০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

মায়ের ভালোবাসা

-

পাঁচ বছর আগে হারিয়েছি মাকে। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারিণী মা ছিলেন একটি অনুপম আদর্শ। বহুগুণে গুণান্বিতা তার পুরো জিন্দেগি কেটেছে দুস্থদের সাহায্য করে। জীবনের কঠিন সময়গুলোও তাকে বিমুখ করতে পারেনি মানবিক কর্মকাণ্ড থেকে। আমরা আট ভাই-বোনের আবর্তন ছিল মাকে ঘিরে। মার সাথে অতীতের স্মৃতিচারণ হতো নিয়মিত। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বরে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন আমাদের মা। মায়ের ইন্তেকালের সময় মনে পড়েছে আল কুরআনের সূরা আল- আনয়ামের দ্বিতীয় আয়াতটি, তাতে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি (প্রত্যেকের জন্য বাঁচার একটি) মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, (তেমনি তাদের মৃত্যুর জন্যও) তাঁর কাছে একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, তারপরও তোমরা সন্দেহে লিপ্ত আছো’।
প্রত্যেক মা চায় তার সন্তানরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হবে, আলোকিত মানুষ হবে, সততা আর জবাবদিহির মূর্তপ্রতীক হবে। তেমনি আমার মাও চাইতেন তার সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত হোক, সৎ ও ভালো চরিত্রের মানুষ হোক। মার সেই স্বপ্নের ছায়াপথ ধীরে ধীরে দীর্ঘ হলো। সবাই নিজস্ব অবস্থানে দৃঢ় হলেন। ছোটবেলায় দেখতাম আমার বড় ভাই মরহুম আবু তাহের চৌধুরী চেয়ারে বসে আছেন; মেঝো ও সেঝো ভাই টেবিলে বসে বড় ভাইকে পড়া দিচ্ছেন। চেয়ার ছিল মাত্র একটা। অভাবের সংসার, মরহুম বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। পাশাপাশি কাপড়ের ব্যবসা করতেন ফকিরহাট বাজারে। কঠিন বাস্তবতা আর অদম্য আগ্রহে ভাইদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হয়নি। আজ মনে পড়ে, কী পরিশ্রম করে আমার মা সংসার সাজিয়ে ছিলেন।
ধর্মীয় ভাবাবেগে পরিপূর্ণ একটি পরিবারে আমার মায়ের অবস্থান। বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আমির আলীর দ্বিতীয়া মেয়ে ছিলেন তিনি। নিজের সন্তানদের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতেন। ব্যবসায়ের খাতিরে আমাদের বড় ভাই প্রায় সময় বাইরে থাকতেন। তার জন্য বিষণœ মনে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন মা তার ফেরার অপেক্ষায়। আমার মরহুম বাবা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মক্তব। এতে এলাকার অনেক ছেলেমেয়ে আসত পবিত্র কুরআনের ছবক নিতে। সেখানেও আব্বাকে উৎসাহ জোগাতেন আমাদের মা।
মায়া-মমতা আর ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে যে মা আমাদরে লালন করেছেন, সেই তিনি আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না। যাদের মা বর্তমান, তারা বুঝতে পারবেন না মায়ের শূন্যতা কী। পাঁচটি বছর ধরে শোকগাথা লিখছি মায়ের জন্য। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বড় ভাই আবু তাহের চৌধুরী চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মাতৃহারা হওয়ার পর ছায়ার মতন ছিলেন বড় ভাই। তিনিও চলে গেলেন কষ্টের পাহাড়ে ঠেলে দিয়ে আমাদের। দু’দুজন অতি প্রিয় মানুষকে হারিয়ে আমরা সাত ভাইবোন নির্বাক, অসহায়। একই ছাদের নিচে আর কোনোদিন পুনর্মিলন হবে না, বলা হবে না অব্যক্ত পঙ্ক্তিমালা। বাবাকে হারিয়েছি ১৯৯০ সালের ১৫ মার্চ। তখন মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আমি। যখন অপরিপক্ব আয়োজনে উচ্ছল সংসার। তবু বাবার অভাব তিলে তিলে লালন করেছি ২৯ বসন্ত। একদিন এমনিভাবে চলে যেতে হবে আমাদের সবাইকে, সূরা বাকারার ২৮১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্র অমোঘ বাণীটি আজ খুব বেশি মনে পড়ছে-‘সে দিনটিকে ভয় করো, যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেক মানব সন্তানকে (জীবনভর) কামাই করা পাপ পুণ্যের পুরোপুরি ফলাফল দিয়ে দেয়া হবে। তাদের (ওপর) (সে দিন) কোনো ধরনের জুলুম করা হবে না’।
আমরা ভীষণ স্বার্থপর-সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যক্রমে সগর্ব পদচারণা, অথচ প্রিয় মানুষের সাথে মনভরে কথা বলার সময়টুকুর অভাব। মাকে আর কোনোদিন ফিরে পাবো না, সূরা আততুর-এর ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যেসব মানুষ আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরাও এ ঈমানের ব্যাপারে তাদের অনুবর্তন করেছে, আমি (সেদিন জান্নাতে) তাদের সন্তান-সন্ততিদের তাদের (নিজ নিজ বাবা-মায়ের) সাথে মিলিয়ে দেবো। আর এ জন্যে আমি তাদের (বাবা-মার) পাওনার কিছুই হ্রাস করব না। (বস্তুত) প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ নিজ কর্মফলের হাতে বন্দী হয়ে আছে।’
বেলা-অবেলায় আম্মার অনিন্দ্যসুন্দর মুখ আমার মানসপটে ভাসমান। মার সবচেয়ে ছোট সন্তান আমি। তাই বায়নার কোনো হিসাব ছিল না। মা-বাবার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠলেই মনে পড়ে মহান আল্লাহর বাণী; সূরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘আর আমি মানুষকে তার বাবা-মার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে’। হ
লেখক: জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি)
জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি
Email:[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মায়ের মৃত্যু, ৩ মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তিউনিসিয়ার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাহিরপুরে স্মারকলিপি প্রদান সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা রুবাইয়াত ও আলমগীরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবারো উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর মহাদেবপুরে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

সকল