০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ক্রয়ক্ষমতা ফেরত চাই!

-

নিত্যপণ্য ও বাজারদর নিয়ে লিখতে চাইলে সাম্প্রতিক সময়ের বাজারের রাজা পেঁয়াজ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আছে কি? আগের মতো এক কেজি-দুই কেজি করে পেঁয়াজ কেনার সামর্থ্য আমাদের এখন কতজনের আছে? পেঁয়াজের কথা মনে হলে আমরা সাধারণরা স্মরণ করার চেষ্টা করি, এর আগে জীবনে কখনো পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি? মনে পড়ে না। বর্তমানে যে আর্থিক সক্ষমতা আছে, আগে কখনোই তা আমাদের অনেকের ছিল না। কিন্তু এর পরও আমাদের আধা কেজি পেঁয়াজ কিনতে হয়! আগের চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও অনেক কিছুই এখন আর কেনা যায় না।
এটি সত্য, দেশের সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি; কমেছে। দিন দিন তা নি¤œগামী। কেউ হয়তো বলতে পারেন, কেবল পেঁয়াজের প্রশ্নে ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত। কিন্তু পেঁয়াজ কেন, কোনো কিছুই আমাদের সাধারণের আর নাগালে নেই। মন চাইলেও আজ অনেক কিছুই আমাদের পাতে ওঠে না। কোন জিনিসটা নাগালের মধ্যে আছে? শীতকাল পড়ে গেছে, শীতের সবজি বাজারে সয়লাব। কিন্তু কেজি ৬০-৮০ টাকার কমে মেলে না কোনো সবজি।
নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য সর্বোচ্চ কাক্সিক্ষত গোশত কিনে খাওয়ার সাধ্য এখন ক’জনের আছে। গরুর গোশতের কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা, খাসির গোশত ৮০০ টাকা। দেশী মুরগি তো এখন বিত্তশালীদের গৌরবের আহার! সাধারণের সামর্থ্যানুযায়ী ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারলেই সোনায় সোহাগা; কম দামের তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ মাছ খাবেন, তারও উপায় নেই; বিষাক্ত ক্রোমিয়াম আর অ্যান্টিবায়োটিকে ভরা গরিবের এসব আহার।
বিদ্যুৎ আর গ্যাস যেন কর্তৃপক্ষের জাদুর কাঠি। যখন তখন ঘষে দিয়ে ভোক্তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাসা ভাড়া তো বাড়িওয়ালাদের ছেলেখেলাÑ প্রতি বছর হাজার-দুই হাজার করে বেড়ে চলে। সাথে আছে পানির বিল, ময়লার বিল, লিফট চার্জ, দারোয়ানের বেতন, সার্ভিস চার্জÑ কত কী! ভাড়াটিয়ারা কথা বলতে চাইলে ঝেঁটিয়ে বিদায় হতে হয়। এভাবে সবার পকেট ভারী করতে করতে নিজের পকেট ফাঁকাÑ মাসের ১৫ তারিখে পকেট শূন্য। শুরু হয় ক্যালেন্ডারে তারিখ গোনাÑ কখন বেতনের সেই কাক্সিক্ষত মাহেন্দ্রক্ষণ আসবে! অথচ মাসের শেষের দিনগুলো যেন আর ফুরায় না। কোনো উপায় নেই। এটি প্রতি মাসের চিত্র। কিন্তু প্রতি মাসে তো আর ভাই-বন্ধুদের কাছে হাত পাতা যায় না। তাই ভরসা সেই উচ্চ সুদের ক্রেডিট কার্ড। কিন্তু এখানেও করুণ চিত্রÑ প্রতি মাসে বেতন পেয়ে ক্রেডিট কার্ডের মিনিমাম বিল হিসেবে যে টাকা জমা করা হয়, পরের মাসে সে টাকাই আবার তুলতে হয়Ñ কোনো-না-কোনো জরুরি প্রয়োজন মিটানোর তাগিদে। কিন্তু এর পরও একটা অসহনীয় দুশ্চিন্তা বুকে দলা পাকাতে থাকেÑ হঠাৎ যদি নিজের বা পরিবারের কারো বড় কোনো অসুখ বা দুর্ঘটনা হয়, তাহলে অর্থের সংস্থান হবে কোত্থেকে? এমন দুর্ভাবনার চিত্রটি কারো একার নয়; এই মর্মপীড়া দেশের সব সাধারণ মানুষের।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন চালিয়ে নেয়া যায়? আমরা সাধারণরা অসৎ হতে পারব না। আবার চাইলেও আয় বাড়াতে পারি না। মন্ত্রীরা বলছেন, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে আড়াইগুণেরও বেশি। কিন্তু আমরা বারবার চেষ্টা করেও ওই আড়াইগুণের বেশি ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়াদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাই না। আর আয়ের ঝুড়ি যখন তলাবিহীন, তখন বছরে বেতনের ইনক্রিমেন্টের সুবাদে বাড়া এক-দুই হাজার টাকার বাড়তি আয়ে কী হয়! শায়েস্তা খাঁর আমলের এক টাকায় আট মণ চাল চাই না আমরা। কিন্তু আমরা আমাদের ক্রয়ক্ষমতা ফেরত চাই! আমাদের সামর্থ্যরে খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা চাই, ন্যূনতম জীবনমানের নিশ্চয়তা চাই; সেই সাথে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা ফেরত চাই! দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের অধিকার। হ
লেখক : ব্যাংকার
[email protected]

 


আরো সংবাদ



premium cement
বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর মহাদেবপুরে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন ভালুকায় খাল থেকে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার আশুলিয়ায় মেডলার অ্যাপারেলসের অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ভালুকায় আ’লীগের অপপ্রচার, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় নিয়ে মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ সিলেট বিমানবন্দরে ১৭ কেজি স্বর্ণসহ আটক ২ হাবিপ্রবিতে মুজিব পরিবারের ম্যুরাল ও নামফলক মুছে দিলো শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

সকল