০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ওজনে কারচুপি রোধে করণীয়

-

বাজার-সদাই করার সময় ওজনে কারচুপি ও প্রতারণার শিকার হননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা জড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতারণায়। ওজনে কম দেয়া ও মানুষ ঠকানো অসাধু ব্যবসায়ীদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। মূলত ভোক্তাদের সামান্য অসতর্কতায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই অপকর্ম করতে পারছেন। মাঝে মধ্যে তাদের প্রতারণা ক্রেতাদের কাছে ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ী সমিতি ও প্রতারকদের সঙ্ঘবদ্ধ চক্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে অনেক সময় পার পেয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের সচেতনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
একসময় দাঁড়িপাল্লায় ওজনে নয়-ছয় করা হতো। সময় পাল্টেছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এখন বাজারে সাধারণ দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার নেই। ইলেকট্র্রনিকস-ডিজিটাল স্কেলে চলে ওজনের কাজ-কারবার। আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছি এ জন্য যে, এতে ওজনে ক্রেতা কিভাবে প্রতারিত হচ্ছেন তা বুঝতে সহজ হবে। ডিজিটাল স্কেলে প্রতারণার কথা শুনেছি; কিন্তু কখনো নিজ চোখে দেখিনি। সম্প্রতি এক সকালে মুরগি কিনতে গিয়ে সেদিন বিষয়টি নজরে এলো। মুরগির দোকানে গিয়ে বিক্রেতাকে বললাম, দুই কেজি ওজনের মুরগি দিতে। ডিজিটাল স্কেলে দেখলাম দুই কেজি ২৫৫ গ্রাম হলো, দাম এলো ২৭৬ টাকা। সন্দেহ হওয়ায় মুরগি হাতে নিয়ে দেখলাম, ওজন কম মনে হলেও বুঝতে পারছিলাম না। কারচুপিও ধরতে পারলাম না। তবে বিক্রেতা নিশ্চিত ওজনে কম দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রমহিলা এক কেজি ওজনের দু’টি মুরগি দিতে বললেন। নিজের সন্দেহ দূর না হওয়ায় স্কেলের দিকেই তাকিয়ে আছি। খেয়াল করলাম, দোকানি মুরগি স্কেলের ঝুড়িতে ডানহাতে মুরগি রাখছেন এবং একই সাথে বাম হাতে সাদা পলিথিন মোড়ানো একটি কাগজসদৃশ কোনো বস্তু ঝুড়ির পাশে রাখছে (যা ভালোভাবে না দেখলে বোঝা যাবে না)। ওজন শেষে মুরগি স্কেল থেকে নেয়ার সময় ঝুড়িটি হালকা বাঁকা করার সাথে সাথে পলিথিন মোড়ানো কাগজসদৃশ্য বস্তুটি স্কেলের পাশে পড়ে গেছে। সন্দেহ হলে সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বললাম, ওজনে কারচুপি করছেন মনে হয়। দোকানদার অস্বীকার করলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা হওয়ায় দোকানের ভেতরে গিয়ে স্কেলের উপর থেকে ঝুড়িটি সরিয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। স্কেলের পাশে সাদা পলিথিনে মোড়ানো কাগজসদৃশ্য বস্তুটি হচ্ছে অধুনা বিলুপ্ত দাঁড়িপাল্লার ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম আর এক কেজি ওজনের সিল। দোকানিকে বললাম, আপনার ডিজিটাল স্কেলের সাথে এ পুরনো সিলগুলোর কাজ কী? তিনি সদুত্তর দিতে পারলেন না। সিল ডিজিটাল স্কেল দিয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণার কথা বলায় তাদের সঙ্ঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় হয়ে গেল। কয়েকজন এগিয়ে এসে দোকানদারকে চড়থাপ্পড় মেরে দোকান থেকে বের করে নিয়ে গেলেন।
ভেবে দেখুন, তারা যেভাবে ওজন করছে একজন সাধারণ ক্রেতা বস্তুগুলো দোকানের বাইরে থেকে দেখলে মনে করবেন কাগজসদৃশ্য কিছু। কিন্তু বুঝতে পারবেন না যে, কতটুকু তিনি ঠকেছেন বা প্রতারিত হয়েছেন। এরপর আমার কেনা মুরগি আবারো ওজনের জন্য চ্যালেঞ্জ করলাম। এবার হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল ওজন কারচুপি। ২৭৬ টাকার মুরগির দাম এসেছে মাত্র ১৯৬ টাকা। অর্থাৎ দুই কেজি মুরগি কিনতে গিয়ে ৮০ টাকা ঠকানো হচ্ছে। একজন ক্রেতার ওপর কতবড় জুলুম!
সচেতনতার কারণে হয়তো কাউকে কাউকে ঠকানো সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিদিন কতশত মানুষ তাদের ফাঁদে পড়ছেন। এসব বিষয়ের প্রতিকার প্রয়োজন। আমরা এক ধরনের ধোঁকাবাজ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। একদিকে ফরমালিনমিশ্রিত বিষাক্ত খাবার, অন্যদিকে ওজনে ধোঁকা দেয়া। এ ছাড়াও অতি মুনাফার আশায় মজুদদারির মাধ্যমে পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বেশি মূল্য হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি দাম বাড়াতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে তা পচিয়ে ফেলেছেন, তবুও বিক্রি করেননি। অথচ, পণ্য মজুদ করে মানুষকে কষ্ট দেয়া কোনো নৈতিকতার ধোপে টেকে না। এভাবেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন, প্রতারণা করছেন।
ওজন কারচুপি বন্ধে আমাদের কিছু বিষয়ে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সেগুলো হলোÑ
প্রথমত, সর্বসাধারণকে ওজন কারচুপি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ক্রেতারা সচেতন হলে বিক্রেতারা ধোঁকা দিতে পারবে না। একসময় বাজারে সিটি করপোরেশনে স্কেল থাকত, মানুষ প্রয়োজনে সেখানে ওজন করে নিশ্চিত হতে পারত। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের সেসব স্কেল দেখা যায় না। মানুষের সুবিধার জন্য এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে প্রচার-প্রসার ও অনুসরণ। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়ে ইসলামে কী নির্দেশনা তা জানানো। ব্যবসায় ও ওজন সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়ছে, ‘তিনি (আল্লাহ) আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না করো দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম করো এবং ওজনে কম দিও না’ (সূরা আর রাহমান, আয়াত ৭-৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দিও না’ (সূরা আনআম, আয়াত-১৫২)।
তৃতীয়ত, প্রচলিত আইনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। যেসব বিক্রেতা ধর্মীয় বিধান ও দেশের আইন অনুযায়ী নীতি-নৈতিকতার সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য না করে অসদুপায়ে ক্রেতাকে ধোঁকা দেন; ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হ
লেখক : সদস্য সচিব, অর্কিড সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা


আরো সংবাদ



premium cement
আগা খানের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক গফরগাঁওয়ে মদপানে ৩ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনার কার্যক্রম নিয়ে দিল্লিকে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী জাহাজ ও ৯ বাংলাদেশী ক্রু আটক গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে যা বললেন কামাল আহমেদ গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মায়ের মৃত্যু, ৩ মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তিউনিসিয়ার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাহিরপুরে স্মারকলিপি প্রদান সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা

সকল