০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

জিপিএ ৫ ভবিষ্যৎ নয়!

-

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যÑ ভালো মানুষ এবং দক্ষ জনবল তৈরি করা। একজন মানুষের জীবন এগিয়ে নিতে প্রয়োজন দক্ষতা, সেই সাথে প্রয়োজন মানবিক গুণাবলি অর্জন। কিন্তু এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেবল ভালো ফল বা জিপিএ ৫ কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায় ঝুঁকছেন। মানবিক গুণাবলি ও দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ছে। বর্তমানে শিক্ষাকে শিক্ষণ হিসেবে ধারণ করতে পারছি না আমরা। শিক্ষাকে একটি গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেকোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৫-কে মেধা মূল্যায়নের একমাত্র সূচক হিসেবে দেখার প্রবণতা বেড়েছে। তাই সন্তানের কাছে জিপিএ ৫ প্রত্যাশা অভিভাবকদের পেয়ে বসেছে।
পরিবার ও সমাজের এমন প্রত্যাশা মেটাতে না পারায়Ñ বঞ্চনা, গ্লানি পুরোটাই একতরফা বইতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে চার দিক থেকে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে; যা আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়ায়। কোনো কোনো অভিভাবক মনে করেন, জিপিএ ৫ অর্জন না করতে পারা মানে ওই শিক্ষার্থী মেধাবী নয় এবং তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা বেমালুম ভুলে যাই, জিপিএ ৫ অর্জন করাই বড় কথা নয়। কোনো শিশু যদি তার পাঠ্যসূচি নির্দেশিত যোগ্যতাগুলো ভালোভাবে অর্জন করে থাকে; তবে অবশ্যই সে মেধাবী। অভিভাবকদের এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে, ভালো ফল মানেই যে শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি জানে, এমন নয়। সাজেশন, মুখস্থ কিংবা গাইডনির্ভর পড়ার মাধ্যমে ভালো ফল করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে জানার পরিধি থাকে সীমিত।
শিক্ষার্থীরাও এমন উদ্ভট মন্ত্রে বুঁদ হয়ে আছে। যার ফলে তারা জিপিএ ৫ জীবনে উন্নতি করার অন্যতম মাধ্যম মনে করছে। এতে কাক্সিক্ষত জিপিএ ৫ না পেলে হতাশায় ভুগে, এমনকি অনেক সময় আত্মহত্যার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের দিকেও পা বাড়ায়। সম্প্রতি জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পাওয়ায় ও ফেল করায় বাউফল, কলমাকান্দা, বরিশাল, গোসাইরহাট ও রাজবাড়ীতে সারিয়া আক্তার, রুদ্র সরকার, মিম আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও ফাহাদ নামে পাঁচ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক দিনের ব্যবধানে অন্তত ১৯ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে শিক্ষা নিয়ে এমন চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চলিত এই ধারণা বদলে দিতে হবে। জিপিএ ৫-কে মেধা মূল্যায়ন হিসেবে না নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়াই বিবেচনাপ্রসূত বলে আমরা মনে করি। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে। শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে সচেতন হয়। শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করে, বন্ধুসুলভ আচরণ করে প্রকৃত শিক্ষার স্বরূপটা তাদের সামনে উপস্থাপন করা বড়ই প্রয়োজন। আমাদের মাথা থেকে জিপিএ ৫ ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলে দেয়া উচিত।
কবি বলেছেন, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন, হলে প্রয়োজন’। যখন আমরা শিক্ষাকে শিক্ষণ হিসেবে নিতে পারব, দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, জানার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, মানুষ গড়ার উন্নতম মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, তখনই কেবল প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারব। তাই সন্তানকে জিপিএ ফাইভের মাত্রাতিরিক্ত চাপ না দিয়ে, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার তাগিদ দিতে হবে। তা হলে আমাদের শিশুরা ভালো থাকবে, দেশ এগিয়ে যাবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 


আরো সংবাদ



premium cement