বিদায়ী বছরের দিনগুলো
- আবদুল্লাহ আল মেহেদী
- ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
খ্রিষ্টাব্দ ক্যালেন্ডার থেকে আরো একটি বছর গত হলো। মোটা দাগে বললে বলা যায় বিদায়ী বছরে আইনের শাসনের দিকটি ছিল উপেক্ষিত। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দাপটে পুলিশ প্রশাসনের অবস্থা ছিল ত্রাহী ত্রাহী। হত্যা আর গুম হওয়া মানুষের তালিকা বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে। বৈদেশিক ঋণে বাংলাদেশ বেশি আক্রান্ত হয়েছে বিগত বছরের তুলনায়। বিভিন্ন দেশের সাথে নানা চুক্তি হলেও এর সুফল নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। দেশে দৃশ্যমান কিছু উন্নয়নের গল্পগাথা বলেছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। তবে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিদায়ী বছরে তেমন সাফল্যের বার্তা দিতে না পারলেও সকারের ঝুলিতে আছে বিবিধ ব্যর্থতা। কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের সফলতা দৃষ্টিতে আনার মতো ছিল না। বাস্তবায়ন করতে পারেনি নির্বাচনী ইশতেহারের অনেক কিছু। রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আনাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসঙ্ঘে ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে এ ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি কাড়তে পারেনি সরকার।
বছরের শেষের দিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ছিল নজিরবিহীন। বন্ধুদেশ ভারতের কাছ থেকে পায়নি পেঁয়াজ বাংলাদেশ। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে সরকার ছিল অসহায়। গত বছরের আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল যুবলীগের কয়েক নেতার ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি। সরকারদলীয়রা দেশে জুয়ার আসর বসিয়েছিলেন এমন দৃশ্য ঢাকাসহ জেলা শহরেও দৃশ্যমান হয়। ঠিকাদারি ব্যবসা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা, এখনো এ ব্যবসার পুরোটাই তাদের দখলে। কয়েকজন কাউন্সিলর র্যাবের হাতে আটক হলে বেরিয়ে আসে তাদের চাঁদাবাজির কথা।
সেপ্টেম্বর মাসে সংবাদমাধ্যমে একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কোরির ঘটনা ফাঁস হয়। ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ দুই নেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চাঁদা দাবি করেন। এই ইস্যুতে পদচ্যুত হন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সরকার দুর্নীতিমুক্ত দাবি করলেও তা আর লুকোতে পারেনি। একের পর এক সব প্রকাশ হয়ে পড়ে। এ দিকে আর্থিক খাত নিয়ে সারসংক্ষেপ বললে বলতে হয়Ñ শেয়ারবাজারে ধস, একটি ঢেউটিন এক লাখ টাকা! রেলের ক্লিনারের বেতন চার লাখ টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি বিশুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণে ৪১ কর্মকর্তা উগান্ডায় গমন, পুকুর কাটা প্রশিক্ষণ নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউর পর্দা ও বই কেলেঙ্কারি এবং রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বালিশকাণ্ড ছিল সবার মুখে মুখে।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে গড়ে ওঠে ছাত্রবিক্ষোভ। ছাত্র লীগের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত আবরার ফাহাদের লাশের ছবি দেখেছেন বিশ্ববাসী। ফুটে উঠেছে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিষ্ঠুরতা। একে একে বেরিয়ে আসে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের চিত্র। কেমন করে অত্যাচার আর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করতে হয় সাধারণ ছাত্রদের, তা আর ঢেকে রাখা যায়নি। এর আগে বরগুনায় শত শত মানুষের সামনে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন রিফাত শরীফ। তার এই নির্মম নিহত হওয়ার ঘটনা সবাইকে নাড়া দেয়।
গত বছরে নারী নির্যাতন ভয়াবহ মাত্রায় সঙ্ঘটিত হয়েছে! বিগত বছরের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে বিদায়ী বছরে প্রথম ছয় মাসে। জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বাংলাদেশে যে সংখ্যক নারী ও কন্যাশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে; তা গেল পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। এ তথ্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের। বিশেষ করে ফেনীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার ঘটনায় সারা দেশের মানুষ কেঁদেছেন।
গত বছর ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে পথে বসেন কৃষক। ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এক কৃষকের পর বাসাইলের আরেক কৃষক পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানান। গত বছরের আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাংগঠনকি সম্পাদক প্রিয়া সাহাকে ঘিরে। বাংলাদেশ থেকে তিন কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ‘ডিসঅ্যাপিয়ার্ড’ বা অদৃশ্য তথা গুম হয়ে গেছেÑ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়ে এমন কথা বলে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি।
গত বছরের শেষের দিকে বিজয় দিবসের আগের দিন রাজাকারের তালিকা প্রকাশের ঘটনা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তালিকা প্রকাশ করে। সরকারের গেজেটভুক্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম আসে এ তালিকায়। সব মিলিয়ে বলা যায়, সদ্য বিদায়ী বছর ছিল সরকারের জন্য একটি বিব্রতকর বছর। যেখানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী।হ
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা