০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

চলনবিলের পাখিরা বাঁচতে চায়

-

‘বিল দেখতে চলন, গ্রাম দেখতে কলম।’ চলনবিলের নাম শুনলেই গা ছমছম করে ওঠে থইথই জলে উথালপাথাল ঢেউয়ের কথা ভেবে। চলনের এমন রূপ বর্ষার। ষড়ঋতুর এ দেশে প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্নরূপে দেখা যায় চলনবিলকে। বর্ষায় সাগরের মতো বিশাল জলরাশি বুকে নিয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে এ বিল। শরতে শান্ত জলরাশির ওপর ছোপ ছোপ সবুজ রঙের খেলা। হেমন্তে পাকা ধান আর সোঁদা মাটির গন্ধে ম ম করে চার দিক। শীতে হলুদ আর সবুজের নিধুয়া পাথার এবং গ্রীষ্মে চলনের রূপ রুক্ষ। তবে চলনবিলের মূল আকর্ষণ নৌকা ভ্রমণ।
‘চলনবিলের ইতিকথা’ বই থেকে জানা যায়, ১৮২৭ সালে জনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে চলনবিলের জলমগ্ন অংশের আয়তন ছিল ৫০০ বর্গমাইল। ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপের এক প্রতিবেদনে আয়তন দেখানো হয় ১৪২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল এলাকায় সারা বছর পানি থাকে। চলনবিলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন নামে এক হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল। প্রধান ৩৯টি বিলসহ ৫০টির বেশি বড় বড় বিলের সমন্বয়ে চলনবিল।
‘ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া’ বই থেকে জানা যায়, নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া; নওগাঁর রানীনগর, আত্রাই; সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া; পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, বেড়া এবং বগুড়ার শেরপুর মিলে বিশাল আয়তনের চলনবিল। এক সময় এর পুরোটাই ছিল বিস্তীর্ণ। ১৯১৪ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের পর উত্তর-পশ্চিম-দক্ষিণ তিন অংশে চলনবিল বিভক্ত হয়। বর্তমানে চলনবিলে নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া; পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন, আটটি পৌরসভা ও এক হাজার ৬০০টি গ্রাম রয়েছে। পুরো অঞ্চলের লোকসংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
প্রতি বছর শীতের শুরুতে অতিথি পাখির কলতানে মুখর হয় চলনবিল। অতিথি পাখির আগমনে চলনবিলের পরিবেশ হয় দৃষ্টিনন্দন। ভোর থেকে বিলে পাখির কোলাহল, কলরব, ডানা মেলে অবাধ বিচরণ, ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের ওড়াউড়ি সবার দৃষ্টি কাড়ে। পুরো চলনবিল এখন অতিথি পাখির কলতানে মুখর। দিনের আলোয় চলনবিলজুড়ে দলবদ্ধ অতিথি পাখির বিচরণ মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
চলনবিলে ঝাঁকে ঝাঁকে চখাচখি, পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, ইটালী, শর্লি, পেঁয়াজখেকো, ত্রিশূল, বাটুইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাদাখোঁচা, ফেফি, ডাহুক, গোয়াল, শামুকখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ নানা প্রজাতির পাখি আসতে শুরু করেছে। এ সুযোগে শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক ও ফাঁদ পেতে দেশী ও অতিথি পাখি শিকার করছেন। এতে এক দিকে যেমন জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে ফসলি জমিতে। পেশাদার শিকারিরা পাখি বিক্রি করছেন বাজারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উপজেলা সদর থেকে দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাখি কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে এই এলাকায় শিকারিদের আনাগোনাও বেশি। এসব এলাকায় প্রশাসনের লোকজন তেমন আসেন না। বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই কোনো মতে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। প্রতি জোড়া পাখি প্রজাতিভেদে ১৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বেশি লাভের আসায় অনেকেই দৈনন্দিন কাজ বাদ দিয়ে পাখি শিকার করছেন।
সব কিছুরই একটা সৌন্দর্য রয়েছে। তেমনি চলনবিলের সৌন্দর্য জীববৈচিত্র্য। এ জীববৈচিত্র্য ছাড়া চলনবিলের সৌন্দর্য ম্লান। প্রতি বছর শীতের শুরুতে পাখি নিধনের মধ্য দিয়ে চলনবিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। চলনবিলের পাখিরা বাঁচতে চায়। আসুন, আমরা সবাই জনসচেতনতা বাড়িয়ে পাখি নিধন বন্ধ করি। চলনবিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি।
লেখক : সংবাদকর্মী


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ মির্জাপুরে ছিনতাই হওয়া ট্রাকসহ ১২ হাজার লিটার সয়াবিন উদ্ধার নবীনগরে তিতাস নদীতে ট্রলার ডুবিতে নিহত ১ বগুড়ায় ইজিবাইকচাপায় ভাই-বোন হতাহত একুশে পদকের জন্য মনোনীত ১৪ ব্যক্তি ও নারী ফুটবল দল চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানি করছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বিপদে অস্ট্রেলিয়া সিংগাইর থানার ফেসবুক আইডিতে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেয়ার, দুঃখ প্রকাশ এলজিইডি ক্রিম-ক্রিলিকের কেএফডব্লিউ রিভিউ মিশন সম্পন্ন সিলেটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের পাশে জামায়াত

সকল