০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

সন্তান ও আমরা

-

শিশু-কিশোররা এখন খেলে না আগের মতো ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’, ‘গোল্লাছুট’ বা ‘দাঁড়িয়াবান্ধা’। তবে সাংসারিক কোনো ঝামেলায় নয়, ব্যস্ত মোবাইল নিয়ে। মত্ত সারাক্ষণ ঘরের কোণে, পুকুরপাড়ে, বাসার ছাদে কিংবা ক্লাসে! স্যার লেকচার দিচ্ছেন, ছাত্র চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত সময়ে কাটাচ্ছে। এমনকি লাশ নিয়ে সেলফি তোলা আর ভিডিও সেট করে আত্মহত্যার জন্য ফাঁস দেয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয় এখন! ফেসবুক-ইউটিউব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কিন্তু অনেক অ্যাক্টিভ ইউজারই হয়ে উঠছে অসামাজিক আর দুর্ধর্ষ। ঢাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় কিশোর অপরাধীর সৃষ্টি হয়েছে মর্মে পত্রিকা প্রতিবেদন ছেপেছে। বলা হচ্ছে, এরা নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেÑ গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি সবই। বরগুনার রিফাত হত্যা (২৬ জুন ২০১৯), মাগুরার লিসান হত্যা (৭ জুলাই ২০১৯), টঙ্গীর শুভ হত্যা আর ঢাকার সায়মা হত্যা (৫ জুলাই ২০১৯)। প্রতিটি ঘটনায় ঘাতকদের বয়স ১৪-২৫ বছরের মধ্যে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। অশনিসঙ্কেত। অশান্তির দাবানলে পুুড়ছে সমাজ! নৈতিক নৈরাজ্য চলছে দেশজুড়ে! নিরাপদ নই আমি, আপনি, কেউই।
এর কারণ কী? দায়ী কে? এটা কি প্রশাসনের ব্যর্থতা? অনৈতিকতার চর্চা, নাকি অপরাধপ্রবণতা? কিন্তু সন্তানের মূল্যবোধ শেখার প্রথম পাঠশালা হলো পরিবার। এখান থেকে মূল্যবোধের চর্চা শুরু করা না গেলে পরবর্তী জীবনে এসে শেখা খুবই কঠিন। চারপাশে একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টি রাখলে, এ কথার প্রমাণ মিলতে দেরি হবে না। দেশময় এ অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে উদাসীন বাবা-মায়েদের দায়িত্বহীন আচরণ অনেকটা দায়ীÑ বললে ভুল হবে না। কারণ সবার জানা। মানুষ যেমনই হোকÑ বিবেকহারা নয়। বিবেক সব সময় সত্যকে অকপটে স্বীকার করে; অসত্য-অন্যায়ের ধ্বংসস্তূপে সত্য-ন্যায়ের পতাকা ওড়াতে সাহায্য করে। তাই তো পাপী দিন শেষে পুণ্যময় জীবনের শপথ নেয়। তাওবা করে। ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পায়।
বাবা-মা হলেন সন্তানের আপনজন। কাছের মানুষ। নিখাদ হিতাকাক্সক্ষী। কিন্তু বর্তমানে কিছু মা-বাবার দায়িত্বহীনতা আর দায়সারা মনোভাবে স্বয়ং তারাই হয়ে যাচ্ছেন সন্তানের এক প্রকার শত্রু! কথাটা কঠিন হলেও বাস্তবতা রূঢ়। সন্তান গড়ার প্রথম দায়িত্বই বাবা-মায়ের। তাই তাদের উচিতÑ সন্তানকে উত্তম আদর্শ, উন্নত চেতনা আর সুস্থ মানসিকতায় গড়ে তোলা। কিন্তু বর্তমানে হচ্ছে ঠিক উল্টোটাইÑ আদরের আবরণে ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন করছেন স্বয়ং মা-বাবা! বিদেশে থাকা বাবা বেতন পেয়ে সন্তানের জন্য একটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পাঠিয়ে দেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরটি পাওয়া যায়, ‘সন্তান বায়না ধরেছে, তাই দিলাম’ কিংবা ‘উপার্জন তো তাদের জন্যই করি।’ যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘সন্তান সেটা কিভাবে ব্যবহার করছে, খোঁজ নিয়েছেন কি?’ এর উত্তর মেলা ভার। যে বাবা ছেলেকে মোবাইল কিনে দিতে পারেন, তিনি কি এর ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন না? এ জন্য নিয়ম বেঁধে দিতে পারেন না? বাবা হিসেবে তার দায়িত্ব নয় কি এটি করা?
