০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

উদ্বেগজনক খবর

-

খুবই হতাশা ও উদ্বেগজনক খবর বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের খাদ্যঘাটতি পূরণ শীর্ষক প্রতিবেদনে। দেশের প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের, অর্থাৎ দুই কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। প্রায় চার কোটি মানুষ যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য পাচ্ছে না। এ ছাড়া দেশে নারীদের পুষ্টির পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। ১০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রতি তিনজনের একজন নারী প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পায় না। সুষম খাবার কেনার সামর্থ্য নেই দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে তৈরি করে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। গত ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে পুষ্টিসম্মত খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং মানুষের তা কেনার সামর্থ্য কতটুকু আছে, তা নিয়ে বিশদ তথ্য ও বিশ্লেষণ করা হয়।
আমরা জানি, অপুষ্টি মোকাবেলায় মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেয়াসহ নানা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলমান রেখেছে সরকার। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের অনেকেই অজ্ঞতার কারণে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাবার খায় না। কিনে খাওয়ার সামর্থ্য যাদের নেই, তারা পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য খেতে পারে না, এটি একটি বিষয়! কিন্তু যাদের সামর্থ্য আছে তাদের বেশির ভাগের পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে ধারণা কম। উচ্চবিত্তরা পুষ্টিকর, পছন্দের ও মুখরোচক খাবার বলতে বুঝে থাকে বার্গার, ফ্রাইড চিকেন, হটডগ, মিষ্টি ছাড়াও নানা ফাস্টফুডের খাবার। খাদ্যনিরাপত্তার সাথে পুষ্টি পরিস্থিতির যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা অনেকেই ভুলে যায়।
সামর্থ্য থাকলেও মানুষ সঠিক খাদ্য কিনে না খাওয়ায় পরিসংখ্যানে হিতে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। পুষ্টি বেড়ে যাওয়ার বদলে দেশে স্থূূলকায় মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০০৪ সালে দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৯ শতাংশ স্থূলকায় ছিল। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী তা বেড়ে ২৪ শতাংশে ছাড়িয়েছে। এতে উচ্চবিত্তদের অতি লোভ ও পুষ্টিজ্ঞানের অভাবে ৪০ শতাংশ খরচ বৃদ্ধির সাথে দেশে বছরে ৮ শতাংশ খাদ্য অপচয় হয় বলে বলা হয়েছে।
দেশে একদিকে খাদ্যের অপচয়, অন্য দিকে ক্ষুধায় হাহাকার। দেখা যাচ্ছে খাদ্য সঙ্কটের কারণ, সম্পদের স্বল্পতা নয় বরং অপচয়। ইতোমধ্যে নানা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। জীবনযাত্রার মানের সাথে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের জীবনমান ও খাদ্যাভ্যাসেই শুধু পরিবর্তন হয়নি, খুবই বাড়াবাড়ি রকম পরিবর্তন হয়েছে খাবার অপচয়েও। আমাদের দেশে নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের উছিলায়, সব ধরনের পার্টি সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ফাস্টফুট ও তারকা হোটেলগুলোতে যে পরিমাণ খাবার অপচয় হয়, তা দিয়ে বছরে ৬০ হাজার লোককে প্রতিদিন একবেলা করে খাওয়ানো যায়। উচ্চবিত্তরাই মূলত অপচয় বেশি করে।
অন্য দিকে আর্থিকভাবে সামর্থ্য না থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অতি প্রয়োজনীয় অণুপুষ্টিকণারও ঘাটতিতে রয়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার জোটাতে পারছে না। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পুষ্টির ওপর প্রভাব ফেলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষ খাদ্যপণ্যের দামের সাথে অসম সমঝোতা করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। দামের অস্থিরতা খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। পুষ্টি গবেষকেরা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র পরিবার মাছ, গোশত, ডিম, দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য তো কম খায়ই, সাধারণ খাদ্যও পরিমাণে কম খায়। উচ্চমূল্যে অপুষ্টিকর খাদ্য খেতে বাধ্য হয় তারা। ভাত খাওয়ার পরিমাণ না কমলেও ছোট মাছ, বড় মাছ, দুধ, ডিম, গোশত ও ডাল খাওয়া অনেকের কাছেই কল্পনা এখন।
ডব্লিউএফপির পরিসংখ্যানে এখনো বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ অতিদরিদ্র এবং তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। সুষম পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় যা রয়েছে ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, গোশত, দুধ, ডিম ও তেলজাতীয় খাদ্য যা অনেক মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œবিত্তের কেনার সামর্থ্য নেই।
বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ শুধু অর্থনৈতিক নয়; দেশের এক শ্রেণীর মানুষের অতি অপব্যয়, অন্য দিকে এক শ্রেণীর মানুষের দারিদ্র্য ও পুষ্টিকর খাদ্য নিয়ে জ্ঞানের অভাবও এর জন্য দায়ী। ৩০ দেশের পাঁচ লাখ শিশু ও টিনএজারের ওপর এক জরিপে দেখা যায়, যারা সপ্তাহে তিন দিন কোনো-না-কোনো ফাস্টফুড খায়, তাদের অ্যালার্জি ও হাঁপানির ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২৫-৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। কারো শিশু অপরিচ্ছন্ন অবিশুদ্ধ পানি খেতে চাইলে তা কোনো মা-বাবাই দেবে না। তার কারণে সে অসুস্থ হতে পারে। অথচ ফাস্টফুড খেতে চাইলে তা অবলীলায় দেয়া হয়।
সবাইকে স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে, জেনে-বুঝে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য বলা হয় ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। সবাইকে নিজ পরিবার, কমিউনিটি সেন্টার, রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন, ফাস্টফুডের দোকান, সুপার মার্কেটসহ যেখানে খাদ্য তৈরি, বিক্রি অথবা খাওয়া হয় সব জায়গায়ই খাদ্যাভাসে শৃঙ্খলাসহ মানবিক ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের অপুষ্টি দূর করতে হলে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুষ্টি বিষয়ে ডিগ্রি নিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। হ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
তিউনিসিয়ার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাহিরপুরে স্মারকলিপি প্রদান সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা রুবাইয়াত ও আলমগীরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবারো উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর মহাদেবপুরে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন ভালুকায় খাল থেকে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার

সকল