০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে

-

সময়ের ঘূর্ণাবর্তে অনেক কিছুর বিলুপ্তি ঘটেছে। আবির্ভূত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। কোনোটা যুগ সাদরে গ্রহণ করেছে, কোনোটা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের জীবনমান ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছে। জ্ঞানের অবারিত দ্বার সবার জন্য এখন উন্মুক্ত। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয়। বিশ^কে জানা, বোঝা কতই না সহজ হয়েছে। তবে এ কথা কবুল করতে কারো দ্বিধা করার কথা নয়, বর্তমান সময়টা যেন এক ধোঁয়াশা। চাইলেই নিজেকে গড়ে তোলা যায় সাবলীলভাবে। উল্টো দিকে নিজেকে অনায়াসে নিয়ে যাওয়া যায় ধ্বংসের পথে। এ জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থাটি হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে থাকতে হবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা।
এখন থেকে ২০ বছর আগে ফিরে তাকালে সব কেমন বিস্ময় জাগায়। সময়ের সাথে সাথে এখনকার মানুষও কৌশলী হয়ে উঠেছে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা হয়ে উঠেছে চটপটে। যে বয়সে আমাদের সময়ে আমরা এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছি, নদীতে সাঁতার কেটেছি, পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি। সেই বয়সে বর্তমান প্রজন্মের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের পিঠে চেপে আছে ভারী বইয়ের বোঝা। পাঠ্যবইয়ে মন না বসলেও টিকে থাকার তাগিদে সামনের সারিতে থাকতে হবে। এমন ভাবনা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে তাদের। শ্রেণিকক্ষে রোল নম্বরটি হতে হবে ওপরে। এতেই অভিভাবকরা সীমাহীন পরিতৃপ্ত। সন্তান কতটুকু জানল, তার চেয়ে কত নম্বর পেল এটিই অভিভাবকদের কাছে আকর্ষণীয়। ফলে এক ধরনের স্নায়বিক চাপে শিশুকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের বেড়ে ওঠা। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব খুব কম অভিভাবকই দিচ্ছেন।
একজন অভিভাবক চান তার সন্তান ডাক্তার হবে। কিন্তু সন্তানের চাওয়ার সাথে অভিভাবকের প্রত্যাশার কোনো মিল নেই, তখন বেকায়দায় পড়ে ওই শিক্ষর্থী। হয়তো শিশুটির আজীবনের লালিত স্বপ্ন সে একজন শিল্পী হবে; সেটি আর হয়ে ওঠে না। বাবা-মায়ের চাওয়ার প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিতে হয়। অথচ যদি সে তার কাক্সিক্ষত বিষয়টি মনেপ্রাণে ভালোবেসে দক্ষতার সাথে করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে নিজস্ব একটা ভুবন; তাহলে সেটাই বা একজন ডাক্তারের চেয়ে কম কী। অর্থ তো এ পথেও আসবেই, অন্য দিকে খ্যাতিও বয়ে নিয়ে আসবে। তারও একটা মূল্য আছে। সব সময় সেটি অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।
একটি জাতির সামগ্রিক উন্নতিতে সব ধরনের মানুষ অপরিহার্য। তবেই সেই জাতি বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সৃষ্টিশীল জাতি হিসেবে। সেই জাতির গবেষণা, কর্ম নতুন কিছু দেবে। বিশ্ব পাবে নতুন কিছু। তাই শিশুদের চাওয়াকেই আমাদের প্রাধান্য দেয়া দরকার। ধরা যাক, কেউ একজন কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে অনার্স করলেন, মাস্টার্স করলেন, কিন্তু চাকরি নিলেন এসে ব্যাংকে। যে পেশায় তিনি আত্মনিয়োগ করলেন তার সাথে কোনোভাবেই পূর্বপরিচিত নন। এ জন্য খাতওয়ারি কাজেরও একটা গুরুত্ব থাকা দরকার। বিশ^বিদ্যালয়পড়–য়া কৃষি বিষয়ে পারদর্শী ছেলেটি যদি তার উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে কৃষি তথা কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতেন, তাহলে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের জন্য পরনির্ভরশীল হতে হতো না। আমাদের প্রয়োজন এমন মানুষ, যাদের কর্মের মাধ্যমে জাতি উজ্জীবিত হবে। মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হবে প্রাণচাঞ্চল্য। যাদের চিন্তা-চেতনা, নীতিনৈতিকতা, কর্মনিষ্ঠা মানুষকে মুগ্ধ করবে। সেই জায়গায় আমরা বড়ই দুর্বল। তাই বলা যায়, আমরা এখন রীতিমতো ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে। এই ভাঙন আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, নাকি অমঙ্গল; সামনের দিনগুলোতে তা স্পষ্ট হতে থাকবে।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement
তিউনিসিয়ার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাহিরপুরে স্মারকলিপি প্রদান সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা রুবাইয়াত ও আলমগীরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবারো উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর মহাদেবপুরে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন ভালুকায় খাল থেকে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার

সকল