুধু নিরক্ষররা নন, অনেক শিক্ষিত যুবক কৃষিতে আত্মনিয়োগ করছেন। এতে শুধু তার জীবনের পরিবর্তন নয়; সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে দেশের জাতীয় উৎপাদন। কৃষিতে আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যেখানে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের য্দ্ধুপরবর্তী সময়ে সাড়ে সাত লাখ মানুষের খাদ্য ঘাটতি ছিল; সেখানে আজ আবাদি জমি কমলেও প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে খাদ্য রফতানির সুযোগ হচ্ছে। কিভাবে আমরা এই আলাদিনের চেরাগ পেলাম? নিশ্চয় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কৃষিতে আত্মনিয়োগ ও সমসাময়িক বিশ্বকৃষির সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বাড়তে থাকায়ই এই পরিবর্তন।
তবে সত্য হলোÑ বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশের অসহায় কৃষককে নীরবে চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে। ব্যাংক কিংবা এনজিও ঋণ বা ধারদেনা করে কৃষিতে বিনিয়োগ করে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বারবার হতাশ হচ্ছেন দেশের কৃষকসমাজ। যার ফলে কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে উৎপাদিত বোরো ধান চাষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ধানের বীজ বিগত সময়ের তুলনায় কম বিক্রি হয়েছে।
সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ বা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে অনেক দেরিতে। দরিদ্র কৃষক এরই মধ্যে তাদের ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অন্য দিকে, গত ১০ মাসে তিন লাখ টনের বেশি চাল আমদানি করা হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে ধান-চালের বাজারে। প্রায় প্রতি বছরই উৎপাদন মৌসুমে একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। সরকার ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে সরাসরি ধান কিনতে পারে খুবই কম। সেই সুযোগ নেন চালকল মালিক, আড়তদার, ফড়িয়া তথা মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা নানা কৌশলে কৃষককে বাধ্য করেন কম দামে ধান বিক্রি করতে। অবস্থাপন্ন কৃষকরা এ সময় ধান বিক্রি না করেও থাকতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হয় দরিদ্র কৃষকের। ফলে সরকার বেশি দামে ধান-চাল কিনলেও দরিদ্র কৃষক তাতে লাভবান হন না। অনেকে মনে করেন, দরিদ্র কৃষকের বিক্রিযোগ্য ধানের অনুপাতে ব্যাংকগুলো যদি দু-তিন মাসের জন্য সামান্য সুদে বা বিনাসুদে ঋণ দেয়, তাহলে দরিদ্র কৃষক এত কম দামে ধান বিক্রি না করে কিছু দিন ধরে রাখতে পারতেন। স্থানীয় সমবায় সৃষ্টির মাধ্যমেও এমন কাজ করা যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
বাংলাদেশে শিল্প বিপ্লব হওয়া আগ পর্যন্ত আধুনিক বিশ্বের কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি কার্যক্রম চালিয়ে রাষ্ট্রকেই কৃষকের স্বার্থরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। এতে করে দেশের কৃষি এবং কৃষক লাভবান হতে পারেন। হ
[email protected]

 


আরো সংবাদ



premium cement