০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

মেধা পাচার বন্ধ হোক

-

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমান। তাদের বেশির ভাগই পড়াশোনা শেষে সেখানে চাকরিতে ঢুকে পরে সেখানকার স্থায়ী নাগরিক হয়ে যান। এতে দেশ প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী হারাচ্ছে। একজন মেধাবী দেশে যখন তার যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পান না তখন তিনি হতাশ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে নিরাপদ, সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য তিনি যদি বিদেশে থেকে যান, এ ক্ষেত্রে তাকে দোষ দেয়া যায় না। কাজেই বিদেশে মেধা পাচার রোধে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকে মেধাবীদের দেশে যথাযথ মূল্যায়নে এখনই সচেতন হতে হবে। এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের যথাযোগ্য মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে।
উচ্চ শিক্ষালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়ে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে ব্যয় সামঞ্জস্য করার ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একজন উচ্চ শিক্ষার্থী মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং, পিএইচডি ও অন্যান্য শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তহবিল ছাড়াও সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বড় একটা অংশ ব্যয় করতে হয়। এই শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষে দেশের কল্যাণে কাজ করবেন, এটিই দেশ চায়। অথচ বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করে তারা বিদেশে পাড়ি জামিয়ে ওই দেশের সেবা করছেন। আমাদের গরিব দেশের মানুষের করের টাকায় অর্জন করা মেধা চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। কিন্তু কেন চলে যাচ্ছেন মেধাবীরা? এ প্রশ্ন সবার।
আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ বিকশিত হওয়ার অপর্যাপ্ত সুযোগ- সুবিধার কারণে মেধাবী তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ উন্নত দেশে পাড়ি জমান। উন্নত দেশের গবেষণা, প্রযুক্তি আর স্থিতিশীলতা কাজে লাগিয়ে এসব মেধাবীই সেসব দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছেন আরো শক্তিশালী। অথচ সম্ভাবনাময় এই তুখোড় প্রজন্মকে হারিয়ে স্বদেশের উন্নয়নের যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সরকারি অথবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সবখানেই আছেন মেধাবীরা। তাদের জানার আগ্রহ অপরিসীম। এসব মেধাবী ছাত্রাবস্থায় অথবা কর্মজীবনের শুরুতেই তাদের এক বিশাল অংশ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় থাকেন। এক সময় চলেও যান।
মেধার বিকাশ ঘটাতে গুণগত শিক্ষা আর উন্নত গবেষণার দরকার আছে। তা ছাড়া প্রতিযোগী না থাকলে প্রতিযোগিতা জমে না। বিশ্বায়নের যুগে তাল মেলাতে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই। তবে তারা যদি দেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যান তাহলে সেটি হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। দেশের মাটিতে বড় হয়ে, এখানে উচ্চশিক্ষা নিয়ে, পরে শিক্ষকতাসহ প্রথম সারির বিভিন্ন পেশার কর্মক্ষেত্র ছেড়ে মেধাবীরা বিদেশে যাচ্ছেন। ভিনদেশের উন্নত গবেষণা ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরো যোগ্য করছেন। অনেকেই পারেন, কেউ বা নন। তবু যেন হাল ছাড়া নয়, থিতু হয়ে পড়ে থেকে সেসব দেশে স্থায়ী হয়ে যান। দেশ নিয়ে ভাবেন, কেউ দেশের জন্যও কাজ করেন।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষা ও গবেষণায় রাজনীতির ভিন্ন ভিন্ন রঙ নেই। জাতি তৈরির মহান পেশা শিক্ষক হতে হলুদ-বেগুনি, সাদা দল নয়, যোগ্যতা ও গবেষণার মানই মুখ্য। বিশ্ববিদ্যালয় আর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষকরা দিনরাত কাজ করেন আবিষ্কারের নেশায়। শিক্ষা ও গবেষণায় অর্জিত ফসল ছড়িয়ে দেন সবার কাছে। কৃষি, শিল্পকারখানায় সব জায়গায়। বিদেশের মাটিতে বিদেশীদের সাথে প্রতিযোগিতায় আমরাও পারি এবং সেটা দেশেও সম্ভব।
নিজ জায়গায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের খুব দরকার। রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য তুখোড় মেধাবীদের সুবিধা দিয়ে দেশের জন্য কাজে লাগাতে হবে।
সম্প্রতি দেখা যায়, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যার পর সারা দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর হৃদয়ে একটি ঝাঁকুনি দিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি, দলাদলি, যৌন হয়রানিসহ নানা কারণে মেধাবীরা নিরাপদ আশ্রয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এতে করে তারা শুধু বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন না; সাথে নিয়ে যাচ্ছেন অপার সম্ভাবনাময় মেধা।
১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র এসএসসি এবং এইচএসসিতে সারা দেশের সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জনকারী আরিফুল হক নিহত হওয়ার পর তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদত্যাগ করে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার সুপারিশ করেছিলেন, যা বর্তমান সময়ে ভাবাও যায় না। হ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
মার্কিন জাহাজকে পানামা খালে টোল দিতে হবে না নবাবগঞ্জে তাফসিরে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান আজহারি শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ নোয়াখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাংবাদিক মনির হায়দার শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শুরু উত্থান দিয়ে ডেভিড বিসলির ও রবার্ট এ ডেস্ট্রোর সাথে বিএনপি প্রতিনিধির দলের সাক্ষাৎ শৈলকূপায় মহাসড়কে টায়ার ফেটে বাসে আগুন নিকারাগুয়ায় অভিবাসীবাহীদের নৌকাডুবিতে শিশুসহ মৃত্যু ৫ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে কতটা উদ্বিগ্ন ভারত শুধু কংক্রিটেই নয়, ফ্যাসিবাদের চিহ্ন আছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বাঁকে : ফজল আনসারী

সকল