মা মেয়ের টিফিন খরচের জন্য স্বামীর সাথে বাদি হয়ে লড়তে পারেন। তিনি কি মেয়েকে বলতে পারেন না, ‘ফোনালাপের অপর প্রান্তে কে ছিল?’ মা হিসেবে তার দায়িত্ব নয় কি এটি জিজ্ঞেস করা? ছেলেমেয়ে বখে যাওয়ার জন্য দায়ী কি শুধু সন্তান একাই? উদাসীন বাবা-মাও কি দায়ী নন? সুতরাং যদি বিচারক বাবা-মাকেও আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান, তাহলে কি ভুল হবে? আল্লাহ তা-ই করবেন। আল কুরআনে বলা হয়েছেÑ ‘কাফেররা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, যেসব জিন ও মানব আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদের উভয়কে দেখিয়ে দাও। আমরা উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা লাঞ্ছিত হয়।’ (হা-মীম আস্ সাজদাহ : ২৯)।
এখন বেশির ভাগ অভিভাবক নিছক সম্পদের একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে সন্তান লালনপালন করছেন। সন্তানের ঈমান-আকিদা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা নেই। অনেকে সন্তানের উচ্চশিক্ষার মূল্য বোঝেন; কিন্তু ধর্মশিক্ষার গুরুত্ব বোঝেন না। কোনো আদর্শের তালিম না দিয়ে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেন, তাদেরই কেউ সন্তানের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে ‘আজন্ম-পাপ’ জ্ঞান করেন; আবার কেউ করেন সন্তানের মৃত্যু কামনা! কী অদ্ভুত আচরণ। বিদঘুটে বাস্তবতা। অসহ্য যাতনা। তাদের বোধোদয় কবে হবে?
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো ‘সন্তান বিড়ম্বনা’। সন্তানের আচরণে অতিষ্ঠ অসংখ্য বাবা-মা। কেউ লাঞ্ছিত, অপমানিত আবার কেউ হচ্ছেন একেবারে নিহতÑ ‘ঐশী’দের হাতে! ভয়াবহ এই সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলছে না আমাদের সমাজের। অশান্তির এই দাবানল থেকে নিরাপদ নয় বেশির ভাগ পরিবার।
সন্তান কেবল জন্মগত সম্পদ নয়Ñ পবিত্র আমানত। আল্লাহ তায়ালার দান। শুধু জন্ম দেয়ার মাধ্যমেই মাতৃত্বের অধিকার আর পিতৃত্বের গৌরব অর্জিত হয় না; আরো বহু কিছু করতে হয়। আজকের সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুটি কাল আপনার জন্য বয়ে আনতে পারে সুসংবাদ কিংবা বিভীষিকা। এটিই সত্য। সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তই বলে দেবে, তাদের কাম্য কী? সহজেই বোঝা যাবে, বাবা-মা দায়মুক্ত না দায়বদ্ধ। তাই অভিভাবককেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নতুন করে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবেÑ আদরের সন্তানরা আর হবে না দেশ ও সমাজের কলঙ্ক। হবে না বিভীষিকা। বরং তারা ছিনিয়ে আনবে প্রভাতের সোনালি সূর্য; রাতের রুপালি চাঁদ। বয়ে আনবে বিমল বাতাস, মুক্তির পয়গাম। এ জন্য শুধু সদিচ্ছা প্রয়োজন। হ
লেখক : শিক্ষক, কওমি মাদরাসা


আরো সংবাদ



premium cement
সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা রুবাইয়াত ও আলমগীরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবারো উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর মহাদেবপুরে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন ভালুকায় খাল থেকে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার আশুলিয়ায় মেডলার অ্যাপারেলসের অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

সকল